এমএসএ
“ওরা তোমাকে বের করে দেবার আগেই তুমি ট্রেন ছেড়ে নেমে আসার প্রয়াস রাখ”- ক্রিস ইভানস। উলভারিনকে ভালোলাগার পেছনে যেমন হিউ জ্যাকম্যানের অভিনয় ছিল, তেমনি ক্যাপ্টেন আমেরিকা চরিত্রটিকে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় করার পেছনে ক্রিসের নাম সবার আগে উঠে আসবে। ২০১৮ সালে ক্রিস ইভানস যখন ক্যাপ্টেন আমেরিকা চরিত্র থেকে তার অবসরের সিদ্ধান্তের কথা জানালেন, তখন অনেক ভক্তের হৃদয় ভেঙে খণ্ডবিখণ্ড হয়েছে। বয়সই বা কত হয়েছে ক্রিসের, ৩৭। আর ক্যাপতো বলেছিলই, “আমি এটা সারাদিন ধরে করতে পারি” (I can do this all day)। তবে কেন এই নিষ্ঠুর সঙ্কল্প তার। অভিনয় ছেড়ে পরিচালনায় মনোনিবেশ করতে বেশি আগ্রহী জানান ক্রিস। “এ্যাভেঞ্জারস এন্ডগেম (২০১৯)” দিয়ে ক্যাপের চরিত্রটির ইতি টানতে চলেছেন ক্রিস। এখন পর্যন্ত ইভানস তিনটি কমিক বই এর হিরোর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন- ক্যাপ্টেন আমেরিকা, জেনসেন (দ্যা ল্যুজারস ২০১০), জনি স্টর্ম (ফ্যান্টাস্টিক ফোর ২০০৫ ও ২০০৭)। কমিকের ভিলেন লুকাস লী (স্কট পিলগ্রীম ভার্সেস দ্যা ওয়ার্ল্ড ২০১০) চরিত্রেও তাকে দেখা গিয়েছে।
স্টিভ রজারস (ক্যাপ্টেন আমেরিকা) ভূমিকায় ক্রিস অভিনয় করেছেন ১১টি চলচ্চিত্রেঃ ক্যাপ্টেন আমেরিকাঃ দ্যা ফার্স্ট এ্যাভেঞ্জার (২০১১), দ্যা এ্যাভেঞ্জারস (২০১২), থরঃ দ্যা ডার্ক ওয়ার্ল্ড (২০১৩), ক্যাপ্টেন আমেরিকাঃ দ্যা উইন্টার সোলজার (২০১৪), এ্যাভেঞ্জারসঃ এজ অব আল্ট্রন (২০১৫), এ্যান্টম্যান (২০১৫), ক্যাপ্টেন আমেরিকাঃ সিভিল ওয়ার (২০১৬), স্পাইডার-ম্যানঃ হোমকামিন (২০১৭), এ্যাভেঞ্জারসঃ ইনফিনিটি ওয়ার (২০১৮), ক্যাপ্টেন মারভেল (২০১৯), ও এ্যাভেঞ্জারসঃ এন্ডগেম (২০১৯)।
পরিচালক রুশো ভ্রাতৃদ্বয়ের হাত ধরে যদিও স্টিভ চরিত্রের এক নিখুঁত “ডেভেলপমেন্ট” হয়েছে সত্যি। তবে ক্রিসকে ক্যাপ হিসেবে প্রথম পরিচয় করে দিয়েছিলেন জুরাসিক পার্ক (২০০১) ও অক্টোবর স্কাই (১৯৯৯) খ্যাত পরিচালক জো জন্সটোন। তখন অবশ্য ক্রিস কে জনি থেকে ক্যাপ হিসেবে মেনে নিতে কিছুটা সময় লেগেছে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। “উইন্টার সোলজার” ও “সিভিল ওয়ার” দেখার পর মনে হয়েছে স্টিভ রজার্স শুধু ক্রিসের জন্যই লেখা হয়েছিল। “এ্যাভেঞ্জারস” এর প্রতিটি সিনেমায় তার অভিনয় ছিল প্রাণবন্ত। নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সংলাপ ডেলিভারি সবকিছুতেই দর্শক ও ভক্ত অতি মুগ্ধ।
“এ্যাভেঞ্জারসঃ এন্ডগেম” দিয়ে ক্যাপ চরিত্রের ইস্তাফা দিবেন ক্রিস। দর্শকরা তাকে আর ক্যাপ্টেন আমেরিকা ভূমিকায় দেখবেন না। ইভানসের বড় গুণ ছিল সে তার অভিনয় দিয়ে সকলের মন জয় করতে পেরেছিলেন। “সিভিল ওয়ার” এ যখন সরকার/শিল্ড আয়রন ম্যানের পক্ষ নিয়েছিল, সাধারণ দর্শক মন থেকে ক্যাপকে পছন্দ করেছিল। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে ক্রিসের অভিনয় সকলকে চরিত্রটির কাছে এনেছে। আর তা না হলে “আমেরিকা” শুনলেই তো “নাউজিয়া” (Nausea) চলে আসে। “এন্ডগেম”র পর ক্রিসের ইভানসকে ক্যাপ চরিত্রে আর দেখবে না ঠিকই, তবে যাবার সময় সকলকে কাঁদিয়ে যাবেন ক্রিস। মেনে নিতে কিছুটা কষ্ট হলেও এটাই পরম বাস্তব যে ক্যাপ হয়ে ক্রিস আর ফিরবেন না! কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য “ছাড়পত্র” যথার্থই লিখেছেন, “এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;/জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তুপ-পিঠে চলে যেতে হবে আমাদের।”
হলিউড রিপোর্টার সাইটে দেয়া ক্রিস ইভানসের ইন্টারভিউ থেকে তার সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেইঃ
এন্ডগেম সিনেমার সেট থেকে ক্রিসের শেষ স্মৃতি- শ্যুটিং এর শেষ দিনে খুববেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। আপনার পালিত কুকুর ডজারকে যে নামে ডাকেন- কখনো ডজার, ডজ, আবার বাবা বলেও ডেকে থাকি। কেন ডেকে থাকি জানা নেই। “ক্যাপ্টেন আমেরিকা” সিনেমা থেকে যে সাজসরঞ্জাম বা পোষাক আপনি নিয়েছেন- তারা আমাকে শিল্ড, কাউল (Cowl) দিয়েছে। আমি এবার সম্পূর্ণ স্যুটটি চাইব। আমি আগে কখনো পুরো স্যুটটি ওদের কাছে চাইনি। আপনি যে সময়টাতে পরিভ্রমণ করতে চাইতেন- ৭০ এর দশক। খুব ভালো মিউজিক ছিল সেসময়। যে ইমোজি আপনি লেখায় বেশি ব্যবহার করেন- ?। আপনি সকাল বেলার পাখি না রাতের পেঁচা- রাতের পেঁচা। মার্ভেল সিনেমায় আপনার সব থেকে প্রিয় দৃশ্য- “উইন্টার সোলজার” সিনেমার এলিভেটরে একশন দৃশ্য। ছোটবেলায় আপনার পছন্দের সুপার হিরো- ব্যাটম্যান।