ডেস্ক/এমএসএ
প্রতিদিন সড়কে নিহত হচ্ছে সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষ। অনেকে প্রাণে বেঁচে গেলেও আজীবনের জন্য পঙ্গুত্বকে বরণ করে নিচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনার পেছনের কারণগুলির মধ্যে সব থেকে প্রধান সমস্যাটি হল- সড়কের নিয়ম, আইনশৃঙ্খলা অমান্য করা। আর সেটা কমবেশি সকলেই করছেন- যানবাহন মালিক-শ্রমিক থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী-কর্তৃপক্ষ, পথচারী, যাত্রী কিংবা নিজস্ব যান চালক। যেমন- ফুটওভার ব্রীজ থাকা সত্ত্বেও পথচারী রাস্তা পার হচ্ছেন; মোটরসাইকেল চালক হেলমেট ছাড়া, গাড়ি চালক সীটবেল্ট ছাড়া দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন; বাস-ট্রাকের মালিকেরা প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা ছাড়াই শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছেন। বাস-ট্রাক চালকের স্থলে কখনো কন্ডাকটার কখনো হেল্পার গাড়ী নিয়ে ছুটছে। এদিকে কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সড়কে নির্বিঘ্নে মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ীর সমাগম। দুর্ঘটনার পর লাইসেন্স ছাড়া গাড়ী ও চালকের দেখা মেলে।
গত ১৯শে মার্চ এমনই এক অনিয়মের জন্য সড়কে বাস চাপায় প্রাণ যায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহাম্মেদ চৌধুরীর। সিসি ফুটেজে দেখা যায়, নর্দ্দা এলাকায় জেব্রা ক্রসিং এর কিছুটা আগে রাস্তার মধ্য থেকে দ্রুতগামী সুপ্রভাত তাকে চাপা দিয়ে হত্যা করে। রাস্তায় পড়ে থাকে আবরারের নিথর দেহ। যে আবরার নিরাপদ সড়কের দাবীতে শিক্ষার্থীদের সাথে আওয়াজ তুলেছিল সে সড়কে মর্মান্তিক মৃত্যুর শিকার হলো। ব্যস্ত রাস্তায় চলন্ত গাড়িতে উঠতে গিয়ে আবরার কি কোন ভুল করেছিল? নাকি বাসের বেপরোয়া চালনার জন্য আবরারের প্রাণ গেল?
গতকাল বুধবার (২৭ মার্চ) তদন্তে আরো অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-উত্তর) মোঃ মশিউর রহমান সংবাদমাধ্যমে জানান, বাস চাপায় বিইউপি’র শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামী সু-প্রভাত বাসের কন্ডাক্টর ইয়াছিন আরাফাত ও হেলপার ইব্রাহিমকে গ্রেফতারের পর বুধবার এ মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তদন্ত কর্মকর্তা তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ড চেয়ে হাজির করেন। শুনানী শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, এর আগে দায়ের করা মামলার আসামী বাসের চালক সিরাজুল ইসলামকে আটক করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাদ করা হয়। সেখানে জানা যায়, গত ১৯ মার্চ ভোরে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক হতে ছেড়ে আসা সু-প্রভাত পরিবহনটির চালক সিরাজুল ইসলাম গুলশান থানাধীন শাহাজাদপুর বাঁশতলা অতিক্রম করার সময় মিরপুর আইডিয়াল গার্লস ল্যাবরেটরী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সিনথীয়া সুলতানা মুক্তাকে চাঁপা দিয়ে গুরুতর জখম করে। ওই ঘটনায় সু-প্রভাত পরিবহনের যাত্রীরা চালক সিরাজুলকে আটক করে ট্রাফিক পুলিশে হস্তান্তর করে। এসময় উপস্থিত জনতা বাসের ক্ষতি সাধন করতে পারে এজন্য বাস মালিকের নির্দেশে দ্রুত ঘটনাস্থল হতে বাস চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় নর্দ্দায় বিইউপি’র ছাত্র আবরারকে বাস চাপা দিয়ে পালিয়ে যায় বাসের কন্ডাক্টর ইয়াছিন আরাফাত।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা মশিউর রহমান আরো বলেন, বাস মালিক ননী গোপাল সরকারের নির্দেশে কন্ডাক্টর ইয়াছিন বেপরোয়া গতিতে বাসটি চালিয়ে চাপা দিয়ে আবরারকে হত্যা করে। ইয়াছিনের কোনধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্স বা রুটপারমিট ছিলনা। আবরারকে হত্যা করার পরে বাসটিকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় ইয়াছিন। এরপর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চাঁদপুরের শাহরাস্তি থানাধীন একটি ইটের ভাটা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ডিবি (উত্তর) এর ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর মধ্যবাড্ডা এলাকা থেকে সু-প্রভাত বাসের হেলপার ইব্রাহিমকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রশিক্ষণ ছাড়া চালক নিয়োগ, লাইসেন্স বিহীন চালককে যানবাহন চালানোর নির্দেশ, সড়কের আইনশৃঙ্খলা অমান্য, দ্রুতগতিতে গাড়ী চালানো এমন অগণিত কারণে প্রতিনিয়ত হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সড়কে আবরারদের মৃত্যুর জন্য দায়ী একাধিক কারণ, একাধিক অনিয়ম।