নিজস্ব প্রতিবেদক
নড়াইল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাহাড়সম দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিনিয়ত হয়রানি ও অতিরিক্ত টাকা ছাড়া গ্রাহকরা সহজে পাসপোর্ট হাতে পান না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। গত এপ্রিল মাস থেকে বর্তমান কর্মকর্তা যোগদানের পর থেকে পরিবর্তিত রেট অনুযায়ী আগস্টের ৭ তারিখ পর্যন্ত ৪ হাজর ৬৬১ টি পাসপোর্ট আবেদনপত্রের বিপরীতে ৪৮ লাখ ৯৪ হাজার ৫০ টাকা উৎকোচ গ্রহণ হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা যায়, পাসপোর্ট করতে যথাযথ নিয়ম মেনে কোন ফরম পূরণ করে জমা দিতে গেলে বিভিন্ন ছল-চাতুরির মাধ্যমে তা বাতিল করা হয়। এক্ষেত্রে নড়াইল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে এক শ্রেণীর দালাদের যোগসাজশ রয়েছে। যেকারণে অনেকে ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে টাকার বিনিময়ে দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট জমা দিতে বাধ্য হন। জমাকৃত ফরম প্রতি বর্তমান উৎকোচ দিতে হয় ১ হাজার ৫০ টাকা হারে। পূর্বের উৎকোচের হার ছিল ৮৫০টাকা । পূর্বের কর্মকর্তা মো.শাহাদৎ হোসেন বদলীর সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান উপ-সহকারী পরিচালক মো.শামীম হোসেন গত ৩ এপ্রিল যোগদান করার পর থেকে উৎকোচ ২০০টাকা হারে বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়,জরুরী ভিত্তিতে ‘এক্সপ্রেস’পাসপোর্ট করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ৬ হাজার ৯০০ টাকার জমা দিতে হয়। পাশপাশি উৎকোচ বাবদ ১ হাজার ৫০ টাকা নগদ জমা দিয়েও ৯ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার কথা থাকলেও তা পাওয়া যাচ্ছে না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ৫৮০৫০, ৫৮১৩৭, ৫৬০৬৮, ৫৮০৬৭, ৫৮০২২ নম্বরসহ অসংখ্য জরুরী পাসপোর্ট আবেদনকারীরা উৎকোচ দিয়েও ২৬দিন পর পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন। এছাড়া ‘এম.আর.পি’ প্রতিটি পাসপোর্টে ব্যাংকে ৩ হাজার ৪৫০টাকা জমা এবং নির্ধারিত উৎকোচের টাকা পরিশোধ করেও ২১ দিনের মধ্যে ডেলিভারী দেয়ার কথা থাকলেও পাসপোর্ট হাতে পেতে অনেক বেশী সময় লাগছে। আরো জানা যায়,দালালরা ফরম জমাদানের সময় বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করেন। এ সাংকেতিক চিহ্ন সম্বলিত ফরম অনায়াসেই জমা নেয়া হয়। এ বিশেষ চিহ্ন না থাকলে হরেক রকম ভুলের অজুহাতে ফরম ফেরত দেয়া হয়। ফলে পাসপোর্ট পেতে ভোগান্তি আর অনিয়মের শেষ নেই। প্রতি পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা।
সরেজমিনে নড়াইল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়,পাসপোর্ট পেতে গ্রাহকদের অনেক ভিড়। এ সময় লাইনে দাঁড়ানো সদর উপজেলার গোয়ালডাঙ্গা গ্রামের ভুক্তভোগী মুক্তা বলেন,‘আমার সন্তানকে নিয়ে এসেছি পাসপোর্ট করতে । অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। কাউন্টারে জমা দিতে গেলে বলছেন দেরি করে আসেন। প্রধান গেটে দাড়ানো আনসার সদস্য অলিয়ার পরামর্শ দিলেন টাকা দিয়ে দালালদের মাধ্যমে আসেন সহজে হয়ে যাবে।’
একই উপজেলার মুশুড়িয়া গ্রামের সবুজ বিশ্বাস নামক অপর এক ভুক্তভোগী জানান,‘আমি পাসপোর্ট ফরম জমা দিতে গিয়ে ২ দিন ফেরত এসেছি। পরে জামেলা এড়াতে পাসপোর্ট অফিসের নির্দিষ্ট দালালদের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা দিয়ে পাসপোর্ট করেছি।’
এ ছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে অভিযোগ করে বলেন,অফিস সহকারী, ডাটা এন্টি কন্ট্রোল অপারেটরসহ অফিস প্রধানের অধীনস্ত কর্মচারীরা পাসপোর্ট অফিস নিয়ন্ত্রণ করেন। তারা সু-কৌশলে উপ-সহকারী পরিচালককে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরে অফিসে অনিয়মতান্ত্রিক রামরাজত্ব চালিয়ে আসছেন। এ অফিসের দুর্নীতি নতুন কিছু নয়। গত ৯ এপ্রিল এ পাসপোর্ট অফিস থেকে নূর ফাতেমা (২১) ও জয়নাব বিবি (২৫) নামক দুই রোহিঙ্গা নারীকে আটক করা হয়। পাসপোর্ট করতে আসা এ রোহিঙ্গা নারীদের পাসপোর্ট করাতে সাহায্য করা ও মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষের অভিযোগে দালালদের সঙ্গে আটক করা হয় অফিসের কর্মচারী মুরাদ হোসেনকে।
নড়াইল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক সাইফুল ইসলাম জানান,‘ আমি পাসপোর্ট ফরমটি চেক করে অফিস প্রধানের নিকট পাঠিয়ে দেই। এখানে আমার কোন কর্তৃত্ব নেই। আমি কোন অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই।’
একই প্রসঙ্গে নড়াইল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো.শামীম হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিসে সেবার মান পূর্বের চেয়ে অনেকগুণ বেড়েছে। অনেক সময় সার্ভার ও ইন্টারনেট সমস্যার কারণে পাসপোর্ট দিতে দেরি হয়। এ পাসপোর্ট অফিসে কোন অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি হয় না। অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তিরা এ অফিসের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’