স্টাফ রিপোর্টার
দূরসম্পর্কের আত্মীয়তার সূত্র ধরে নড়াইলের ধোন্দা গ্রামের কৃষক আকমল শেখকে (৫০) অপহরণের অভিযোগে লুৎফর রহমানকে (৩৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার)। লুৎফর পঞ্চগড়ের বোদা থানার পাঁচপির মেলাগ্রামের আছির উদ্দিনের ছেলে।
পুলিশ সুপার জানান, ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে নড়াইল সদর উপজেলার ধোন্দা গ্রামের আকমল শেখ অপহরণ মামলার আসামি লুৎফরকে গত রোববার (৭ এপ্রিল) পঞ্চগড়ের নিজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ অপহরণের ঘটনায় আটজনের সম্পৃক্ততার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
জানা যায়, দুরসম্পর্কের আত্মীয়তার সূত্র ধরে নড়াইলের ধোন্দা গ্রামের কৃষক আকমল শেখের বাড়িতে পাঁচ বছর ধরে আসা-যাওয়া করেন অপহরণের মূলহোতা আনিস (৪৫)। পরিচয়ের শুরুতেই আনিস বাড়ির ঠিকানা দেয় রংপুর। পাঁচ বছরের মধ্যে আকমলদের বাড়িতে আনিস বেড়াতে এসেছেন অনেকবার। এছাড়া মোবাইল ফোনেও যোগাযোগ হত তাদের। সেই ঘনিষ্ঠ লোকটিই (আনিস) গত ২৯ মার্চ আকমলকে অপহরণ করে।
আকমল শেখের স্ত্রী পলি বেগম বলেন, প্রায় পাঁচ বছর আগে আনিস তার এক দুলাভাইয়ের সন্ধানে আসেন আমাদের এলাকায়। সেই সময় আমার স্বামীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে আনিস অনেকবার আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসলেও আমরা তার (আনিস) বাড়িতে বেড়াতে যাইনি। বারবার অনুরোধের প্রেক্ষিতে গত ২৯ মার্চ আমার স্বামী (আকমল) নড়াইল থেকে আনিসদের বাড়ি রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। আনিসদের এলাকায় পৌঁছানোর পর বুঝতে পারেন ফাঁদে পড়েছেন তিনি। এক পর্যায়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমার কাছে ২০ লাখ টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা। প্রাথমিক পর্যায়ে গত ৩০ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিকাশের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা পাঠাই। এরপর বিষয়টি পুলিশকে জানালে নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন আমার স্বামীকে উদ্ধারে তৎপর হন। গত ৩১ মার্চ পঞ্চগড়ের বোদা থানার বৈরতি গ্রাম থেকে আমার স্বামীকে উদ্ধার করে নড়াইল পুলিশ।
আকমল শেখ বলেন, গত ২৯ মার্চ যশোর থেকে ট্রেনে চড়ে রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর মোবাইল ফোনে কথা হয় আনিসের সঙ্গে। পরেরদিন (৩০ মার্চ) সকালে লালমনিরহাট পৌঁছালে আনিস আমাকে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে পথ চলতে থাকে। অনেক পথ পাড়ি দেয়ার পর জানতে পারি, রংপুরে নয়; আমাকে পঞ্চগড়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এক পর্যায়ে আনিস তার কথিত বোনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর ছোট টিনের ঘরের মধ্যে কয়েকজন আমাকে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে এবং মারধর করে। এ সময় মোবাইল ফোনে ২০ লাখ টাকা দাবি করে। এরপর আমার পরিবারকে ১০ লাখ, পাঁচ লাখ, সবশেষে তিন লাখ টাকা দেয়ার কথা বলে অপহরণকারীরা। এভাবে দুরসম্পর্কের আত্মীয়তার সূত্র ধরে আমার মতো ভুল যেন কেউ না করেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘প্রযুক্তির মাধ্যমে অপহরণকারীদের অবস্থান সনাক্ত করে অপহৃত আকমলকে পঞ্চগড় থেকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশের তৎপরতা টের পেয়ে অপহরণকারীরা সেই সময় সটকে পড়লেও গত রোববার (৭ এপ্রিল) একজনকে গ্রেফতার করেছি। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
এ বিষয়ে সোমবার প্রেসব্রিফিংয়ে সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) শরফুদ্দীন, সহকারী পুলিশ সুপার (কালিয়া অঞ্চল) রিপন চন্দ্র সরকার, সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন, নড়াইল থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন পিপিএম, এসআই ওহিদসহ পুলিশ কর্মকর্তারা।