বই রিভিউঃ “এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ”

2584
65

নৈশ্য প্রহরী

পুরো বইয়ে গল্পের নায়ক যাকে মনে হবে তার থেকেও শক্তিশালী চরিত্র পালন করে বড়ভাই সুমন। পুরো বইটাই লেখা হয়েছে একটা জটলা, থুক্কু একজোড়া জটলা পাকানো বিবাহ বিভ্রান্ত নিয়ে। ৩ বন্ধু ও গল্পের নায়ক হাসান কে নিয়ে লেখক মনের রং মিশিয়ে তৈরি করেছেন মুশকিল আছান টাইপের রম্য উপন্যাসটি, তবে সাথেতো আছেই মুশকিল মেকার সুমন ভাই। পুরো বইটাকেই একটা বিগ ফ্যান প্যাক বলা চলে। যারা বই পড়ে কাঁদতে বা নিরব থাকতে পছন্দ করেন, হয়তো তাদের জন্য এই বইটি নয়। সিরিয়াস সামাজিক মনোভাবের মানুষরা এই হাস্যরসিক বই পরে হতাশই হবেন বলে আমার ধারনা। তবে হ্যাঁ, যারা প্রাণ খুলে হাসতে পছন্দ করেন, তাদের উদ্দেশ্যেই এই বইটা লেখকের আবিষ্কার। বন্ধু মহলের দুরন্তপনা ও হাজার হাস্যরসের সমন্বয়ে কানায় কানায় পূর্ণ এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ বইটি। কোনো রেড এলার্ট নেই বইটার প্রতি, ছোট থেকে বড় সকলেই বইটি পড়তে পারবেন। চাইলে হার্টের রোগীরাও পড়তে পারেন, হাসলে তো আর হার্টের কোনো সমস্যা নেই।

বইয়ের যেই চরিত্র দুটিতে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, সেই দুটি চরিত্রই কাকতালীয় ভাবে আমার দুটো নামে তৈরি। এতে করে অন্যদের থেকে আমি একটু বেশিই মজা পেয়েছি, পাওয়াটাই স্বাভাবিক। যে কেউই বইটিতে নিজেকে খুজে পাবেন, কারণ লেখক তার চতুরতা প্রকাশ করেছেন চরিত্র সিলেকশনের দিকে। এমন এমন কর্মকান্ড বাছাই করেছেন যা আমাদের সমাজে অহরহ ভুঁড়ি ভুঁড়ি দেখা যায়৷ এতে করে যে কারো চরিত্রের সাথে বইয়ের একেকটা চরিত্র মিলে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এমন রম্য উপন্যাস পড়ার সবচেয়ে বড় মজা হলো, একটা বড় নাটক দেখার সময় অপচয় করলেই বইটা পড়া খোরাক পূরন করা যায়। তবে তাকে অপচয় বললে খারাপ শোনাবে, কারন নাটকের থেকে বেশিই লোভনীয় ছিলো এই রম্য উপন্যাসটি।

বইটার যে জিনিসটা দেখে আমি সবচেয়ে বেশি হতাশ হয়েছি, তা হলো বইটির সাইজ। অন্য সকল বইয়ের মতো সাইজ হলে হয়তো হাতে ধরে আরো মনের কাছথেকে অনুভব করতে পারতাম বইটাকে। প্রচ্ছদের দিকে আরো নজর দেয়া উচিত ছিলো, প্রচ্ছদে কিছু নতুনত্ব বইটির সৌন্দর্য আরো অনেক গুনে বাড়িয়ে দিতো। বইয়ের নানান স্থানের অনেক পরিমানে বানান ভুল লক্ষ করা গেছে। কিছু কিছু স্থানে এমন বানান ভুল ছিলো যা বিরক্তির কারন হয়ে উঠেছে। তবে পরের মুদ্রনে বানানগুলো সংশোধন করার জন্য লেখক ও প্রকাশনীর কাছে অনুরোধ রইলো। বানান ভুল জিনিসটাকে অনেক পাঠক একেবারে মানতেই পারেন না, কিন্তু আমার কাছে মনে হয় বানান ভুল কিছু পরিমান থাকাটা দরকার। ছোটোবেলা থেকেই আমি শেষ দিকে ছাত্র হওয়ায়, শিক্ষক কিছু একটা ভুল করলে সেটা ধরিয়ে দিয়ে পৈশাচিক আনন্দ পেতাম। বইয়ের ক্ষেত্রেও তেমন টাই করতে ইচ্ছে করে। তাই বানান ভুল একেবারে না থাকলে আমি অবশ্যই হতাশ হতাম।

লেখকের প্রথম বই হিসেবে অনেক কিছুই মাথায় আনা হয়নি। তবে লেখকের কাছে পাঠক হিসেবে দাবী, পরের বারে পাঠক আরো কঠোর ভাবে চুল ছেড়া বিশ্লেষণ করেও যেনো হতাশ হতে পারে। যারা হাস্যরসে মেতে উঠতে পছন্দ করেন তারা অবশ্যই বইটি নিজের সংগ্রহে রাখতে পারেন। (লেখক: নাঈম হাসান, প্রকাশনী: চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন, বিষয়: রম্য উপন্যাস, মূল্যঃ ১২০ টাকা)