স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইল সরকারি উচ্চ (বালক) বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এস.এস. সি পরীক্ষায় ফর্মপূরণে বোর্ড নির্ধারিত ফি থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়া, অতিরিক্ত ক্লাসের টাকা আত্মসাৎ, স্কুলের অফিস সহকারীকে দিয়ে ক্লাস টিচারের দ্বায়িত্ব পালন করানোসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সর্ব শেষ তথ্য গোপন করে জে.এস.সি বোর্ড পরীক্ষায় কেন্দ্রের সচিব হয়েছেন তিনি। অথচ এই শিক্ষকের নিজের মেয়েই জে.এস.সি পরীক্ষা দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে।
জানাগেছে, এস.এস.সি পরীক্ষায় ফর্মপূরণে সরকারি ভাবে অতিরিক্ত টাকা না নিতে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সেই আইন অমান্য করে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২৬০ জন পরিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫০টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নামপ্রকাশ নাকরা শর্তে একজন শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষকের নির্দেশ ক্রমে নিয়মিত ২১৮ জন ছাত্রদের (পরিক্ষার্থীদের) কাছ থেকে ৫০ থেকে ২শ টাকা বেশি নেয়া হয়েছে। আর ৪২ জন অনিয়মিত ছাত্রদের (পরিক্ষার্থীদের) কাছ থেকে ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকা বেশি নেয়া হয়েছে। অনিয়মিত ৪২ জন পরিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজনের কাছ থেকে ১৫শ-২ হাজার টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হয়েছে। কয়েকজন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক নিজে হাতে অতিরিক্ত টাকা নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
বিদ্যালয়ের এস.সি.সি পরিক্ষার্থী মো. আমিনুজ্জামান জন জানান, তার কাছ থেকে এবছর পরীক্ষার ফর্মপূরণ করার জন্য প্রধান শিক্ষক নিজে ৪হাজার টাকা নিয়েছেন। জন আরও জানান তার বন্ধু বায়েজিদ এর মার কাছে (ছেলের) পরীক্ষার ফর্মপূরণ করার জন্য ৭ হাজার টাকা দাবী করেছিলেন। এত টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে মহিলাকে ভীষণ ভাবে অপমান-অপদস্থ করেন প্রধান শিক্ষক নিজে।
দশম শ্রেণির ক্লাস টিচার মোঃ মিজানুর রহমান জানান, প্রধান শিক্ষকের আদেশ ক্রমে প্রত্যেক পরিক্ষার্থীর কাছ থেকে সামান্য কিছু টাকা অতিরিক্ত নেয়া হয়েছে। উক্ত টাকা আমিসহ আরও তিনজন ক্লাস টিচারের কাছে রয়েছে । আমরা টাকাগুলো প্রধান শিক্ষকের কাছে জমা দিয়ে দিব।
জানাগেছে, সরকারি নিময় অনুযায়ী কোন শিক্ষকের ছেলে-মেয়ে অথবা নিকটতম কোন আত্মীয় যদি সংশ্লিষ্ট বোর্ডের কোন কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দেয়, তাহলে সেই শিক্ষক ঐ বোর্ডের কোন পরীক্ষা কেন্দ্রে সচিব হতে পারবেননা। অথচ অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের মেয়ে চলতি বছর যশোর বোর্ডের অধীনে যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবছর জে.এস.সি পরীক্ষা দিলেও বিষয়টি গোপন রেখে তিনি নড়াইল সরকারি বালক বিদ্যালয়ের জে.এস.সি পরীক্ষায় কেন্দ্র সচিব ছিলেন। এর আগে ২০১৭ সালে অনুষ্ঠেয় এস.এস.সি পরীক্ষায় এই শিক্ষকের ছেলে পরীক্ষা দিলেও তখনও তিনি বিষয়টি গোপন রেখে নড়াইল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এস.এস.সি পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অর্থলোভে এবং নিজের ছেলে মেয়েদের অবৈধ সুবিধা দেওয়ার জন্য তিনি এই হীন কাজ করেন বলে জানান একাধিক শিক্ষক। এক শিক্ষক জানান, পরীক্ষার শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা পূর্বে কেন্দ্রের সচিবদের হাতে প্রশ্ন আসে। তিনি (প্রধান শিক্ষক) তার ছেলে মেয়েদের পরীক্ষার আগে প্রশ্ন দিয়েছেন কিনা সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। অবিভাবকেরা জানান এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এদিকে নিয়ম অনুযায়ী অতিরিক্ত ক্লাসের টাকার ১০ ভাগ প্রধান শিক্ষকের হাতে দিলেও যথাযথভাবে সেই টাকা খরচ না করে নিজেই সেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযাগ রয়েছে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। স্কুল সূত্রে জানাগেছে, নিয়ম অনুয়াযী অতিরিক্ত ক্লাসের ১০ ভাগ টাকা ব্যয় হবে স্কুলের গ্যাস বিল, বিদুৎ বিল এবং চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারীদের জন্য। এই স্কুলের বিদুৎ বিল দেওয়ার জন্য সরকারি বরাদ্দ থাকায় সেই খাত থেকে দেয়া হয়। আর প্রধান শিক্ষক নিজে অতিরিক্ত ক্লাসের ১০ ভাগ টাকা যথাযথভাবে খরচ না করে নিজেই সম্পর্ণ টাকা আত্মসাৎ করেন। এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের ভয়ের মধ্যে রেখে অতিরিক্ত ক্লাসের টাকার অংক বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করেন।
এদিকে ছাত্রদের জন্য নির্মিত ছাত্রাবাসে স্কুলের নিজের পছন্দের অফিস সহকারিকে পরিবারসহ (স্ত্রী) থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন। স্কুলে মান সম্মত একাধিক শিক্ষক থাকলেও এই অফিস সহকারিকে দিয়েই ৩য় শ্রেণির ক্লাস টিচারের দায়িত্ব পালন করানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মহিতোষ কুমার দে কাছে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয় জানতে চাইলে তিনি রেগে যান। এসময় তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পরে তিনি বলেন কোন অনিয়ম করেননি।
স্কুলের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বেগম বলেন, আমরা যখন বিষয়টি অবগত হয়েছি সাথে সাথে ঐ শিক্ষককে পরীক্ষায় কেন্দ্রের সচিবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। আর অন্যান্য যে সকল অভিযোগের বিষয়টি শুনলাম সেগুলো খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়া হবে।