নিউজ ডেস্ক
অগ্নিকাণ্ড রোধ এবং এর ক্ষয়-ক্ষতি এড়াতে বহুতল ভবন মালিকদের জন্য বছরের শুরুতে দমকল বাহিনীর ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট গ্রহণ, বিল্ডিং কোড অনুসরণসহ ১৫টি নির্দেশনা প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (১ এপ্রিল) সকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে সভাপতিত্বকালে তিনি এসব নির্দেশনা দেন। বৈঠকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। তিনি বলেন, শিল্প কারখানার ক্ষেত্রে ফায়ার ক্লিয়ারেন্সটা প্রতিবছর নবায়ন করতে হয়। কিন্তু আমাদের বহুতল বাণিজ্যিক ভবনের ক্ষেত্রে এই নিয়ম নেই। কাজেই এটি একটু পরীক্ষা করে দেখা যে, বছর বছর এটি নবায়ন করা যায় কি না। যদি করা যায় তাহলে বাধ্য হয়েই সবাইকে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাটা নিতে হবে। যেমন, ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে এখন এই কারণে আগুন লাগার হার অনেকটাই কমেছে। তিনি বলেন, খুব কঠোরভাবেই এই আইনটি প্রয়োগ করা হবে। এজন্য পূর্তমন্ত্রী জানান- ঢাকা শহরে তাঁদের ২৪টি দল কাজ করছে। যারা এই সংক্রান্ত বিষয়ে বহুতল ভবনগুলোর ব্যাপারে রিপোর্ট দেবে এবং যেসব স্থানে এসব নতুন সুযোগ-সুবিধা ইনস্টল করা সম্ভব সেখানে করতে হবে নচেৎ ভবন ভেঙ্গে ফেলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাঃ
১. বহুতল ভবন তৈরী করার ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস সাধারণত একটি ক্লিয়ারেন্স দেয় সেক্ষেত্রে এখন ক্লিয়ারেন্সই যথেষ্ট নয় এটি পরিদর্শন করে এখানে বহুতল ভবন নির্মাণযোগ্য কি না তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। ২. ফায়ার সেফটির বিষয়টি মিয়মিত অনুসন্ধান করা এবং শিল্প কারখানার মত প্রতি বছর এটি নবায়ন করা যায় কিনা, বছর বছর তা দেখা।
৩. বিল্ডিং কোড অনুসরণ করা। ৪. নিয়মিত ফায়ার ড্রিল করা (অগ্নিনির্বাপণ মহড়া করা), যেটি প্রতি তিনমাসে একবার হতে পারে। ৫. অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে দেখা যায় ধোঁয়াতেই অধিকাংশ মানুষ শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যায়। কাজেই পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এই স্মোক কন্ট্রোলের যে ব্যবস্থা রয়েছে তা অনুসরণ করা। ৬. আগুন লাগলে পানির অভাব দূর করার জন্য রাজধানীর যেখানে যেখানে সম্ভব জলাশয় বা জলাধার তৈরী করা।
৭. রাজধানীর ধানমন্ডী, গুলশানসহ এখান যেসব লেক রয়েছে সেগুলো সংরক্ষণ করা। ৮. বাংলাদেশে আগুন লাগলে ৩০ তলা পর্যন্ত যাওয়ার জন্য বর্তমানে তিনটি সুউচ্চ মই (ল্যাডার) রয়েছে। এই সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ৯. ভবন নির্মাণের সময় স্থপতিরা যেন আমাদের পরিবেশ এবং বাস্তবতার নিরীখে বহুতল ভবনের নকশা প্রণয়ন প্রণয়ন করে। বর্তমানের ম্যাচ বক্সের আদলে দরজা-জানালা ব্লক করে পুরো কাঁচ ঘেরা দিয়ে কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভবন করা হচ্ছে। সেভাবে না করে বারান্দা বা জানালা নির্মাণ করা। যেন কোন বিপদ ঘটলেও শ্বাস নেওয়ার জন্য পর্যান্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা থাকে।
১০. ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে শতভাগ ফায়ার এক্সিট নিশ্চিত করা। ১১. ইলেকট্রকি সিস্টেম ডোর ফায়ার এক্সিটে থাকবে না, সেগুলো ওপেন দরজা এবং ম্যানুয়ালি নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। ১২. দমকল বাহিনীর সেফটি গিয়ারে তারপলিন সিস্টেম এবং নেট সিস্টেম অন্তর্ভূক্ত করা। যাতে কোথাও আগুন লাগলে মানুষ তার মাধ্যমে ঝুলে ঝুলে নেমে যেতে পারে।
১৩. হাসপাতাল এবং স্কুলগুলোতে রুমের বাইরে বারান্দা বা খোলা জায়গা রাখা। ইন্টেরিয়ার ডিজাইনাররা অনেক সময় এগুলো ব্লক করে দেয়, কাজেই সেটা যেন না হয়। ১৪. আগুনের সময় যেন লিফট ব্যবহার না করা, এজন্য সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণ প্রদান। এবং ১৫. প্রতিটি ভবনে কম করে হলেও দুটি এক্সিট পয়েন্ট যেন থাকে।