কবিতা- অভিজিৎ কর্মকার
যে কথাগুলো আমি বলি,
সেই কথাগুলো আমার নয়
রাতের আকাশ আমাকে কথা বলায়
আকাশের নীল নক্ষত্র
প্রবাহিত নদীর ঢেউ আর
নারীর সৌন্দর্য দেখে আমার স্বরতন্ত্র
থেকে বের হয়ে আসে ধ্বনি।
যে কথাগুলো আমি বলি,
সেই কথাগুলো আমার নয়
আমার প্রিয়তমা আমাকে কথা বলায়
ভোরের পাখি, সুনীল আকাশ,
সমুদ্রের নীল, বৃষ্টির ফোঁটা,
সবুজ ঘাসের উপর মুক্তোর মতো
ভোরের শিশির, রৌদ্র করোজ্জ্বল দিন
আকাশের গায়ে মেঘের খেলা দেখে
আমি কথা বলে উঠি।
যখন আমার প্রিয়তমা
আমার দিকে চোখ তুলে চায়,
আমার ভেতর নিরন্তর
জমতে থাকে রাশি রাশি কথামালা।
যে কথাগুলো আমি বলি,
সেই কথাগুলো আমার নয়
নির্জন মধ্যরাতে মলিন
বাঁশির সুর আমাকে কথা বলায়
মেঠোপথ, পালতোলা ময়াবী নৌকা,
সোনারঙ ধানক্ষেত, কৃষকের মুখের
হাসি, বাংলার কৃষাণ বধুর নাকফুল,
নত মুখ, অমল বালিকার মেহেদী রাঙা
কোমল হাত, অন্ধকার রাতে জোনাকির
আলো, টিনের চালে অবিরাম বৃষ্টির শব্দ,
আর বাংলা মায়ের চোখ ধাঁধানো অপরূপ
সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে মনের আনন্দে
আমার কন্ঠ থেকে বের হয় স্বপ্নের ধ্বনি।
আজন্ম নিন্মকন্ঠ আমার, তবু মাঝে মাঝে
পোড় খাওয়া মানুষ আমার স্বরতন্ত্রী ছিঁড়ে,
টেনে বের করে নিয়ে আসে কথার পাহাড়।
উচ্চকন্ঠে মিছিলে স্লোগানে আমি যে প্রতিবাদ,
প্রতিরোধ, সংগ্রামের কথা বলি, পৃথিবীর
পোড় খাওয়া মানুষ আমাকে সে কথা বলায়।
যে কথাগুলো আমি বলি
সেই কথাগুলো আমার নয়।
প্রতিনিয়ত আমার স্বর থেকে বেরিয়ে
আসা আমার মুখের ভাষা, তা সবই…
নদী, নক্ষত্র, সুনীল আকাশ, আদিগন্ত
নীল সমুদ্র, অবারিত ফসলের মাঠ,
পোড় খাওয়া মানুষ আর প্রিয়তম নারী
ও নদীর না বলা কথামালা।