সোনা ও টাকা চুরির অপবাদে নড়াইলে এক কিশোরকে অত্যাচারের অভিযোগ

6
116

স্টাফ রিপোর্টার

সোনা ও টাকা চুরির অপবাদে নড়াইলের পল্লিতে তাহের নামে এক কিশোরকে বাঁশকলে দিয়ে, ঘরের ঢাবা-আড়ার সাথে ঝুঁলিয়ে, পানির বোতল ও লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে এবং লোহার পোড়েন দিয়ে হাতের তালু ও আঙ্গুলে অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী এক পরিবার ও স্থানীয় ইউপি মেম্মরের বিরুদ্ধে। সদর থানার এক পুলিশও তাকে রুল দিয়ে কোমরের নীচ থেকে পা পর্যন্ত মেরেছে বলে অভিযোগ করেছে ওই যুবক। বর্তমানে সে সদর হাসপাতালে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে। তাহেরের পিঠ, নখ ও কোমরের আঘাতের চিহ্ন।

সদর উপজেলার তুলরামপুর ইউনিয়নের পেড়লি গ্রামের হত দরিদ্র ওয়াজেদ মোল্যা (৪০) ও তার স্ত্রী পারভীনের অভাবের সংসার। পারভীন ঢাকায় একটি বাসায় কাজ করে এবং ওয়াজেদ বিভিন্ন গ্রামে শ্রম বিক্রি করে সংসারের খরচ চালায়। তাদের দুই পূত্র তাহের( ১৭) ও লিমন (১১) বাড়িতে থাকে। লিমন একই গ্রামের প্রভাবশালী মৃত আকাম সরদারের পূত্র নাহিদ সরদারের (২৯) বাড়িতে কাজ করে।

লিমন এ প্রতিনিধিকে জানায়, গত শনিবার (২৮ জুলাই) সকালের দিকে নাহিদ সরদার ও তার মা শিউলি বেগম আমাকে তাদের বাড়িতে দুই ভরি ওজনের স্বর্ণের চেন ও কানের দুল এবং ১০ হাজার টাকা হারিয়ে গেছে। এ ঘটনায় তোরা জড়িত। আমি অস্বীকার করলে আমাকে মারধর করে ও মেরে ফেলার ভয় দেয় এবং বলে তাহলে তোর ভাই তাহের ও তোর (লিমনের) চাচাতো ভাই হুমায়ুনের নাম বল। তখন মার খাওয়ার ভয়ে তাহের ও হুমায়ুনের নাম বলি, ওরা এসব চুরি করেছে। সন্ধ্যার দিকে স্থানীয় মেম্বর দেলোয়ার হোসেন ও নাহিদ সরদার তাহেরকে সোনা ও টাকা চুরির কথা বলে মারধর শুরু করে এবং এক পর্যায়ে নাহিদের পাট রাখার পুরোনো ঘরে ভাই তাহেরকে বাঁশকল, ঝুলিয়ে লাঠি ও পানির বোতলে পানি ভরে মারে এবং লোহার পোড়েন ও পেরেক দিয়ে হাতের তালুতে আঘাত করে অত্যাচার করে।

হাসপাতালে যন্ত্রনায় কাতর তাহের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানায় শনিবার মেম্বার দেলোয়ার ও নাহিদ তাকে বাঁশকল দিয়ে, বাঁশকল দিয়ে, ঘরের ঢাবার সাথে ঝুলিয়ে মারে এবং লোহার পড়েন দিয়ে এবং পেরেক দিয়ে দিয়ে অত্যাচার করে। এরপর শনিবার রাতে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। পরে হাজতের মধ্যে একটি কক্ষে নাহিদের কথামতো পুলিশও কোমরের নীচ থেকে পা পর্যন্ত রুল দিয়ে বেধড়ক পেটায়। পরে রোববার সন্ধ্যার দিরে আমাকে ছেড়ে দেয়। তাহের নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করেন।

তাহেরের বাবা ওয়াজেদ মোল্যা ও পারভীন খানম জানান, তারা ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলেন না। তারা বলেন, আমাদের সন্তান যদি চুরি করে তাহলে যে শাস্তি হয় আমরা মাথা পেতে নেব। কিন্ত এ নির্মম অত্যাচারের বিচার দাবি করছি।

হাসপাতালের আরএমও আ.ফ.ম মশিউর রহমান জানান, তাহেরের অবস্থা সম্পর্কে বৃহস্পতিবার ছাড়া বলা সম্ভব নয়। স্থানীয় পেড়লি গ্রামের সাইদুর রহমান জানান, তাহের দুই দিন বাড়িতে পড়ে ছিল। ঘটনার সময় তার মা ও বাবা বাড়িতে ছিল না। বুধবার তাহেরের অবস্থা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বলেন, গ্রামের প্রায় সমস্ত মানুষ এ অত্যাচারের বিষয়টি জানে। নাহিদরা প্রভাবশালী লোক তাদের ইট ভাটার ব্যবসা আছে। তাদের ভয়ে গ্রামের কেউ কথা বলতে চায় না।

অভিযুক্ত তুলারামপুর ইউপি মেম্বর দেলোয়ার হোসেন বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বুলবুর আহমেদ এ বিষয়টি বলার পর নাহিদের বাড়িতে যাই। তাহেরকে জেরা করলে সে এককবার এক এক কথা বলে। পরে আমি চলে আসি। তাহেরকে কারা মেরেছে তা বলতে পারব না। আমি তাকে একটি চড়ও মারিনি।

অভিযুক্ত নাহিদ সরদার বলেন, তাহের ও লিমন সোনা ও টাকা চুরির সাথে জড়িত। তারা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। ওদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। তাহেরকে মারধরের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, তাহের ও তার পরিবার নাটক করছে। গ্রামের কিছু লোক শত্রুতা করে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে।

এ ব্যাপারে সদর থানা পুলিশের এস আই নূর মোহাম্মদ জানান, সোনা ও টাকা চুরির ঘটনা শোনার পর আমরা পেড়লি গ্রামে যাই। পরে নাহিদ সরদার শনিবার রাত ১টার দিকে তাহেরকে পুলিশে সোপর্দ করে। তাহের প্রথমে সোনা চুরির কথা স্বীকার করলেও পরে তার কোনো প্রমান পাওয়া যায়নি। রোববার সন্ধ্যার দিকে নাহিদ তাহেরকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। তবে পুলিশ তাহেরকে কোনো মারধর করেনি।

সদর থানার ওসি মোঃ অনোয়ার হোসেন বলেন, লিমন ও তাহের প্রথমে সোনা ও টাকা চুরির বিষয়টি প্রথমে স্বীকার করলেও পরে কোনো প্রমান পাওয়া যায়নি। পরে নাহিদ তাহেরকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এখানে পুলিশ কর্তৃক তাহেরকে মারধরের প্রশ্নই আসে না।