নিজস্ব প্রতিবেদক
নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবহমান খরস্রোতা নবগঙ্গা নদী এখন মরা নদীতে পরিনত হয়েছে। কোথাও হারিয়েছে অস্বিত্ব, কোথাও নদীটি দেখতে সরু খালে পরিনত হয়েছে, আবার কোথাও মাঝ নদীতে হাটু পানি, হয়েছে ফসলের মাঠ।
নবগঙ্গা নদী নড়াইল জেলা অংশে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ হলেও এই নদীর ১২ কিলোমিটার এখন মৃত এবং অস্তিত্ব হারিয়েছে। নদীর বুকে চলছে চাষাবাদ, বুঝবার উপায় নাই এটা নদী না ফসলের মাঠ। চলছে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মানসহ নদীর জমি দখল, দেখবার যেন কেউ নেই। অপরদিকে খরস্রোতা নবগঙ্গা এখন ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে ইতিহাস।
নবগঙ্গা নদী দিয়ে এক সময় লঞ্চ,স্টিমার, জাহাজসহ বিভিন্ন নৌযান যান চলাচল করতো। নদীকে কেন্দ্র বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছিল হাট-বাজার। নদী পথে পণ্য পরিহনসহ যাতায়াত চলতো, তেমনি মাছ ধরে মৎস্যজীবিদের সংসার চলতো। নদীপাড় সংলগ্ন এলাকার মানুষের গোসল, সেচকাজ চলতো নবগঙ্গা নদীর পানি দিয়ে এখন তাও বন্ধ হয়ে গেছে। এই নদী ছিলো এই অঞ্চলের ব্যাবসা বানিজ্যের পণ্য পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম। এই নদীতে উৎপাদিত মৎস্য সম্পদ থেকে অনেকে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো অনেকে। চুয়াডাঙ্গার মাথাভঙ্গা নদী থেকে নবগঙ্গার উৎস।
চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলা অতিক্রম করে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে বড়দিয়া এলাকায় মধুমতি নদীতে গিয়ে মিশেছে। লোহাগড়া থেকে বড়দিয়া পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার নদী এখন মৃত। শুকনো মৌসুমে অনেক স্থানে একেবারে শুকিয়ে যায়। নদীর বুকে বাড়ীঘর তৈরী, মাছের ঘের কাটাসহ নানাভাবে অবৈধ দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। এখনই যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে পূন খনন বা ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর পূনরুজ্জীবন না করা যায় তাহলে এই নদীতে নৌ চলাচল বন্ধসহ নদীপথে ব্যবসা বাণিজ্য, মৎস্য সম্পদ বিলুপ্ত, পরিবেশের বিপর্যয়সহ হারিয়ে যাবে গুরুত্বপূর্ণ নবগঙ্গা নদীর অস্তিত্ব। নবগঙ্গার তীরবর্তী দোয়া মল্লিকপুর ও পার মল্লিকপুরের স্কুলের ছাত্র নোমান, জাকির, হোসেন বলেন, নবগঙ্গা এখন শুধু স্মৃতিতে রূপ নিয়েছে। আমরা আমাদের মুরব্বিদের কাছে শুনেছি এ নদী দিয়ে বড় বড় লঞ্চ, নৌকা, ষ্টীমার চলেছে। এখন নৌকাটো দুরের কথা নদীর অস্তিত্ব খুজে পাওয়া কষ্টকর। অবিলম্বে দখলমুক্ত করে নবগঙ্গা নদীকে পুনঃখননের দাবি জানালেন এলাকাবাসী।
নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহ নেওয়াজ তালুকদার বলেন, নবগঙ্গা নদীর বড়দিয়া থেকে লোহাগড়া পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার ভরাট হয়ে গেছে। অচিরেই নদীটি খননের প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ৪৩০ কোটি টাকা ব্যায়ে একটি প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রকল্পটি পানি সম্পদ মন্ত্রানালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে, প্রকল্পটি অনুমোদন হলে প্রায় নবগঙ্গার ৩৫ কি মি ও চিত্রার ৫ কি মি মোট ৪০ কি মি নদীটি পুনঃ খনন হবে।
সরকারের আন্তরিকতা ও স্বদিচ্ছায় প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে নদীটি পনঃখননের মধ্যদিয়ে আবারও নৌযান চলাচলসহ মৎস্য সম্পদ ও পরিবেশ রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করে খরস্রোতা নবগঙ্গা নদী তার হারানো যৌবন ফিরে পাবে এমনটাই প্রত্যাশা নড়াইলবাসীর।