নিজস্ব পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার আহবান প্রধানমন্ত্রীর

69
19

ডেস্ক রিপোর্ট

নিজস্ব পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নদীর নাব্যতা বাড়ানোর জন্য যেমন ড্রেজিং করতে হবে, তেমনি বর্ষার পানি ধরে রাখারও বন্দোবস্তো রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ (মঙ্গলবার) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পানি দিবস-২০১৮ উপলক্ষে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কারো ওপর নির্ভরশীল নয়, নিজেদের ব্যবস্থাটা নিজেকেই করতে হবে। বর্ষাকালে যে বিশাল জলরাশি আসে সেটা আমরা কিভাবে ধরে রাখতে পারি, সে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, এখনো আমাদের দেশে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় নদী ড্রেজিংয়ে নয়, বরং নদীর পাড় বাধাই এবং রাস্তা নির্মাণ বা সেখানকার লোকজনের জন্য পুনর্বাসন সংক্রান্ত প্রকল্পে। যেটি মূলত তাদের কাজ নয়। তিনি বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাজ নদী ড্রেজিং এবং পলি ব্যবস্থাপনা। রাস্তা সরকারের অন্য মন্ত্রণালয় করে দেবে এবং সেভাবেই প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনা প্রণয়ণ এবং প্রকল্প গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা প্রদান করেন।

গঙ্গার পানি চুক্তির পরই তাঁর সরকার নদী খননের দিকে সব থেকে বেশি দৃষ্টি দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরপর কয়েকটি ড্রেজার কিনে জাতির পিতা এই ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করেছিলেন। এরপর পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা কখনও নদীগুলো খননের কোনো উদ্যাগই নেয়নি।

আন্তর্জাতিক নদীর পানি বন্টন নিয়ে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সমস্যা থাকার প্রসঙ্গ স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৭শ’ নদী এবং ভারতের সঙ্গে অভিন্ন ৫৪টি নদী রয়েছে, এই নদীগুলো হিমালয় থেকে এসেছে ভারত হয়ে। এই নদীগুলো নিয়ে আমাদের ভারতের সঙ্গে আলোচনা চলছে। যেটার মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করা। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ভারতের কাছ থেকে এই গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে এবং ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক পানি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যদিও ভারতের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে পানির হিস্যা নিয়ে এখনো ঝামেলা চলছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সবসময় মনে করি, ড্রেজিং করে নব্যতা বাড়িয়ে বর্ষাকালে যে পানিটা হিমালয় থেকে নেমে আসে সেটা যতটা বেশি আমরা সংরক্ষণ করতে পারবো ততবেশি আমাদের দেশের জন্য উপকার হবে।

এ-বছরের বিশ্ব পানি দিবসের জাতিসংঘ ঘোষিত প্রতিপাদ্য ‘নেচার ফর ওয়াটার’ বা ‘পানির জন্য প্রকৃতি’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পানি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ, পানি ছাড়া জীব জগতের কোন অস্তিত্বই টিকবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদেরকে বন্যার সঙ্গে বসবাস করাটা শিখতে হবে। বন্যার ক্ষতিটা যেন না হয় সেদিকে যেমন দৃষ্টি দেওয়া তেমনি বন্যার সুফলটা যেন আমরা ভোগ করতে পারি সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। শুধু উঁচু উঁচু বাঁধ করে দিলেই কিন্তু আমাদের নদী টিকেবে না। ঐ নদী আরো ভরাট হয়ে যাবে। আর নদী যেমন তার গতি হারায় তেমনি কিন্তু আবার প্রতিশোধও নেয়, তখন ঐ নদী অন্যদিক থেকে ভাঙ্গন শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর বর্ষাকালে নদীর যে গতি থাকে। পানির যে জোরটা থাকে সেটা বন্যা কবলিত এলাকার বাসিন্দা বা যারা নিজ চোখে না দেখেছেন তারা বুঝবেন না।