স্টাফ রিপোর্টার
বিদ্যালয়ের নাম ‘মরিচপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৫৪ জন। বিদ্যালয়টি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত হলেও ফলাফলে ভালো। ২০১৭ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে ১৬ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করে। এর মধ্যে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে ছয়জন এবং সাধারণ গ্রেডে দু’জন। ৬৫জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে শতভাগই পাস করে। তবে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বর্তমানে একটিমাত্র ক্লাসরুম রয়েছে। প্রায় সাত বছর আগে বিদ্যালয়ের দু’টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করায় ক্লাসরুমে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র একটিতে! এই ক্লাসরুমে প্রথমে শিশু শ্রেণির; পরবর্তীতে পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান দেয়া হয়। অন্য শ্রেণির পাঠদান হচ্ছে টিনের ছাপড়ায়। এতে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়ার আওয়াজে ঠিকমত পাঠদান কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষককেরা। এ বছর আগাম বর্ষা হওয়ায় মওসুমের আগেই বৃষ্টি বিড়ম্বনায় পাঠদানে আরো সমস্যা হচ্ছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, লোহাগড়া উপজেলার মরিচপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত। বিদ্যালয়ে তিনটি ছোট-বড় ভবনের মধ্যে সাত বছর আগে দু’টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে দুইকক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন আছে। অরণ্য, হাফসা, সেতুসহ বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী জানায়, বেড়াবিহীন টিনের ঘরে তারা ঠিকমত ক্লাস করতে পারে না। এক ক্লাসের পড়ার শব্দে তারা ঠিকমত পড়া বুঝতে পারে না। ঝড়, বৃষ্টি শুরু বইপত্র ও তাদের শরীর ভিজে যায়। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আল আমিন বলে, ছাপড়া ঘরে কখনো প্রচন্ড গরমে; কখনো বৃষ্টিতে ভিজে ক্লাস করতে হয়। মরিচপাশার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ জানান, বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনগুলোর কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বারবার জানালেও নতুন ভবন নির্মাণে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অভিভাবক লিটু সরদার বলেন, সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তায় থাকি। বৃষ্টি শুরু হলে ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়।
প্রধান শিক্ষক সুবিনা আকতার স্বাতী বলেন, বিদ্যালয়ে বর্তমানে যে ভবনটি আছে তার একটিতে বিদ্যালয়ের অফিসরুম; অন্যটিতে ক্লাসরুম। এছাড়া শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য দু’টি বাথরুম থাকলেও তা ভাঙ্গাচেরা। এদিকে, ক্লাসরুমের সংকটের মধ্যেও আমরা আন্তরিক ভাবে পাঠদান করে যাচ্ছি। ফলাফলও ভালো। ২০১৭ সালে সাফল্যের পাশাপাশি ২০১৬ সালে সাধারণ গ্রেডে চারজন এবং ২০১৫ সালে ট্যালেন্টপুলে ছয়জন ও সাধারণ বৃত্তি পেয়েছিল চারজন। এদিকে বৃহস্পতিবার (১৭ মে) লোহাগড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে আমাদের বিদ্যালয়ের ভবন, শিক্ষার্থী ও শিফট সংখ্যা এবং টিনসেডের প্রয়োজন কিনা; এসব বিষয়ে তথ্য দেয়া হয়েছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল মান্নান সরদার বলেন, গ্রামবাসীর চেষ্টায় নির্মিত টিনের ঘরটিতে ক্লাস হচ্ছে। দ্রুত ভবন নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি। লোহাগড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, বিদ্যালয়টিতে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করছি এ বছরই নতুন ভবন অনুমোদন হবে।