কালিয়ায় দরিদ্রের ঘর নিয়ে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ

34
47

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইলের কালিয়ায় হতদরিদ্রদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর “জমি আছে ঘর নেই” আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর পাইয়ে দেয়ার নাম করে ৫৫ জন হতদরিদ্রের কাছ থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকা অর্থ বানিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। একটি প্রতারক চক্র গৃহহীন ওইসব দরিদ্র মানুষকে প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিয়েছে ওই অর্থ। ফলে অসহায় ওই দরিদ্ররা সুদে কারবারিদের দেনায় পড়ে সর্বস্ব হারাতে বসেছে বলে জানা গেছে। অর্থ বানিজ্যের ঘটনায় অভিযুক্ত ডহর চাঁচুড়ী গ্রামের কানাই গাজী গৃহহীনদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার সত্যতা স্মীকার করেছেন।

কালিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রায়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় সারাদেশের ন্যায় কালিয়া উপজেলায়ও জমি আছে, ঘর নেই প্রকল্পের আওতায় অসহায় গৃহহীন মানুষের জন্য সরকারি খরচে গৃহ নির্মাণের কাজ চলছে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারিদের মাধ্যমে সংগৃহীত তালিকা অনুযায়ী গৃহহীনদের নামের তালিকা ইউএনওর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরন করা হয়ে থাকে। সে অনুযায়ী গত (২০১৭-১৮) অর্থবছরে ৩২ টি ঘর বরাদ্দসহ মোট ১৯৭টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরের বরাদ্দ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আর সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে উপজেলার ডহর চাঁচুড়ী গ্রামের মৃত হামিদ গাজীর ছেলে কানাই গাজী সরকারি ঘর পাইয়ে দেয়ার নামে স্থানীয় গৃহহীন অসহায় মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন ওই বিপুল অংকের টাকা বলে উপজেলার চাঁচুড়ী ইউনিয়নের ডহর চাঁচুড়ী গ্রামের ঋষিপল্লীর বিধবা জোসনা বিশ্বাস (৫০) অভিযোগ করে বলেছেন, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই তিনি জরাজীর্ন একটি ঘরে বসবাস করে আসছেন। এরই মধ্যে গত প্রায় এক সপ্তাহ আগে একই গ্রামের কানাই গাজী তাকে একটি সরকারি ঘর পাইয়ে দেয়ার জন্য ১৫ হাজার টাকার চুক্তিতে তার কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা, হাসান শেখের স্ত্রী রাস্তার মহিলা শ্রমিক হালিমা বেগমের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকাসহ একই চুক্তিতে ওই গ্রামের পিকুল মোল্যার স্ত্রী আনজিরা বেগম, মৃত তালেব শেখের ছেলে মিজান শেখ, মৃত তালেব শিকদারের ছেলে ইলু শিকদার, হাদিস শিকদার, লায়েব শিকদার, মৃত আকুববরের ছেলে রজিবুল শেখ, মকবুল শেখের ছেলে ইসমাইল শেখ, মৃত নয়ন মোল্যার ছেলে আলাউদ্দিন মোল্যা, মৃত আজোয়ার মোল্যার ছেলে আল-আমিন মোল্যা, মৃত আনসার শেখের ছেলে শরিফুল শেখ, সবুর বিশ্বাসের ছেলে লিটু বিশ্বাস, মৃত কমল বিশ্বাসের ছেলে অশোক বিশ্বাস, শংকর বিশ্বাস, মৃত লক্ষীকান্তের ছেলে দিলীপ বিশ্বাস, হিরু শেখের ছেলে হাসমত শেখ ও লিয়াকত শেখ, মৃত তোফাজ্জেল মোল্যার ছেলে ওসমান মোল্যা ও মৃত উতার উদ্দিন মোল্যার ছেলে মাসেম মোল্যা, চাঁচুড়ী গ্রামের মৃত বদিয়ার মোল্যার ছেলে আলমগীর মোল্যা, মৃত ছলেমান শেখের ছেলে হেমায়েত শেখ, ওই গ্রামের বেপারী পাড়ার মোন্তাজ খাঁর মেয়ে জাহেদা বেগম ও কৃষ্ণপুর গ্রামের আজিজ শেখের ছেলে নাসির শেখ ও মৃত আবু সাঈদ শেখের স্ত্রী রুজিনা বেগমের নিকট থেকে কানাই গাজী ও তার ভাতিজা আলমগীর গাজী জনপ্রতি ৫ থেকে ৮ হাজার হারে ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে ভ’ক্তভোগীদের অভিযোগ রয়েছে। ঘর পাইয়ে দেয়ার পর চুক্তির বাকি টাকা পরিশোধ করার কথা রয়েছে।

অভিযুক্ত কানাই গাজী বলেছেন, সরকারি ভাবে ঘর পাইয়ে দেয়ার জন্য তিনি ওইসব দরিদ্রের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা হারে চুক্তির মাধ্যমে অনুমোদনের খরচা বাবদ প্রথম বারে জন প্রতি ৩ থেকে ৬ হাজার করে অগ্রিম নিয়েছেন। ঘর নির্মাণের সামগ্রী পৌছানোর পর চুক্তির বাকি টাকা নেবেন।

চাঁচুড়ী ইউপির চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম হিরক বলেছেন, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। বিষটিতে তিনি ইউএনওর সাথে পরামর্শ করে আইনী পদক্ষেপ নেবেন।

কালিয়া ইউএনও মো. নাজমুল হুদা বলেছেন, গরীবের ঘর দেয়ার নামে অর্থবানিজ্যের কথা তিনি শুনেছেন। সুনির্দিষ্ট ও লখিত অিভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন।