স্টাফ রিপোর্টার
আশির্ধ্বো হিরন সরকার দীর্ঘ ৬টি বছর ধরে পথে পথে ঘুরেন। দিন যায়, রাত আসে। আবার দিন। নাওয়া-খাওয়া ও থাকার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। কেউ খাবারের ব্যবস্থা করলে খায়। আর না হলে অভূক্ত থাকেন। সর্বশেষ ৬ মাস শহরের শীব শংকর বালিকা বিদ্যালয়ের বারান্দায় রাত যাপন করছিলেন। শরীর আর চলে না বিধায় দিনের বেশীরভাগ সময় এখানেই থাকতেন। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে এখন এ স্কুলের বারান্দায় আশ্রয় গেড়েছিলেন। বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে পড়েছেন। হয়তো এটাই তার শেষ ঠিকানা হতো। কিন্তু এখন তার ঠিকানা ‘ শান্তিনিবাস কমপ্লেক্স, ফরিদপুর’। হৃদয়ে নড়াইল নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কয়েক বন্ধু এবং নড়াইল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কয়েক সাংস্কৃতিক কর্মী এই বৃদ্ধকে বেশ কিছুদিন দেখভালের পর বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এ বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছেন।
সদর উপজেলার শেখাটি ইউনিয়নের তপনবাগ গ্রামে হিরন সরকারের বাড়ি। স্ত্রী আন্না সরকার দীর্ঘ ১৫ বছর পূর্বে মৃত্যুবরণ করেন। একমাত্র সন্তান মহাদেব সরকার ২০০৮ সালে দুবৃত্তের হাতে নিহত হয়। মহাদেবের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী একমাত্র পূত্র সন্তান এখন খুলনায় ও এক মেয়ের বিয়ের পর যশোরের বাঘারপাড়ায় থাকে। ভূমিহীন হিরন সরকার পরের জায়গায় বসবাস করতো। এ কূলে তার আর কেউ না থাকায় এবং শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়ায় ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে পথে বেরিয়ে পড়েন। গত এক মাস আগে হিরন সরকার নড়াইল শহরের হৃদয়ে নড়াইল এবং সাংস্কৃতিক জোটের কয়েক কর্মীর নজরে পড়লে তারা তার দেখভাল শুরু করে এবং সর্বশেষ ফরিদপুর বৃদ্ধাশ্রমের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সেখানে তার থাকার ব্যবস্থা করেছেন।
এ ব্যাপারে নড়াইল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারন সম্পাদক শরফুল আলম লিটু বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে ফরিদপুর সরকারি শান্তিনিবাস কমপ্লেক্স-এ অসহায় হিরন সরকারের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
হৃদয়ে নড়াইল গ্রুপের বন্ধু সায়েদ আলী শান্ত বলেন, আমরা হিরন সরকারকে শহরে ভবঘুরে অবস্থায় দেখে প্রথমে তার সেবা, শশ্রুষা কিছু রোগের চিকিৎসা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করি। পরে বৃদ্ধাশ্রমের পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি।
ফরিদপুর সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলী আহসান বলেন, এখানে ৫০টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ২৫জন পুরুষ এবং ২৫জন মহিলা। হিরন সরকার এখন থেকে এখানেই থাকবেন। পারিবারিক পরিবেশেই তিনি খাওয়া, চিকিৎসাসহ সব ধরনের সেবা পাবেন।