নিজস্ব প্রতিবেদক
নড়াইলের জমিদারদের নির্মিত দেড় শতাধিক বছরের পুরনো কুড়িরডোব মাঠ। নড়াইল জেলার বৃহত্তম মাঠও এটি। ঐতিহ্যবাহী মাঠটি এখন প্রায় সম্পূর্ণটাই বেদখল। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এ মাঠের অইেশ খানিজুড়ে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। এক পাশে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শেখ রাসেল স্টেডিয়ামটিও অসম্পূর্ণ। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাঠের চারপাশে তিন শতাধিক কাঁচা ঘর, ১০টির মতো ওয়েল্ডিং কারখানা, চায়ের দোকান ও মুদিখানা। মাঠে চরছে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল। এসব বাড়ি ভাড়া দেয়া, এমনকি বেচাকেনাও হয় বলে জানা যায়। ২০১৭ সালে পশ্চিম পাশে ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম অসম্পূর্ণ। দর্শকদের জন্য কোনো বেঞ্চ নেই। যদিও নারী-পুরুষের জন্য আলাদা ড্রেসিংরুম, বাথরুম, নিজস্ব পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এবং একটি অফিস কক্ষ রয়েছে। স্টেডিয়াম নির্মাণকাজের ঠিকাদার শরীফ ইমদাদুল ইসলাম বলেন, দুই মাস আগে সদর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে স্টেডিয়ামটি বুঝে দেয়া হয়েছে। তবে বেশকিছু ভূমিহীন পরিবার থাকায় কয়েকটি বেঞ্চ এখনো তৈরি করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এছাড়া মাঠে শুকানো হচ্ছে জ্বালানি কাঠ। বসবাসরত পরিবারগুলো গৃহস্থালির ময়লা-আবর্জনা মাঠেই ফেলছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এক পাশ জলাবদ্ধ। অথচ প্রাকৃতিকভাবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থান ছিল এখানে।
স্থানীয়রা জানায়, মাঠের উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিম দিয়ে কয়েকটি যাতায়াতের পথ গড়ে ওঠায় ছোট-বড় সব ধরনের যানবাহন ভেতর দিয়ে চলাচল করে। প্রতি বছর এ মাঠে লাখো মোমবাতি জ্বালিয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণ করা হয়। আন্তঃজেলা স্কুল, কলেজ ও ক্রীড়া সংস্থার ব্যবস্থাপনায় এবং নড়াইল শহরের বেশ কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাইমারি স্কুল ও কিন্ডারগার্টেনের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এ মাঠেই অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু বাকি সময় এটি খেলাধুলার অনুপযোগী থাকে বলে জানান জেলা ফুটবল দলের কোচ কার্ত্তিক দাস। মাঠ দখল করে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট গড়ে তোলার পেছনে প্রভাবশালীদের প্রশ্রয় আছে বলে অভিযোগ করেছেন নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. রবিউল ইসলাম। একাধিকবার উচ্ছেদ নোটিস দিয়েও কাজ হয়নি বলে জানান তিনি। তবে ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিময় চন্দ্র পাল জানান, মাঠের দোকানগুলো স্কুলের পক্ষ থেকেই লিজ দেয়া হয়েছে। কিছু অংশে মামলা রয়েছে। মাঠে কোনো অবৈধ দখলদার নেই বলে দাবি তার।
বাংলাদেশ ভলিবল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু জানান, জমিদারদের নির্মিত এ মাঠে বৃষ্টি হলে ১০ মিনিটের মধ্যে পানি সরে যায়। এটিকে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম করার অফিশিয়াল অর্ডারও হয়েছিল। কিন্তু ভিক্টোরিয়া কলেজ ও স্কুল এবং স্থানীয় কিছু লোকের বিরোধিতায় তা সম্ভব হয়নি। মাঠের এই দশার জন্য স্থানীয় এমপিকেই দায়ী করেছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোষাধ্যক্ষ ও স্টেডিয়াম এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রশিদ মন্ন। তবে এরই মধ্যে ৩৫টি পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাকিদের করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আজিমুদ্দীন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন সরেজমিন দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। উল্লেখ্য, দেড় শতাধিক বছর আগে নড়াইলের জমিদার বাড়ির পাশে ১১ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠে কুড়িরডোব মাঠ। ওয়েলিংটন নামে এক ব্রিটিশ কর্মকর্তা মাঠটি নির্মাণ করেন বলে অনেকে এটিকে ওয়েলিংটন মাঠও বলেন। এক মামলার আবেদনের ভিত্তিতে ১৯৮৬ সালে তিন একর ভিক্টোরিয়া কলেজের এবং পাঁচ একর কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে যায়। স্কুল কর্তৃপক্ষ এক যুগ আগে ৬০ শতক জায়গা বিক্রি করে। স্থানীয় কয়েকজন দলিল দেখিয়ে স্কুলের প্রায় এক একর জায়গার মালিকানা বুঝে নিয়েছেন। ৮১ শতক জায়গা নিয়ে মামলা চলছে।