স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইলে প্রতি বছরই আশংকাজনকভাবে গমের আবাদ কমছে। গত চার বছরে জেলায় গমের আবাদ ৬ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। উৎপাদন খরচের তুলনায় গমের দাম অনেক কম থাকা, তুলনামুলক ভাবে গম থেকে ধানের দাম বেশি থাকা, গমে ব্লাষ্ট রোগসহ বিভিন্ন প্রকার রোগ বালায় আক্রমন হওয়ায় গমের আবাদ দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে কৃষকদের দাবী।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, এবার ১৮-১৯ মৌসুমে জেলার তিনটি উপজেলায় গমের আবাদ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩’শ ৩০ হেক্টর জমিতে। পূর্বের ৩ বছরের এক হিসেবে দেখা যায় ১৭-১৮ মৌসুমে ১ হাজার ৩৭০ হেক্টোর জমিতে, ২০১৬ -১৭ মওসুমে ৪ হাজার ১২৪ হেক্টর জমিতে এবং ২০১৫-১৬ মৌসুমে ৬ হাজার ৩শ ২ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়।
সদরের আউড়িয়া ইউনিয়নের তালতলা গ্রামের কৃষক মোসলেম মুন্সি জানান, এক মন গম উৎপাদন করতে ৬শ টাকা খরচ হলে বাজারে প্রতি মন গম বিক্রি হয় মাত্র ৬শ থেকে সাড়ে ৬শ টাকায়। সরকারী ভাবেও যথা সময়ে গম কেনা হয়না। ফলে কৃষকরা গমের আবাদ থেকে সরে আসছে।
সদরের মাইজপাড়া ইউনিয়নের কৃষক বাদশা মোল্যা জানান, বাজারে গমের থেকে ধানের চাহিদা বেশি। সে জন্য তার মত অনেক কৃষক দিন দিন গমের আবাদ ছেড়ে দিয়ে অন্য ফসলের আবাদ করছে।
লোহাগড়া উপজেলার নলদী ইউনিয়নের মিঠাপুর গ্রামের কৃষক মন্নু মোল্যা জানান, বর্তমানে বাজারে এক কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৮ টাকা, এক কেজি আটা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৫/২৬ টাকা। বাজারে আটার দাম কম থাকায় গমের আবাদ দিন দিন ছেড়ে দিচ্ছে।
কালিয়া উপজেলার চাচুড়ি গ্রামের কৃষক মশিয়ার জানান, তাদের এলাকায় এক সময় প্রতি ঘরে ঘরে গমের আবাদ হতো। কিন্তু এখন এখানে গমের আবাদ হয়না বললেই চলে। কারণ গমের জমিতে বিভিন্ন প্রকার পোকার উপদ্রব দেখা দিলেও ব্লক সুপারভাইজারদের পরামর্শ তেমন একটা পাওয়া যায় না। আবার নিজেদের ইচ্ছামত কিটনাশক দিয়েও সে রোগ দমন করা যায়না। ফলে গমের আবাদ থেকে কৃষক সরে এসেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নড়াইলের উপ-পরিচালক চিন্ময় রায় বলেন, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে গমের বীজ বপনের সঠিক সময়। চলতি মৌসুমে নভেম্বর মাসে জেলায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার কারনে সময় মত চাষিরা তাদের জমিতে এবছর গমের বীজ বপন করতে পারেনি। সেই জন্যই চলতি বছরে গমের আবাদ অনেক কম হয়েছে। এছাড়া গমে ব্লাষ্ট রোগের কারনেও গমের আবাদ কমেছে।