স্পোর্টস ডেস্ক
বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিচ্ছেন ক্রিকেট ইতিহাসের এক জীবন্ত কিংবদন্তী। শুক্রবার (৫ জুলাই) পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের দ্বাদশ বিশ্বকাপের অভিযান শেষ হবে। ম্যাচটির মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে চলেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা।
বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন নিয়েই ইংল্যান্ডের মাটিতে পা দিয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফী। কিন্তু বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য যে কিছু ভুল, আর অদৃষ্টের জন্য বিশ্বকাপের লক্ষ্য থেকে দলকে ফেরত আসতে হলো। সংবাদ সম্মেলনেও মাশরাফী ভাগ্য প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘ভাগ্য অনেক বড় ফ্যাক্টর। আপনি যতই ভাল খেলুন না কেন, ভাগ্যের সহায় থাকতে হয়।’ মাশরাফী ও বাংলাদেশ দলের ভাগ্যই হয়তো খারাপ। এবারের বিশ্বকাপে সামনে যাবার পথটাও বন্ধ হয়ে গেল। বিশ্বকাপে দল ও নিজের শেষ ম্যাচে ভাগ্য কি অধিনায়ক মাশরাফীর সহায়ক হবে? যাই হোক, তার প্রস্থানে দিনটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
মাশরাফী নিজেও জানেন নানা কারণে ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ তার জন্য খেলা কিছুটা হলেও দুরূহ। বয়স, শরীর, পার্লামেন্ট এত কিছু সামাল দিয়ে হয়তো বিশ্বকাপ খেলাটা অনেকখানি কষ্টের। আর ইংল্যান্ডে যাবার আগে ও পরে অনেক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “এবারের আসরই আমার শেষ বিশ্বকাপ।” তবে ভক্তদের নিরাশ করবেন না নড়াইল এক্সপ্রেস। খেলা চালিয়ে যাবেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেও এখনই অবসরের কথা ভাবছেন না মাশরাফী।
মাশরাফীর সময়টা মোটেও ভালো যাচ্ছে না। দুর্দান্ত ফর্ম নিয়ে বিশ্বকাপে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৭ ইনিংসে বল করে মাত্র ১ উইকেট নিয়েছেন মাশরাফী। নিজের পারফরমেন্স নিয়েও তিনি সন্তুষ্ট নন। তিনি বলেন, ‘আমার নিজেরও খুব খারাপ লাগছে।’ ভক্তদেরও এক খারাপ লাগা কাজ করছে। সমালোচকরা একই সাথে নিজেদের দ্বায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ দলের জন্য মাশরাফী যে ত্যাগ করেছেন, দলের জন্য তার যে অবদান তা তাদের স্মরণে নেই। ভুলে গেছেন সাতটি অস্ত্রোপচার নিয়ে এখনও ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন দলের অনেক জয়ের নায়ক এই মাশরাফী। তারা জানে না দেশকে একটি বারের জন্য বিশ্বকাপ তুলে দেয়াই ছিলো তার প্রতিজ্ঞা। তার এই সংকল্পের জন্য তিনি শত বাধা অতিক্রম করার যে চেষ্টা করেছিলেন তা অনেকেরই চোখের আড়াল হয়ে গিয়েছে।
“২০১৪ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের ক্রিকেট যখন খারাপ সময় পার করছিল তখনই দলের হাল ধরেন নড়াইল এক্সপ্রেস মাশরাফী। বিশ্বকাপের আগে দেশের মাটিতে জিম্বাবুুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক হন তিনি। দায়িত্ব নিয়ে দলকে পাল্টে দেন মাশরাফী। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের সিরিজের সবগুলোতেই জয় পায় বাংলাদেশ। এই সাফল্য নিয়ে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপের এগারতম আসরে খেলতে নামে টাইগাররা।
সে আসরে বড় কোন লক্ষ্য ছিলো না বাংলাদেশের। কিন্তু মাশরাফীর নেতৃত্বে বিশ্বকাপের মঞ্চে সেরা সাফল্যই পায় বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথমবারের মত খেলে টাইগাররা। শেষ আট থেকে বিদায় নিলেও, থেমে যায়নি বাংলাদেশের পথ চলা। মাশরাফীর নেতৃত্বে এরপর ভারত-পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকার মত দলকে নাকানিচুবানি দেয় বাংলাদেশ। এইসব সাফল্যে আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিং-এ সাত নম্বরে উঠে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সরাসরি খেলার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। সেখানে চমক দেখায় বাংলাদেশ। দলের খেলোয়াড়দের দুর্দান্ত পারফরমেন্স, মাশরাফীর বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্ব বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে তুলে। কিন্তু সেখানেই থেমে যায় বাংলাদেশের পথচলা।
বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সাফল্যে বাংলাদেশকে আরও বড় স্বপ্ন দেখান মাশরাফী। দ্বাদশ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার পণ করে ইংল্যান্ডে আসেন তিনি। কিন্তু ঐ যে ভাগ্য সহায় হয়নি দলের। ভাগ্য সহায় হয়নি মাশরাফীর। নয়তো বাংলাদেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বিশ্বকাপের মঞ্চে মাত্র ১টি উইকেট পাবেন, বেমানানই বটে।
২০০৭ সালের বিশ্বকাপে প্রথম খেলতে নামেন মাশরাফি। ৯ ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ে প্রধান ভূমিকা ছিলো মাশরাফীর। ৯ দশমিক ৩ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন তিনি। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলা মাশরাফী, ২০১১ সালের বিশ্বকাপ মিস করেন। দেশের মাটিতে ঐ বিশ্বকাপের জন্য দল ঘোষণার এক মাস আগে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার সময় আবারো হাটুঁর ইনজুরিতে পড়েন তিনি। তাই মাশরাফীকে ছাড়াই দেশের মাটিতেই বিশ্বকাপ খেলতে হয় বাংলাদেশকে।
তবে অধিনায়ক হিসেবে ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলেছেন মাশরাফী। ৫ ম্যাচে অংশ নিয়ে ৭ উইকেট নিয়েছেন দলের নেতা। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর আজ অবধি ৭২ ম্যাচে ৭৬ উইকেট নিয়েছেন মাশরাফী। দ্বিতীয়বার অধিনায়ক হবার পর নেতা হিসেবেও বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন বড় বড় সাফল্য। বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটের সেরা অধিনায়ক বনে যান মাশরাফী। ৮৪ ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ৪৭টি জয় পেয়েছেন তিনি। হার ৩৫টি।” (তথ্য সূত্রঃ বাসস)