রণাঙ্গনের বীরযোদ্ধা আশরাফের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি চান অসুস্থ স্ত্রী মনোয়ারা

5
15

নিজস্ব প্রতিবেদক

সম্মুখ সমরে জীবন বাজি রেখে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা প্রতিষ্ঠিত করেও কাজী গোলাম আশরাফ খোকন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। প্রায় তিন বছর হলো তিনি মারা গেছেন। এখন তার অসুস্থ স্ত্রীর আকুতি, তিনি স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেখে মরতে চান।

জানা গেছে, সদর উপজেলার পলইডাঙ্গা গ্রামের কাজী গোলাম আশরাফ খোকন ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে ‘৭১ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে ফিরে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করেন। দেশ স্বাধীনের পর নড়াইল ত্যাগ করে নারায়ণগঞ্জ জেলায় চাকরি করেছেন। জীবিত অবস্থায় প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য চেষ্টা করেননি। কিন্তু পরে যখন চেষ্টা করেন, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। ২০১৬ সালের ২০ জুলাই তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জে মারা যান। তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও তিন কন্যা রেখে গেছেন।

গোলাম আশরাফের কন্যা ইশরাত জাহান বলেন, বর্তমান সরকার তাদের ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে অনলাইনে দরখাস্ত করতে বলে। বিষয়টি জানতে পেরে নড়াইলে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির কাছে দরখাস্ত করা হয়। পরে তার নাম যাচাই-বাছাইয়ের আওতায় এসেছিল কি-না বা তার বাবার নাম জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে পাঠানো হয়েছিল কি-না, তা তিনি জানেন না। তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালে ঢাকায় নড়াইল ফেসবুক ফ্রেন্ডস নামে একটি সংগঠন তার বাবাসহ নড়াইলের মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান করে। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সদর উপজেলার কমান্ডার এস এ বাকি বলেন, খোকন ‘৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর নড়াইলমুক্ত দিবসে পাকিস্তানি হানাদার ও এদেশীয় রাজাকারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। তার মতো একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কেন তালিকাভুক্ত হতে পারেননি, সেটা আশ্চর্যের বিষয়। মৃত্যুর পর হলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার স্বীকৃতি পাওয়া জরুরি। ১৯৭১ সালে তৎকালীন নড়াইল মহকুমা গেরিলা বেইজ ও ডেমুলেশন কমান্ডার অ্যান্ড পলিটিক্যাল মোটিভেটর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান জিন্নাহ এবং সদর উপজেলা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা শরীফ হুমায়ুন কবির জানান, গোলাম আশরাফ খোকন আমাদের সঙ্গে ভারতের উত্তর প্রদেশের টান্ডুয়া ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। পরে একসঙ্গে দেশে ফিরে এসে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

গোলাম আশরাফের অসুস্থ স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৬০) কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘স্বামী তার জীবদ্দশায় মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়ে ভাবেননি। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে আমি মরতে চাই। এটা আমার জীবনের শেষ ইচ্ছা।’ এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর সহানুভূতি কামনা করেন।

উল্লেখ্য যে, মনোয়ারা বেগম স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা), বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল, নড়াইলের জেলা প্রশাসক, নড়াইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছেন।