নড়াইলে নবগঙ্গা নদীর ভাঙ্গনে বিলীন শতাধিক বাড়িঘর

5
44

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নবগঙ্গা নদীপাড়ের শুক্তগ্রাম নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে শতাধিক বাড়ি-ঘরসহ ফসলী জমি। প্রবল স্রোতে নবগঙ্গ নদীর ভাঙ্গনে উপজেলার শুক্তগ্রামের পালপাড়া নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

প্রায় ৫০টি পাল পরিবারসহ শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব। হুমকির মুখে রয়েছে আরো শতাধিক বাড়ি-ঘরসহ আশ্রয়ন প্রকল্প, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অস্থায়ী অফিস, বিদ্যালয়, বাজারসহ ফসলী জমি।

সরেজমিন দেখা যায়, নবগঙ্গা নদীর ভয়াল আগ্রাসনে পাল (কুমোর) পাড়ার প্রায় সব জায়গা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সম্প্রতি নদী ভাঙ্গনে প্রায় দু’শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে শুক্তগ্রাম আশ্রয়ন প্রকল্প, শুক্তগ্রাম বাজার, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশের শতাধিক পরিবার।

যাঁরা যেভাবে পারছেন বাড়িঘর ভেঁঙ্গে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। রাতারাতি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে তাঁদের পারিবারিক মন্দির, কুমোর শিল্পের চাকার ঘর, হাঁড়ি-কলসি পোড়ানোর পাজা, নার্সারীসহ অসংখ্য ফলজ ও বনজ গাছপালা।
১নং বাবরা-হাচলা ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সাবেক ইউপি মেম্বর লায়েক হোসেন মোল্যা বলেন, ওই গ্রামের অরুণ পাল, রতন পাল, কালিদাস পাল, মনি মহন পাল, হরিদাস পাল, কার্তিক পাল, বিকাশ পাল, ঝন্টু পাল, লিমা বেগম, রতন শিকদার, হাসান শিকদার, আকবার খান, আকতার মন্ডল, দিলিপ পাল, রবি পালসহ শুক্তগ্রাম বাজারের পূর্বপাশে অবস্থিত প্রায় পুরো এলাকাই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে আর কিছুদিন চলতে থাকলে শুক্তগ্রম বাজার ও কয়েকশ’ পরিবারের ভিটেমাঠি বিলীন হয়ে যাবে।

পালপাড়ার প্রবীণ ঝন্টু পাল বলেন, বাবার হাত ধরেই তিনি এ পেশায় এসেছেন প্রায় ৪৫ বছর আগে। স্ত্রী ও এক অন্ধ ছেলেসহ চার সন্তান এবং নাতি-নাতনিসহ মোট ১১ জন সদস্য নিয়ে তার সংসার। ১৭ শতক জমিতে চারটি ছোট টিনের ঘর ও একটি হাড়ি-পতিল তৈরির চাকা এবং পোড়ানোর পাঁজা ছিল তাদের। তিনটি ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিতে পারলেও বাকি সব নবগঙ্গায় বিলীন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, তার কোন সমার্থ নেই অন্যত্র জমি কিনে নতুন করে বাড়িঘর নির্মাণ করার। ১৫ দিন ধরে কাজ বন্ধ। যে সকল জিনিসপত্র তৈরি ছিল তাও সরাতে পারেননি। এই বৃদ্ধ বয়সে তিনি এখন কি করবেন সেকথা বলে কেঁদে উঠলেন।

নার্সারি ব্যবসায়ী বিলায়েত হোসেন মোল্যা জানালেন, ১৮ বিঘা জমির মাত্র বিঘা দুয়েক আছে, বাকি সবই সর্বনাশা নবগঙ্গা খেয়ে ফেলেছে। তার ওই জমিতে ছিলো দু’টি আমের নার্সারি, দু’টি মেহগনি নার্সারি, একটা আমের বাগান ও চারটা কুলের বাগান। সব হারিয়ে তিনি এখন পথের ফকির।

পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ নেওয়াজ বলেন, ইতোমধ্যে শতাধিক পরিবারের বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মোঃ এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিবের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ভাঙ্গন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি বলেন, নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় ভাঙ্গন রোধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।