নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে নড়াইল ভলান্টিয়ার্স

0
25

এমএসএ

সাম্যের গান গাই-/আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!/বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী /অর্ধেক তার নর। পুরুষ-স্ত্রীর ভেদাভেদ ভুলে বাঙালীদের সাম্যের পথে চলবার আহবান জানিয়েছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তবে তাঁর এই বাণী কতটা দেশের মানুষের কানে পৌছেছে একথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সর্বস্তরে নারীরা এগিয়ে গেলেও এখনো এই পুরুষশাসিত সমাজে তারাই বেশি নিগৃহীত, নিষ্পেষিত। এদেশের বেশিরভাগ নারীদের জীবনযুদ্ধ করে দিন পার করতে হয়। তবে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে এগিয়ে আসছে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো। নারীদের সাম্য ফিরিয়ে দিতে ও নারী-শিশু নির্যাতন রোধে কাজ শুরু করেছে নড়াইল ভলান্টিয়ার্স।

নড়াইলে নারী নির্যাতনের হার কমাতে নড়াইল ভলান্টিয়ার্সের পক্ষ থেকে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নির্যাতিত নারী ও শিশুর পাশে থাকতে সংকল্পবদ্ধ হয়েছেন নড়াইলের এই একদল তরুণ। নড়াইলের দ্বারে দ্বারে গিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবে। বাল্যবিবাহ রোধেও কাজ করে যাবে সামাজিক সংগঠনটি জানিয়েছেন নড়াইল ভলান্টিয়ার্সের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সামাজিক চলচ্চিত্র নির্মাতা মোঃ সাদাত রহমান সাকিব। সংঘটনের সদস্যরা নড়াইলের প্রতি ঘরে গিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতনের জরিপ করতে আগ্রহী এবং কাঙ্খিত সমাধানের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে৷ নড়াইল ভলান্টিয়ার্স কর্তৃক ঘরে ঘরে স্টিকার লটকানো থাকবে “এই বাসাটি নারী নির্যাতন মুক্ত”। হেল্পলাইনের পাশাপাশি সংঘটনটি নিজেদের ফোন নাম্বার রেখে যাবে যাতে ভবিষ্যতে কোন বিপদগ্রস্ত নিরীহ নারী তাদের কথা জানাতে পারে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি নড়াইল ভলান্টিয়ার্সের প্রধান কার্যালয়ে প্রাথমিক আলোচনার আয়োজন করে নারী নির্যাতন প্রতিরোধের বিশেষ একটি টিম গঠন করা হয়। এসময় সংঘটনটি সকলের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতা কামনা করে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে মহিলা পরিষদের বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে আসে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে মোট ৯৪২টি। এর মধ্যে ১৮২ জন নারী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। শুধু ধর্ষণ করেই ওরা ক্ষান্ত হয়নি। প্রমাণ আড়াল করতে ৬৩ জনকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। এছাড়া মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ৩ হাজার ৯১৮ জন নারী ও কন্যা।

১৪টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৮ সালের জানুয়ারি-ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২৮ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়, শ্লীলতাহানীর শিকার হয়েছেন ৭১ জন, ১৪৬ জন হয়েছেন যৌন নির্যাতনের শিকার। এসিড নিক্ষেপে ১৯ জন নারীর মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রমণে ৭৩ জন অগ্নিদগ্ধের মধ্যে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৪৫টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জাননো হয়, গত বছরে ৪১ জন নারী ও শিশুকে পাচার করা হয় যার মধ্যে ১৫ জনকে পতিতালয়ে বিক্রি করা হয়েছে। ৪৮৮ জন নারী ও শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। ৩৯ জনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ২১২ জন নারী যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের ভেতর ১০২ জনকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮৭ জন গৃহপরিচারিকা। এর মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ৫৮ জনকে এবং নির্যাতনের কারণে ৪ জন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। ১৭১ জনকে উত্ত্যক্ত করা হয়েছে যার মধ্যে ১৪ জন আত্মহত্যা করেছেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ১২ হাজার ৫৩০ জন নারী নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে একটি জরিপে দেখা যায়, ৬৫ শতাংশ নারী স্বামীর মাধ্যমে শারীরিক নির্যাতন, ৩৬ শতাংশ যৌন নির্যাতন, ৮২ শতাংশ মানসিক এবং ৫৩ শতাংশ নারী স্বামীর মাধ্যমে অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

দেশের সংবাদপত্রের একটি প্রতিবেদনে উঠে আসে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে মোট ৬৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ধর্ষণ ৪৮টি ও ১৯টি সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।

সমাজে ক্রমশই নারী ও শিশুর প্রতি নির্যাতন বেড়েই চলেছে। নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে সামনে এগিয়ে না আসলে এই পরিস্থিতি আরো বিনাশের দিকে অগ্রসর হবে।