স্টাফ রিপোর্টার
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পূর্নিমাগাঁতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল আমিন সরকারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অত্র উপজেলার পুর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়নের পরকুল গয়হাট্টা গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে বকুল হোসেন (৪৮) এর ২.৫ শতক জমি বিক্রির ১০ লক্ষ টাকার মধ্যে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা পাওয়ার পর অবশিষ্ট ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা সালিশের নামে চেয়ারম্যান নিজেই আত্মসাৎ করেছে।
এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহারে পরিবারটিকে চেয়ারম্যানের লোকজন তাদের এলাকা ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ ও লিখিত অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার পুর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়নের পরকুল গয়হাট্টা গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে বকুল হোসেন (৪৮) এর ২.৫ শতক জমির ওপর বাড়ী বানিয়ে পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিলেন এক পর্যায়ে পরিবারটির টাকার প্রয়োজনে জায়গাটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়। একই গ্রামের মৃত মজিবর সরদারের ছেলে আব্দুর রহিম বসুর সাথে জমির মূল্য ১০ লক্ষ টাকা চুড়ান্ত ভাবে মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী মো.বকুল বলেন,আমি জমি বিক্রির টাকার দরদাম ঠিক করে সাব রেজিষ্ট্রার অফিসে নিবন্ধন করতে যাই। নিবন্ধনের আগেই জমির দাম বাবদ আমাকে ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করার কথা। কিন্তু সাব-
রেজিস্ট্রি কার্যালয় চত্বরে গেলে আব্দুর রহিম ওরফে বসু লোকজন নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে আমাকে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দেয়। বাকি ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকার পরিবর্তে বসু তাহার পৈতৃক সম্পত্তি থেকে ৫ বিঘা জমি কট বা বন্ধক হিসাবে আমাকে ভোগ দখলের অনুমতি দিয়ে জমি লিখে নেয়।
সেই মোতাবেক আমি আব্দুর রহিম বসুর কৃষি জমিতে চাষাবাদ করিয়া প্রায় ১ বছর জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু ২য় বছরে সরিষার আবাদ করলে আব্দুর রহিম বসু সমস্ত শর্ত ভঙ্গ করে চাষকৃত সরিষার আবাদ জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে সে বাকী ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা না দিয়ে গয়হাট্টা বাজার সংলগ্ন জামে-মসজিদের পশ্চিম পার্শে আমার লিখে দেওয়া ওই ২.৫ শতক জমি এলাকার প্রভাবশালীদের সাথে নিয়ে জোরপূর্বক দখল নেওয়ার চেষ্টা করলে এ নিয়ে এলাকায়
চাঞ্চল্যের সৃষ্ঠি হলে এলাকায় দফায় দফায় সালিশ বৈঠক হয়।
বিষয়টি নিয়ে ৭সেপ্টেম্বর ২০১৮ইং তারিখে সালিশের একপর্যায়ে পূর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল-আমিন সরকার সবার সম্মুখে সালিশে রায় দিয়ে সম্পূর্ণ টাকা তিনি হাতে নেয়। ৮সেপ্টেম্বর ২০১৮ইং তারিখে ওই সেই টাকা আমাকে বুঝিয়ে না দিয়ে চেয়ারম্যান নিজেই তার বাহিনী দিয়ে জোরপূর্বক উক্ত জমি দখলের চেষ্টা করলে আমিসহ এলাকার সচেতন মহল বাধা দেয়। বাধা দেয়ার ফলে আমিসহ তার পরিবারকে প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে চেয়ারম্যান আল আমিন সরকার ও তার লোকজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বলেন, অসহায় বকুল তার পাওনা টাকা আদায়সহ দোকান ঘর যেন দখল করতে না পারে সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের কাছে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এবং এই চেয়ারম্যান নিজস্ব লোকজন দিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে গ্রাম্য শালিশের নামে সাধারন মানুষকে হয়রানি করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে। রাতারাতি চেয়ারম্যান বনে গিয়ে সরকারী দলে প্রবেশ করে তিনি জড়িয়ে পড়েছে নানা অনিয়মে সেটার সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করছি।
এক স্কুল শিক্ষক বলেন, কিছুদিন আগে এক সংখ্যালঘু মেয়ের বিচারের নামে তাদের জরিমানার অর্থ আত্মসাৎ করেছিল এই চেয়ারম্যান। সম্প্রতি তার নিজস্ব লোকজন নিয়ে বনভোজনের নামে নৌকায় নর্তকী নিয়ে ফুর্তি করার ভিডিও ফাঁস হয়ে পড়েছিল। চেয়ারম্যানের নর্তকী নিয়ে নৌ ভ্রমনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছিল। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল স্থানীয় মহলে। একজন জনপ্রতিনিধির এমন কর্মকান্ডে বিব্রত অবস্থায় পড়েছে স্থানীয় প্রশাসনসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উল্লাপাড়া উপজেলা আ’লীগের এক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ওই চেয়ারম্যান দলের কেউ নয়। দলের কতিপয় নেতাকে ম্যানেজ করে নৌকা প্রতিকের প্রার্থীকে হারিয়ে তাকে চেয়ারম্যান হতে সহায়তা করেছিল তারা। নব্য আ’লীগের এই চেয়ারম্যান এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। নিজস্ব লোকজন নিয়ে সব সময় হোন্ডা মহড়া দিয়ে এলাকায় যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াচ্ছে। তার কারনে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরাও বিব্রত।
জমির ক্রেতা আব্দুর রহিম ওরফে বসুর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রেজিস্ট্রি করার পর সব টাকা সালিশে চেয়ারম্যানের কাছে আমি জমা দিয়েছি। বকুল টাকা চেয়ারম্যানের কাছ থেকে নিয়েছে কি না আমি জানি না। জমি আমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছি সেই জন্য জায়গা দখলের চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে পূর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল-আমিন সরকারের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন রিসিভ না করে কেটে দেন। অপরদিকে অভিযোগ প্রসঙ্গে উল্লাপাড়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ দেওয়ান কউশিক আহমেদ জানান,অভিযোগ পাওয়ার পর ক্রেতাকে বিক্রেতার দাবীকৃত টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত উক্ত জায়গায় যেতে নিষেধ করা হয়েছে।