স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইলের ক্ষুদে চিত্রশিল্পীরা এঁকেছে দীর্ঘতম ছবি। যার আয়তন (১৬০০ ফুট × ৩ ফুট)= ৪৮০০ বর্গফুট। সেই ছবির ডিজিটাল প্রিন্ট এখন নড়াইল ও যশোরের গ্রামের স্কুলে স্কুলে ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী করে দেখানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২৪টি স্কুলে চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। নড়াইলের শিল্পাঞ্জলি নামে একটি ভ্রাম্যমান অবৈতনিক আর্ট স্কুলের দুই শতাধিক শিশু শিল্পী, যার প্রায় ৩০জন স্থানীয় আদিবাসি কার্তিজ পেপারে মোম রং-এর মাধ্যমে এ ছবি এঁকেছে। তবে ছবি আঁকা এখনও শেষ হয়নি। এখনও চলছে ছবি আঁকার কাজ। শিল্পীর টার্গেট ৩ হাজার ফুট ছবি আঁকা। সম্পূর্ণ নতুন ধারার এবং বৃহৎ এ ছবির উদ্যোক্তা হলেন বরেণ্য শিল্পী এস এম সুলতানের শিষ্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক (অব) চিত্রশিল্পী বিমানেশ বিশ্বাস। তিনি ক্ষুদে শিল্পীদের ছবি আঁকার খাতা, রং, পেন্সিলসহ বিভিন্ন উপকরণ ফ্রি সরবরাহ করে থাকেন। শুধু তাই নয় তাদের খাবারের ব্যবস্থাও করে থাকেন শিল্পীর পরিবার। এসবের সমস্ত খরচই শিল্পী নিজে বহন করেন।
জানা গেছে, চিত্রশিল্পী বিমানেশ বিশ্বাস ২০১৫ সালের মাঝামাঝি শিশুদের জন্য ‘শিল্পাঞ্জলি’ নামে ছবি আঁকার একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে নিজ বাড়ি, শহরের আদিবাসি পাড়া, সদরের কলোড়া ইউনিয়নের গোবরা বাজার এলাকা, নলদীর চর, বড়েন্দার গ্রাম এবং ভদ্রবিলা ইউনিয়নের চন্ডিতলা পালপাড়া এলাকায় তিনি এ স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনা করলেও এখন নিজ বাড়িতেই স্কুল পরিচালনা করছেন। প্রতি শুক্র ও শনিবার তিনি শিশুদের ছবি আঁকা শেখান।
শহরের দিঘির পাড় এলাকার আদিবাসি শিশু চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রুম্পা মালি, শীলা মালি, ২য় শ্রেণির সিপন মালি, শহরের কুরিগ্রাম এলাকার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র অর্পণ, তাবাচ্ছুম, দ্বিতীয় শ্রেণির দৃষ্টি, মোহনা, রাহুল, মাছিমদিয়া এলাকার তৃতীয় শ্রেণির আলিফ জানায়,এ স্কুলে রং-পেন্সিল ও খাতা দেওয়া হয়। প্রতি শুক্র ও শনিবার বিমানেশ স্যারের বাসায় ক্লাস করি এবং খাবার খেয়ে ছবি আঁকি। শিশুদের যত্ন করে খাওয়ানোর কাজটি করে থাকেন শিল্পীর স্ত্রী মমতা বিশ্বাস। শিশুদের ছবি আঁকা শেখানোয় সাহায্য করেন একমাত্র সন্তান ভারতের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেইন্টিং বিভাগে মাস্টার্স করা হীরা বিশ্বাস, নড়াইলের এস এম সুলতান বেঙ্গল চারুকলা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অন্তরা বৈরাগী ও সৌমিত্র মোস্তবী।
চিত্রশিল্পী বিমানেশ বিশ্বাস (০১৭১২-৬৬২৩০৩) জানান, শিশুরা অ্যামেরিকান কার্তিস পেপারে ২০১৬ সালের ২ ডিসেম্বর থেকে এ ছবি আঁকা শুরু করেছে। তার দাবি বর্তমানে এটা বিশ্বের প্রথম বড় ও লম্বা শিশু কিশোর অঙ্কিত চিত্র। শিশুরা নিজের ভাবনায় বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ছবি আঁকছে। যেমন- মুক্তিযুদ্ধ, গ্রামীণ জীবন, মসজিদ-মন্দির, নৌকাবাইচসহ বিভিন্ন লোকজ উৎসব, বর-কনে, পালকি, রাখাল, কৃষক-শ্রমিক, কম্পিউটার, মোবাইল টাওয়ার, মাছ শিকার, ঈদের নামাজ ইত্যাদি। তিনি আরও বলেন, শিশুরা যাতে সাধারন শিক্ষার পাশাপাশি চারুকলা ও ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহী হয় এবং তাদের মেধার বিকাশ ঘটে সেজন্য বিশাল এ ছবির (৩শ ফুট লম্বা এবং ৩ ফুট প্রস্থ) একটি ডিজিটাল প্রিন্ট বিভিন্ন স্কুলে দেখানো হচ্ছে। স্কুলের এমনকি বাইরের সাধারন মানুষও ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে এ ছবি দেখছে। তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক শিক্ষায় কম বেশি চিত্র আঁকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এছাড়া ব্যবহারিক শিল্পকলার ক্ষেত্রে রুচিবোধে সৌর্ন্দযের প্রয়োজন এবং শিল্প কলকারখানায় ও শিল্পীর প্রয়োজন। শিল্পীর জন্ম না হলে শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠবে কেমন করে?