স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইলে কুড়িরডোব মাঠের উপর শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। স্টেডিয়ামের উত্তর পার্শ্বে বেশ কয়েকটি ভূমিহীন পরিবার মাঠ ছেড়ে যায়নি। খেলা দেখতে আসা দর্শকদের বসার জন্য নির্দিষ্ট বেঞ্চ তৈরী হয়নি। মাঠের পূর্ব পার্শ্বে কয়েক পরিবার বসতি ও রাস্তা এবং দক্ষিণ পার্শ্বে এক ব্যক্তি গ্রিলের দোকান দিয়েছে। মাঠের পশ্চিম ও উত্তর পার্শ্বের পরিবারগুলো মাঠর মধ্যে জ্বলানি কাঠসহ ময়লা-অবর্জনা ফেলে। এছাড়া চলছে গরু-ছাগল ও হাঁস মুরগির চাষ। গত এক মাস পূর্বে অনেককটা এ অবস্থার মধ্যেই এ মাঠে বঙ্গবন্ধু ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুর্ধ্ব-১৭ খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উল্লেখ্য, সোমবার (২২ অক্টোবর) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের অধীন এ স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রেজানা গেছে, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের অধীনে দেশের ৬৬টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের শুরুতে নড়াইল শহরের কুড়িগ্রাম এলাকায় নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল মাঠে ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে এ স্টেডিয়ামটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে এর কাজ শেষ হয় এ বছরের ফেব্রুয়ারীতে। এটির বাস্তবায়ন করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এখানে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য ড্রেসিং রুম, বাথরুম, নিজস্ব পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এবং একটি অফিস কক্ষ রয়েছে। দর্শকদের বসার জন্য মাঠের চার পার্শ্বে ৩৫টি বেঞ্চ নির্মাণ করার কথা থাকলেও উত্তর পার্শ্বে ৫টি বেঞ্চ এখনও নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।
সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আজিমুদ্দীন জানান, মাঠের উত্তর পার্শ্বে বসবাসরত ৩৫টি দরিদ্র প্রত্যেক পরিবারকে শহরতলি আউড়িয়ায় আড়াই থেকে তিন শতক করে (পরিবার ছোট-বড় ভিত্তিতে) জায়গা দেওয়া হয়েছে। কিন্ত বেশ কয়েক পরিবার এখনও সেখানে ঘর নির্মান করতে না পারায় যেতে পারেনি। তাদের দ্রুত মাঠের জায়গা ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। হত দরিদ্র হওয়ার তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা কঠিন হয়ে পড়ছে। কারন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোনো ভূমিহীন পরিবারকে আশ্রয়ের ব্যবস্থা না করে তাদের উচ্ছেদ করা যাবে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ৮টি পরিবার এখনও তাদের নতুন ঠিকানায় যায় নি। বরং যেসব পরিবার চলে গেছে তারা আবার ওই জায়গার আশেপার্শ্বে ফিরে এসে বসতি স্থাপনের চেষ্টা করছে। মাঠের উত্তর পার্শ্বে এখনও কালাম ফকির, নাজমা বেগম, লিটন, রংগিলা বেগম, পারভীন, মনিরুল ইসলাম, জোসনা বেগমসহ ৮টি পরিবার এখন তাদের নির্ধারিত জায়গা আউড়িয়ায় যায়নি। মাঠের দক্ষিন পার্শ্বে স্থানীয় আকবর মিয়া (৩০) নামে এক ব্যক্তি গ্রীলের দোকান গড়ে তুললেও বর্তমানে মাঠের মধ্যে টিনের চালা দিয়ে ব্যবসা করছে। মাঠের বসার জন্য যে বেঞ্চ তৈরী করা হয়েছে তার ওপর লোহা, ষ্টিল ও প্লেন সিট দিয়ে তৈরী জানালার গ্রিল রেখেছেন এবং ওয়েল্ডিং-এর কাজ করে থাকে। মাঠের পূর্ব-দক্ষিন কোনায় পবিত্র বোসসহ ৪টি পরিবার বসতি গড়ে তুলেছে। এছাড়া মাঠের তিন পার্শ্বে বিভিন্ন পরিবার মাঠর মধ্যে প্রতিনিয়ত জ্বলানি কাঠসহ ময়লা-অবর্জনা ফেলে। এছাড়া চলছে গরু-ছাগল ও হাঁস মুরগির চাষ। এখানে পানি নিস্কাষনের ব্যবস্থা না থাকায় তারা কৃত্রিমভাবে জলাবদ্ধতা করে রাখে।
মাঠের পার্শ্বের বাসিন্দা শিক্ষক মেরাজ খান জানান, প্রতিদিন শিশু সন্তানকে নিয়ে খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য আসলেও আবর্জনা-ময়লা ও গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগির কারণে মাঠে খেলাধুলার কোনো পরিবেশ নেই।
নড়াইল একুশ উদযাপন পর্ষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েদ আলী শান্ত বলেন, প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারীর সন্ধ্যায় এ মাঠে লাখো মোমবাতি জ্বালিয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণ করা হয়। দুঃখ জনক হলো ৬ একরের এ মাঠটি দিন দিন বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এখানে একটি মিনি ষ্টেডিয়াম হলেও তার চার পার্শ্বের বেহাল অবস্থা। বিষয়টি প্রশাসনের নজর দেওয়া জরুরি।
স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজের ঠিকাদার শরীফ ইমদাদুল ইসলাম জানান, গত এক মাস পূর্বে সদর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ষ্টেডিয়ামটি বুঝে দেয়া হয়েছে। তবে বেশ কয়েকটি ভূমিহীন পরিবার ষ্টেডিয়াম এলাকা থেকে চলে না যাওয়ার জন্য ৫টি বেঞ্চ এখনও তৈরী করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোষাধ্যক্ষ ও ষ্টেডিয়াম এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রশিদ মন্ন বলেন, মাঠের বেহাল দশার কথা স্থানীয় এমপিকে বললেও তিনি কোনো বরাদ্দ দেননি। এখনও বেশ কিছু ভূমিহীন পরিবার এখানে রয়ে গেছে। এসব কারনে এ মাঠে খেলাধুলার পরিবেশ গড়ে উঠছে না।
জেলা ফুটবল দলের কোচ কার্ত্তিক দাস বলেন, এ মাঠের চারপার্শ্বে দখলদার কারণে মাঠে খেলাধুলা করার কোনো পরিবেশ নেই। কোনো খেলা হলে দর্শকদের দাড়াবার কোনো জায়গা নেই। এছাড়া মাঠের মধ্যে সার্বক্ষনিকভাবে গরু-ছাগল বেঁধে রাখা হয় এবং স্থানীয় বাসিন্দরা মলমূত্র ত্যাগ করে পরিবেশ নষ্ট করে রাখে।
সদর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা সেলিম জানান, স্টেডিয়ামের উত্তর পার্শ্বে কয়েক ভূমিহীন পরিবারকে নোটিশ করা হলেও তাদের জন্য নির্ধারিত জায়গা আউড়িয়ায় যায়নি। মাঠর মধ্যে কেউ দোকান করে থাকলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই নেয়া হবে। আমি নিজেই সরেজমিনে স্টেডিয়ামটি দেখতে যাব। এছাড়া এখানে একজন কেয়ারটেকার রাখার চিন্তভাবনা চলছে। সামগ্রিক বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।