ফেসবুকে মাশরাফীকে কটাক্ষ করে ডাক্তারের মন্তব্য, ভক্তদের প্রতিবাদ

3
103

ডেস্ক/এমএসএ

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট (ওয়ানডে) দলের অধিনায়ক ও নড়াইল ২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকে কটাক্ষ করে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন ডাঃ আবু জাফর ভূঁইয়া। গত বৃহস্পতিবার (৯ মে) নিজ প্রোফাইলে তিনি লেখেন, “মাশরাফি’র মত ব’কলমকে এতবড় রাজনৈতিক দলের নমিনেশন দেয়াই উচিৎ হয়নি।বন্য’রা বনে সুন্দর আর খেলোয়াড়’রা মাঠে-ঘাটে।” ফেসবুকে কথাগুলো লেখার পরই পোস্টটিতে মাশরাফীর ভক্ত ও অনুসারীদের কমেন্টের বন্যা বয়ে যায়। অনেকেই মাশরাফীর প্রতি ডাঃ জাফরের এমন মন্তব্যে তীব্র নিন্দা জানান, আবার অনেকেই অকথ্য ভাষায় ডাক্তারের পোস্টটির নিচে কটু-কাটব্য করেন।

সোহেল রানা মন্তব্য করেন, “পোস্টকারীকে (ডাক্তার) বলছি…মাশরাফী ব কলম নয়, আপনার আমার মত হাজার শিক্ষিতের চেয়েও বেশি শিক্ষিত মাশরাফী। আগে নিজে একজন মানুষ হন তারপর অন্যকে ধরতে আসেন।” কাজী হায়দার লেখেন, “ডাঃ হয়েছেন কিন্তু মানুষ হতে পারেন নাই, বাবার টাকা নষ্ট করে কসাই হয়েছেন।” সালমা পারভীন লেখেন, “মাশরাফী রাজনীতিতে আশাতে ওদের আতে ঘা লাগেছে। সব লুটেপুটে খাচ্ছিল। এখন সেটা পারবেনা তাই ওদের মত ডাক্তারদের গায়ে জ্বালা।” ফারহানা সামিউল লেখেন, “আপনার থেকে শিক্ষত লোকরাই তাকে রাজনীতিতে এনেছেন এবং তাকে আপনাদের মত কিছু ডাক্তার ছাড়া সারাদেশের মানুষই ভালবাসে।” জাহিদুজ্জামান লেখেন, “মাশরাফীকে ছোট করতে যেয়ে সে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ছোট করে ফেলেছে। কারন মাশরাফীকে নমিনেশন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।” আরেকজন মন্তব্য করেন, “এই রকম কিছু অশিক্ষিত বাজে ডাক্তাররা সকল ডাক্তারদের সম্মানের হানি ঘটাচ্ছে পরিকল্পিত ভাবে। আমি অনুরোধ করবো এই সকল ডাক্তারদের পাশে যেন আমাদের ভাল ডাক্তাররা না থাকে। এবং এই সমস্যা সমাধানের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি”। আবদুল্লাহ লেখেন, “মাশরাফীর জন্য আপনাকে চিনতে পারলাম, পতাকা বহনের ক্ষমতা সবার ভাগ্যে জোটে না, একজন অপরাধীর পক্ষ নেওয়া কতটা যৌক্তিক ভেবে দেখবেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আর প্রতিভা এক নয়, প্রতিভা অনন্য গুণ কিন্তু কুশিক্ষা জাতির শত্রু।”

শরিফুল মন্তব্য করেন, “দুর্জন বিদ্যান হলেও পরিতার্য। যার সাধারণ জ্ঞান থাকে তিনি এমন পোস্ট আপলোড দিতে পারেন না। মাশরাফীর মতো মহৎপ্রাণ, মনের একজন সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মাধ্যমে দেশের মানুষের মানচিত্রের সম্মান আন্তর্জাতিক ভাবে বিশ্বের কাছে সুনামের সহিত তুলে ধরেছেন এই দেশ মমতাময়ী মাশরাফী। তিনি একজন বাংলাদেশের আইকন মডেল সংসদ সদস্য। জনগণকে তিনি মন থেকে ভালবাসেন, দল/কর্তব্য কে ভালবাসেন, তাই ছুটে গেছেন সরকারি মেডিকেল হাসপাতালে। ডাঃ তুলনায় আপনি অতি নিকৃষ্ট মনের একজন মানুষ। যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বিশেষ অনুরোধ, আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবি করছি। সেই সাথে এই ধরনের অশিক্ষিত মনোভাব ব্যক্তিকে ধিক্কার জানাই, এরা দেশ ও দশের শত্রু।”

শাকিল লেখেন, “লেইম স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেকে ফেমাস বানানোর চেষ্টা,ভদ্রতার খাতিরে গালিও দিতে পারি না যেখানে সেখানে।” আশরাফ মন্তব্য করেন, “ভাই ম্যাশ তার দায়িত্ব পালন করেছে। আপনি আপনার দায়িত্বটা সঠিক ভাবে পালন করার চেষ্টা করেন। তাহলে তো কোন সমস্যা হয়না। শিক্ষিত মানুষের ভাষা সুন্দর হওয়া উচিত অশিক্ষিত মানুষের ভাষা অশিক্ষিতের মতই হবে। আপনি তো শিক্ষিত মানুষ আপনার ব্যবহার তো অশিক্ষিত বা অমানুষের মত হওয়ার কথা না। সে তো অশিক্ষিত কিন্তু তার ব্যবহার তো শিক্ষিত মানুষের মতই ছিল বা মানুষের মত। আপনি আপনার পোস্টের কমেন্ট গুলো একটু ভাল করে পড়ে দেখেন। মাশরাফী সকল পেশার মানুষকে ভালবাসে। আপনি তাকে ব্যক্তি হিসাবে চেনেন না বা তার কাছ থেকে তাকে দেখেননি সে কেমন।” এদিকে অনেকেই ডাক্তার জাফরের এমন বক্রোক্তির জন্য তার ফেসবুক আইডি বন্ধ করতে সকলকে রিপোর্ট করার আহবান জানান। সকল কমেন্টের বিরুদ্ধে ডাঃ জাফরের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ডাঃ আবু জাফর ভূঁইয়ার প্রোফাইল থেকে জানা যায়, তিনি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেছেন। নিউ জিল্যান্ডের কুইন্স একাডেমী থেকেও অধ্যয়ন করেছেন এই ডাক্তার। এছাড়া ছাত্রলীগের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ শাখার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।

উল্লেখ্য, নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য ক্রিকেটার মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা গত ২৫ এপ্রিল সদর হাসপাতালে আকস্মিক পরিদর্শনের সময় ওই চার চিকিৎসককে হাসপাতালে অনুপস্থিত পান। ওইদিন কর্তব্যরত চিকিৎসকদের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর না দেখে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আব্দুস শাকুর এবং সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আকরাম হোসেনের সঙ্গে মোবাইলফোনে কথা বলেন মাশরাফী। এ সময় বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যার কথা শোনেন এবং হাসপাতালের বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার চিত্র দেখতে পান। পরে হাসপাতালের কর্মকর্তা এবং জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন মাশরাফী। কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে নড়াইল সদর হাসপাতালের চার চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে ওই চার চিকিৎসককে ওএসডি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরই রেশ ধরে মাশরাফীকে নিয়ে ডাক্তারদের একটি মহলে সমালোচনা চলতে থাকে।