নড়াইলে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে পিস্তল উঁচিয়ে গুলির হুমকি!

4
2230

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রদেশ কুমার মল্লিককে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে ও অভিযুক্ত অভিভাবকের বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ ও জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয় চত্বরে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে। রোববার (১৬ জুন) সকাল ১০টার দিকে বিদ্যালয়ের সামনে প্রথমে নড়াইল-যশোর সড়ক প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধ করে এবং পরে ডিসি অফিস চত্বরে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় সড়কে যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে পিস্তল উঁচিয়ে গুলির হুমকি দিয়েছে এক ঠিকাদার! এ সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এতে অভিভাবকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ বিস্ময় প্রকাশ করেন। এমনকি অবস্থান কর্মসূচী পালনকালে অন্তত ১০জন ছাত্রকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভূক্তভোগী শিক্ষক প্রদেশ মল্লিক জানান, গত শনিবার (১৫ জুন) সকালে তার বাসায় শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানোর সময় পড়ালেখা নিয়ে সানজিনা এরিনা নামে এক ছাত্রীকে শাসন করেন তিনি। এরিনা বিষয়টি বাড়িতে গিয়ে তার বাবা শহরের মহিষখোলার ঠিকদার মঈন উল্লাহ দুলুকে জানায়। এরপর ওই ছাত্রীর বাবা বাসায় এসে শিক্ষককে মারধর করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সানজিনা এরিনা নড়াইল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী হলেও নড়াইল সরকারি উ”চ বিদ্যালয়ের (বালক) শিক্ষক প্রদেশ মল্লিকের কাছে প্রাইভেট পড়ত।

বিষয়টি জানাজানি হলে নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ওই অভিভাবকের বিচার দাবিতে রোববার সকালে সড়ক অবরোধ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে। এ ঘটনায় ওইদিন (রোববার) সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিযুক্ত অভিভাবক ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা আলোচনা বসে বিষয়টি মিমাংসা করেন। তবে ডিসি অফিস চত্বরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ওপর হঠাৎ করে চড়াও হয় অভিযুক্ত অভিভাবক মঈন উল্লাহ দুলুর লোকজন। এ সময় নড়াইল শহরের মহিষখোলার ঠিকাদার রেজাউল আলমসহ তার অনুসারীরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের তাড়া করে মারধরে উদ্যত হন। এক পর্যায়ে রেজাউল আলম পিস্তল বের করে ছাত্রদের গুলি করার জন্য এগিয়ে যান। এতে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে ছুটোছুটি শুরু করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা আনজুমান আরা ঠিকাদার রেজাউল আলমকে পিস্তল বের না করার অনুরোধ করেন। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করার হুমকিতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গণমাধ্যমকর্মীসহ উপস্থিত সবাই আতঙ্কিত হয়ে দিক-বিদিক ছুটোছুটি শুরু করেন। এ ঘটনায় অভিভাবকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ হতবাক হয়ে পড়েন। ঘটনাটি এখন ‘টক অব দ্যা টাউন’-এ পরিণত হয়েছে। এ ব্যাপারে ঠিকদার রেজাউল আলম সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে চাননি। তবে পিস্তলটি লাইসেন্সকৃত বলে দাবি তার।

এদিকে অভিযুক্ত অভিভাবক মঈন উল্লাহ দুলু ভূক্তভোগী শিক্ষক প্রদেশ কুমারকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন। জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, দুইপক্ষকে ডেকে বিষয়টি মিমাংসা করা হয়েছে। এছাড়া ঠিকাদার রেজাউল আলমের পিস্তলটি সদর থানায় জমা রাখা হয়েছে।