স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম এর উদ্যোগে বাড়িভাঙ্গা খাল জেলেদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এখন থেকে জেলেরা এ খালে স্বাধীন ভাবে মাছ ধরতে পারবেন। শনিবার (২৭ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে লোহাগড়া উপজেলার বাড়িভাঙ্গা খাল পরিদর্শন করে এলাকাবাসীর জন্য এ খাল দখলমুক্ত করে দেন তিনি। এর আগে খালটি প্রভাবশালীদের দখলে ছিল। দীর্ঘ ২০ বছর পর এলাকাবাসীসহ জেলেদের জন্য উন্মুক্ত হলো খালটি। এতে ভীষণ খুশি নলদী ও নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের সাত গ্রামবাসী।
পুলিশ সুপারের এ ধরণের পদক্ষেপে নলদী ইউনিয়নের জালালসী, বৈকণ্ঠপুর ও বারইপাড়া এবং নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের বাড়িভাঙ্গা, হান্দলা, ব্রাহ্মণডাঙ্গা ও চরব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামের শতাধিক জেলেসহ হাজারো মানুষের জন্য উন্মুক্ত হলো বাড়িভাঙ্গা খালটি।
এদিকে সবাই যাতে নির্বিঘ্নে খালে মাছ ধরতে পারেন, সেজন্য নলদী ফাঁড়ির পুলিশকে খালপাড় এলাকায় সার্বক্ষণিক নজরদারি জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। এতে জেলেসহ এলাকাবাসী খুশি হয়েছেন। তবে স্থানীয় কিছু লোক এ ধরণের ভালো উদ্যোগের বিরোধিতাও করেন।
জানা যায়, লোহাগড়া উপজেলার বাড়িভাঙ্গা খালের বিভিন্ন স্থানে আড়াআড়ি বাঁধ, সুইতে (চিকন ও ঘন জাল) জালসহ বিভিন্ন উপায়ে বাঁধা সৃষ্টি করে এক শ্রেণীর সুবিধাভোগী লোক বর্ষা মওসুমে মাছ ধরে আসছেন। এমনকি প্রতি মওসুমে প্রায় চার লাখ টাকার বিনিময়ে খাল আগাম বিক্রি করে দিয়ে তাদের পছন্দমত লোকজনকে মাছ ধরার সুযোগ করে দিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে এলাকার গরিব জেলেসহ সাধারণ মানুষ বাড়িভাঙ্গা খাল এবং খালসংলগ্ন ইছামতি বিলের মাছ ধরা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। এ নিয়ে এলাকায় ইতোপূর্বে অন্তত ১০ বার দ্বন্দ্ব-সংঘাতও সৃষ্টি হয়েছে। ২০১২ সালের ২২ জুন দুইপক্ষের সংঘর্ষে হান্দলা গ্রামের মোশারেফ হোসেন মুসা (৪০) নামে এক দিনমুজুর নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। তবে, এখন থেকে সবাই এ খাল ও বিলে ভেসাল, জাল, পলই, ঘুণি, বড়শিসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে উন্মুক্ত ভাবে মাছ ধরতে পারবেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।
এ এলাকার জেলেসহ উপকারভোগীরা জানান, বাড়িভাঙ্গা খাল ও ইছামতি বিল থেকে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ টাকার দেশি মাছ আহরণ করেন তারা। এখানে দেশি পুঁটি, রয়না, খয়রা, টেংরা, কৈ, শিং, বাইন, শোল, বোয়াল, টাকি, রুই, কাতলা, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যায়। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় অক্টোবর ও নভেম্বর দুই মাস জুড়ে বেশি মাছ ধরা পড়ে বাড়িভাঙ্গা ও ইছামতি বিলে। এ বিল ও খালে সারাবছর পানি থাকায় দেশি মাছের অভয়াশ্রমও বলা যায়। এখানকার মাছে নড়াইলের রূপগঞ্জ ও লোহাগড়া বাজারসহ ওই সাত গ্রামের জনসাধারণের চাহিদা অনেকাংশে মিটে যায়। এমনকি ভালো দাম পেয়ে এখানকার মাছ ঢাকায়ও পাঠিয়ে থাকেন মৎস্যজীবীরা। শুটকি দেয়া হয় ছোট আকারের মাছগুলো। প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ বাড়িভাঙ্গা খালটির একপ্রান্ত মিলিত হয়েছে ইছমতি বিলে এবং অপরপ্রান্ত মিলিত হয়েছে নবগঙ্গা নদীর সঙ্গে। সুবিশাল ইছামতি বিল থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন এবং শুষ্ক মওসুমে নবগঙ্গা নদীর পানি বিলে সরবরাহের জন্য বাড়িভাঙ্গা খালটি প্রায় ৪০ আগে কাটা হয় বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।