৫২’র ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু

795
209

এমএসএ

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুরু থেকেই ছিলেন তৎপর ও সক্রিয়। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চে নির্ধারিত কর্মসূচি (ধর্মঘট) পালন করতে গিয়ে ভাষা আন্দোলনের পথিকৃৎদের সাথে আটক হন তরুণ শেখ মুজিব। ছাত্রসমাজের তীব্র প্রতিবাদের মুখে ১৫ মার্চ শেখ মুজিবসহ অন্য ছাত্র নেতাদের মুক্তি দেয়া হয়। ভাষা আন্দোলনে অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক চিন্তার পূর্ণবিকাশের প্রবর্তন ঘটে। ১৯৫০ সালের জানুয়ারি মাসের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানের পূর্ব পাকিস্তান আগমনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী মুসলিম লীগের ঢাকায় দুর্ভিক্ষবিরোধী মিছিলে শেখ মুজিবুর রহমান আটক হন। এঘটনায় তার দুই বছর জেল হয়েছিল। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিন যখন আবার উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে ভাষা সৈনিকদের সাথে বঙ্গবন্ধুও জেল থেকে প্রতিবাদ করেন। সেখান থেকে তিনি ২১ ফেব্রুয়ারিকে রাষ্ট্রভাষার দাবী আদায়ের দিবস হিসেবে পালনের আহবান জানান। অনশনের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিব তাঁর প্রতিবাদ চালিয়ে যান। বঙ্গবন্ধুর লেখা “অসামপ্ত আত্মজীবনী” গ্রন্থের আলোকে ৫২’র ভাষা আন্দোলনের দিনগুলির কথা তুলে ধরার প্রয়াস করা হলোঃ

১৯৫১ সালে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানের মৃত্যুর পর খাজা নাজিমউদ্দীন পাকিস্তানের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেন, যে ভুল খাজা নাজিমুদ্দীন করেছিলেন তার খেসারত বাঙালীদের দিতে হবে। বিশেষ করে যখন ১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাসে পল্টন ময়দানে এক জনসভায় নাজিমুদ্দীন ঘোষণা করলেন, “উদুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে।” বঙ্গবন্ধু তখন জেলে। নিজের আত্মজীবনীতে তিনি বিষয়টি তুলে ধরেন, খাজা নাজিমউদ্দীন “১৯৪৮ সালে পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে যে ওয়াদা করেছিলেন, সে ওয়াদার খেলাপ করলেন। ১৯৪৮ সালের রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সাথে চুক্তি করেছিলেন এবং নিজেই পূর্ব বাংলা আইনসভায় প্রস্তাব পেশ করেছিলেন যে, পূর্ব বাংলার অফিসিয়াল ভাষা বাংলা’ হবে। তাছাড়া যাতে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হয়, তার জন্য কেন্দ্রীয় আইনসভায় কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করা হবে। এ প্রস্তাব পূর্ব বাংলার আইনসভায় সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। যে ঢাকায় বসে তিনি ওয়াদা করেছিলেন সেই ঢাকায় বসেই উল্টা বললেন।”

নাজিমউদ্দীনের ঘোষণা বাঙলীরা মেনে নেয়নি। ক্ষোভের মধ্য দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ, ছাত্র প্রতিষ্ঠান ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সকলেই এর তীব্র প্রতিবাদ করে উঠলো। বঙ্গবন্ধু তখন বন্দী অবস্থায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এসময় ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী মোহাম্মদ তোয়াহা ও অলি আহাদ বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে আসেন।

ভাষা আন্দোলনে মোহাম্মদ তোয়াহা ও অলি আহাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ প্রতিবাদ সভা, সাধারণ ধর্মঘট ডাকলে পুলিশ সেদিন ছাত্রদের বাধা দেয় এবং অনেককে গ্রেফতার করে। গ্রেপ্তারকৃত নেতা শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, শওকত আলি, কাজী গোলাম মাহবুবদের মধ্যে অলি আহাদও ছিলেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকার কারণে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত করা হয়। মোহাম্মদ তোয়াহা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের ভিপি। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ব পাকিস্তানে এলে তোয়াহা তাকে বাংলার ভাষা চাহিদা সম্পর্কে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। এছাড়া সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদে তিনি যুব লীগের সংবাদদাতা ছিলেন।

হাসপাতালে বঙ্গবন্ধু তোয়াহা ও আহাদকে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে বলেন। অলি আহাদ ও তোয়াহা জানালেন, “আবার ষড়যন্ত্র চলছে বাংলা ভাষার দাবিকে নস্যাৎ করার। এখন প্রতিবাদ না করলে কেন্দ্রীয় আইনসভায় মুসলিম লীগ উর্দুর পক্ষে প্রস্তাব পাস করে নেবে। নাজিমুদ্দীন সাহেব উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার কথাই বলেন নাই, অনেক নতুন নতুন যুক্তিতর্ক দেখিয়েছেন” (অসমাপ্ত আত্মজীবনী)।

বঙ্গবন্ধু তাদের পরের দিন রাতে আসতে বলেন। সেদিন ২১শে ফেব্রুয়ারির দিনে রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন ও সংগ্রাম পরিষদ গঠন করার কথা ঠিক হয়। ফেব্রুয়ারি থেকেই জনমত সৃষ্টির কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বললেন, “আমিও আমার মুক্তির দাবি করে ১৬ই ফেব্রুয়ারি থেকে অনশন ধর্মঘট শুরু করব। আমার ছাব্বিশ মাস জেল হয়ে গেছে।” তিনি আরো বলেন, “মহিউদ্দিন জেলে আছে আমার কাছে থাকে। যদি সে অনশন করতে রাজি হয়, তবে খবর দেব। তার নামটাও আমার নামের সাথে দিয়ে দিবে। আমাদের অনশনের নোটিশ দেওয়ার পরই শওকত মিয়া প্যামপ্লেট ও পোস্টার ছাপিয়ে বিলি করার বন্দোবস্ত করবে।”

মহিউদ্দিন আহমেদ ছিলেন ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী। এছাড়া তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে সরকার তাঁকে ঢাকা জেলে পাঠিয়ে দেয়। কারণ পাকিস্তানি সরকার বুঝতে পেরেছিল হাসপাতালে শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতির মেরুকরণ করছিলেন। জেলে এসে মহিউদ্দিনকে সব খুলে বলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি অনশণ ধর্মঘট করতে রাজি হলেন। আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু লেখেন, “আমরা দুইজনে সরকারের কাছে পহেলা ফেব্রুয়ারি দরখাস্ত পাঠালাম। যদি ১৫ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমাদের মুক্তি দেওয়া না হয় তাহা হলে ১৬ই ফেব্রুয়ারি থেকে অনশন ধর্মঘট করতে শুরু করব।” জেল কর্তৃপক্ষ অনশন ধর্মঘট না করতে অনুরোধ করলে বঙ্গবন্ধু বলেন, “ছাব্বিশ-সাতাশ মাস বিনাবিচারে বন্দি রেখেছেন। কোনো অন্যায়ও করি নাই । ঠিক করেছি জেলের বাইরে যাব, হয় আমি জ্যান্ত অবস্থায় না হয় মৃত অবস্থায় যাব। “Either I will go out of the jail or my deadbody will go out.”

জেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সরকারকে জানিয়ে দেয়। চারিদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু জীবনীতে উল্লেখ করেন, “এদিকে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদও গঠন করা হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারির দিনও ধার্য করা হয়েছে। কারণ, ঐদিনই পূর্ব বাংলার আইনসভা বসবে। কাজী গোলাম মাহাবুবকে সংগ্রাম পরিষদের কনভেনর করা হয়েছিল। ১৯৪৮ সালে ছাত্ররাই এককভাবে বাংলা ভাষার দাবির জন্য সংগ্রাম করেছিল। এবার আমার বিশ্বাস ছিল, জনগণ এগিয়ে আসবে। কারণ জনগণ বুঝতে শুরু করেছে যে, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা না করতে পারলে তাদের দাসত্বের শৃঙ্খল আবার পরতে হবে। মাতৃভাষার অপমান কোনো জাতি সহ্য করতে পারে না। পাকিস্তানের জনগণের শতকরা ছাপ্পান্নজন বাংলা ভাষাভাষী হয়েও শুধুমাত্র বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা বাঙালিরা করতে চায় নাই। তারা চেয়েছে বাংলার সাথে উর্দুকেও রাষ্ট্রভাষা করা হোক, তাতে আপত্তি নাই। কিন্তু বাঙালির এই উদারতাটাই অনেকে দুর্বলতা হিসাবে গ্রহণ
করে নিয়েছে। এদিকে বাঙালিরা অনুভব করতে শুরু করেছে যে, তাদের উপর অর্থনৈতিক দিক দিয়ে, ব্যবসা-বাণিজ্যসরকারি চাকরিতেও অবিচার চলছে। পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে রাজধানী হওয়াতে বাঙালিরা সুযোগ-সুবিধা হতে বঞ্চিত হতে শুরু করেছে পূর্ব পাকিস্তান।”

জেলের ভেতর বঙ্গবন্ধু ও মহিউদ্দিন সংকল্পবদ্ধ হয়ে অনশন ধর্মঘট করার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ঢাকা জেল থেকে তাদের ফরিদপুর জেলে আনা হলো। সেখানে তারা দুদিন ধরে অনশন চালিয়ে গেলেন। বঙ্গবন্ধু তখন নানা অসুখে ভুগছিলেন, মহিউদ্দিনের প্লুরিসিস রোগে আক্রান্ত ছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হবার জন্য তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। চার দিনের মাথায় কারা কর্তৃপক্ষ নাকে নল দিয়ে জোরপূর্বক তাদের খাবার দিতে লাগলেন। নিজ সংকল্পে অটুট ছিলেন বঙ্গবন্ধু ও মহিউদ্দিন। দিন পেরিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারি আসে।

২১শে ফেব্রুয়ারি উদ্বেগে দিন কাটাতে লাগলেন বঙ্গবন্ধু। ফরিদপুরে হরতাল নিয়ে শিক্ষার্থীরা শোভাযাত্রা করে জেলগেটে এসে শ্লোগান দিতে থাকে, “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, বাঙালিদের শোষণ করা চলবে না, শেখ মুজিবের মুক্তি চাই, রাজবন্দিদের মুক্তি চাই…” মহিউদ্দিন আহমেদের নাম শ্লোগানে না থাকায় মনকষ্ট পেলেন শেখ মুজিব। সেদিন রাতে ঢাকার খবর পেলেন তিনি। কষ্টটা আরো বেড়ে গেলো। তিনি লেখেন, “ভীষণ চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়লাম। কত লোক মারা গেছে বলা কষ্টকর। তবে অনেক লোক গুলি খেয়ে মারা গেছে শুনেছি…খুব খারাপ লাগছিল, মনে হচ্ছিল চিন্তাশক্তি হারিয়ে ফেলেছি। গুলি করার তো কোন দরকার ছিল না। হরতাল করবে, সভা ও শোভাযাত্রা করবে, কেউ তো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায় না। কোনো গোলমাল সৃষ্টি করার কথা তো কেউ চিন্তা করে নাই। ১৪৪ ধারা দিলেই গোলমাল হয়, না দিলে গোলমাল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।”

শেখ মুজিব জানান, “মাতৃভাষা আন্দোলনে পৃথিবীতে এই প্রথম বাঙালিরাই রক্ত দিল। দুনিয়ার কোথাও ভাষা আন্দোলন করার জন্য গুলি করে হত্যা করা হয় নাই…১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলেও গুলি না করে গ্রেফতার করলেই তো চলত। আমি ভাবলাম, দেখব কি না জানি না, তবে রক্ত যখন আমাদের ছেলেরা দিয়েছে তখন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা না করে আর উপায় নাই। মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে। বাংলাদেশের মুসলিম লীগ নেতারা বুঝলেন না, কে বা কারা খাজা সাহেবকে উর্দুর কথা বলালেন, আর কেনই বা তিনি বললেন! তারা তো জানতেন, উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার কথা বলে মিস্টার জিন্নাহর মত নেতাও বাধা না পেয়ে ফিরে যেতে পারেন নাই । সেখানে খাজা সাহেব এবং তার দলবলের অবস্থা কি হবে? একটা বিশেষ গোষ্ঠী—যারা ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করতে শুরু করেছেন, তারাই তাকে জনগণ থেকে যাতে দূরে সরে পড়েন তার বন্দোবস্ত করলেন। সাথে সাথে তার সমর্থক নূরুল আমিন সাহেবও যাতে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান সে ব্যবস্থাও করালেন। কারণ ভবিষ্যতে এই বিশেষ গোষ্ঠী কোনো একটা গভীর ষড়যন্ত্রের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। যদিও খাজা সাহেবের জনসমর্থন কোনোদিন বাংলাদেশে ছিল না।”

এদিকে মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ এমএলএ, খয়রাত হোসেন এমএলএ, খান সাহেব ওসমান আলী এমএলএ এবং মোহাম্মদ আবুল হোসেন অসংখ্য ছাত্র ও কর্মীদের গ্রেফতার করেছে। কিছুদিন পর মওলানা ভাসানী, শামসুল হক ও বহু আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীকে আটক করা হয়। তখনও অনশন চালিয়ে যাচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু ও মহিউদ্দিন। শরীরের অবস্থা আরো আশংকাজনক হয়ে পড়ে। ২৭ তারিখে রেডিওগ্রামে ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অফিস থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির অর্ডার আসে। মহিউদ্দিন বঙ্গবন্ধুকে ডাবের পানি খাইয়ে তার অনশন ভেঙে দেন। মহিউদ্দিনের মুক্তির অর্ডার আসেনি এটা ভেবে আরো কষ্ট পেতে থাকেন বঙ্গবন্ধু। ২৮ তারিখে খবর পেয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের বাবা শেখ লুৎফর রহমান তাকে দেখতে আসেন। বাবার মুখে মহিউদ্দিনের মুক্তির সংবাদে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন বঙ্গবন্ধু। ২৯ তারিখে ভাষা সৈনিকদের আত্মত্যাগ ও বাংলাকে বুকে অধিষ্ঠিত করে বাঙালি জাতির অধিকার ও স্বাধীনতার সংকল্পে ফরিদপুর জেল ছাড়েন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।