স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়নের চর রামসিদ্ধি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ চলাকালে বিদ্যালয় সংস্কার বাবদ বরাদ্দকৃত ২ লাখ টাকা লুট পাটের মহড়া চলছে। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অসিত বরণ পাল, সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বিশ্বজিত সাহা, সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেখা রানী ও সভাপতি আফছার উদ্দিন শিকদার পরষ্পর যোগশাজোশে সরকারী নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে বিদ্যালয় সংস্কারের ২ লাখ টাকা লুটপাটের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সরেজমিনে এ বিদ্যালয় পরিদর্শনে গেলে এ লুটপাটের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এলাকাবাসি। চর রামসিদ্ধি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের বাসিন্দা রফিক ফকিরসহ আরো অনেকে জানান, এ বিদ্যালয়ের ভবন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সরকার নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ৭৮ লক্ষ ৩৯ হাজর টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম এ ভবন নির্মাণের কাজ করছেন। সে কারণে বিদ্যালয়ের পাশেই টিনের ছাপড়া ঘর তুলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
এরই মধ্যে এ বিদ্যালয়ের সভাপতি আফসার উদ্দিনের বাড়ির সাথে বিদ্যালয় সংস্কারের নামে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে নতুন করে ঘর তোলা হচ্ছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার অসিত বরণ পাল ও সহকারী শিক্ষা অফিসার বিশ্বজিত সাহার পরামর্শে এ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক সকল তথ্য গোপন রেখে সুকৌশলে ঘর নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। নতুন ভবন নির্মাণের কাজ চলাকালে ওই অর্থ বছরেই ভবন সংস্কারের অর্থ বরাদ্দ দেয়ার বা সংস্কার কাজ করার কোন বিধান না থাকলেও সরকারী অর্থ লুটপাটের জন্য এ আইন লংঘন করা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্য ও এলাকার লোকজনদের সভাপতি আফছার উদ্দিন জানিয়েছেন, তিনি নিজেদের বসবাসের জন্য ওই ঘর তুলছেন। কিন্তু সন্দেহ হওয়ায় এলাকার লোকজন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন বিদ্যালয় সংস্কার বাবদ ২ লাখ টাকা নিয়ে ওই ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ঘরের কাজ সম্পন্ন হলে লোক দেখানোর জন্য ওই ঘরে কিছুদিন শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে সভাপতি নিজের আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহার করবেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নতুন ভবনের কাজ চলাকালে সংস্কার কাজ করার কোন বিধান নেই। তাছাড়া বাস্তবেই যদি কোন ভবন বা ঘর না থাকে, তাহলে সংস্কার কাজ করবে কোথায়। তদুপরি সংস্কার বাবদ বরাদ্দের ২ লাখ টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে সভাপতির বাড়িতে স্বল্প ব্যয়ে ঘর নির্মান করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করে ওই ঘর নির্মান করে বাকি টাকা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ভাগাভাগি হবে বলে জানান স্থানীয়রা। এদিকে খালের ওপর ঝঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো পার হয়ে বেশ দূরে সভাপতির বাড়ি গিয়ে ক্লাস করতে হবে এমন সংবাদে শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম আতংক ও ভয় কাজ করছে। এ ঘটনায় অভিভাবকদের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় অভিভাবকরা দাবি জানিয়েছেন, নতুন ভবনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত শ্রেণীপাঠ কার্যক্রম যেখানে চলছে (নতুন ভবনের পাশে) সেখানেই চালানো হোক।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেখা রানী দাস জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও) অসিত বরণ পাল এর পরামর্শে ও নির্দেশে সকল কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তিনিই বলেছেন সংস্কার কাজের নামে সভাপতির বাড়ি ঘর তুলতে। পরবর্তীতে সামান্য কিছু দাম ধরে ওই ঘর সভাপতিকে দিয়ে দেবেন বলেও সভাপতিকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের সভাপতি আফছার উদ্দিন শিকদার জানান, সংস্কার কাজের টাকা দিয়ে বাড়িতে ঘর তোলার ব্যাপারে তিনি নড়াইল সদর ইউএনও অফিসে ঘোর আপত্তি করেছিলেন। কিন্তু শিক্ষা কর্মকর্তা অসিত বরণ পাল তাকে ঘর তুলতে বাধ্য করছেন। তিনি আরো জানান, এ ধরনের অনৈতিক কাজ তিনি মোটেও পছন্দ করেন না। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে এক পর্যায়ে বলেন প্রয়োজনে ঘর তোলা বন্ধ করে দিবো। তবে এ পর্যন্ত যে খরচ হয়েছে, তা শিক্ষা অফিসারের কাছ থেকে আদায় করে নিবো। শিক্ষা অফিসার ও প্রধান শিক্ষক তাকে চাপ দিয়ে এবং কমদামে পরবর্তীতে ওই ঘর তাকে দেয়ার লোভ দেখিয়ে ঘর তৈরী করতে বাধ্য করেছেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও) অসিত বরণ পাল বলেন, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশন ও সিদ্ধান্তের কারণে সংস্কার কাজের টাকা ফেরত না দিয়ে সভাপতির বাড়িতে ঘর তোলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ভবন সংস্কার নীতিমালা অনুসরণ করে ওই বিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা ফেরৎ না দিয়ে নতুন ঘর নির্মান বৈধ কি না এবং অধিদপ্তরকে জানিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শাহ আলম বলেন, চর রামসিদ্ধি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেহেতু নতুন ভবন নির্মান করা হচ্ছে, সেহেতু সংস্কারের কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া বিদ্যালয়ের আর কোন ঘর নেই, সংস্কার কোথায় করবে। বরাদ্দকৃত টাকা অবশ্যই ফেরৎ দিতে হবে। আপাতত শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য নির্মানাধীন নতুন ভবনের পাশে টিনের ছাপড়া বেঁধে পাঠদান চলছে।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোঃ এনামুল কাদের খানের সাথে শুক্রবার (২৮ জুন) সকালে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসার বা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ বাপ্যারে কিছুই জানাননি। বিষয়টি আমি দেখছি।