নিউজ ডেস্ক
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় নড়াইলের কালিয়া পৌরসভার বড়কালিয়া এলাকার প্রয়াত তাপস ঘোষের ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষ। উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকায় আনা হচ্ছিল। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের গাড়ি আসার অপেক্ষায় প্রায় তিন ঘণ্টা ফেরি ছাড়তে দেরি হয়। এসময় ফেরিতে আটকে থাকা অ্যাম্বুলেন্সে তিতাসের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে সকলের অনুরোধের পরেও মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ির ১নং ঘাট থেকে কুমিল্লা নামের ফেরিটি ছাড়েনি বলে স্বজনরা অভিযোগ করেন।
রোববার তিতাসের বড় বোন তন্নীসা ঘোষ বলেন, ‘আমার ভাইয়ের জীবন কেড়ে নিল ভিআইপি। এ দেশে জীবনের দাম বেশি না ভিআইপিদের দাম বেশি?’ তিতাসের কথা জানতে চাইলে ক্রন্দনরত তিতাসের মা সোনামণি ঘোষ বলেন, ‘বাবা তোমাদের কাছে বললে কী আমার ছেলেরে পাবো? ওরা আমার ছেলেরে মেরে ফেলছে। আমি ফেরিওয়ালাদের পায় ধরছি, তবুও ওরা ফেরি ছাড়ে নাই। ফেরি ঠিক মতোন গেলে হয়তো ছেলেটা বেঁচে যাইতো।’
এমনকি জরুরি নম্বর ট্রিপল নাইনে ফোন করেও প্রতিকার মেলেনি। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ঘাটে কর্তব্যরত বিআডব্লিউটিসি কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের দাবি তাদের কাছে রোগীর স্বজনরা রোগীর অবস্থা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হয়। সূত্রে জানা যায়, এ বিষয় বিআইডব্লিউটিএ-এর চেয়ারম্যান খোঁজ নিয়েছেন বলে কাঁঠালবাড়ি ঘাট ম্যানেজার আব্দুস সালাম জানিয়েছেন।
সূত্রে জানা যায়, নড়াইল কালিয়া পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র তিতাস ঘোষ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ায় প্রথমে খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত বৃহস্পতিবার তাকে অর্ধ লক্ষ টাকায় ভাড়া করা আইসিইউ সম্বলিত অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল।
রাত ৮টার দিক মাদারীপুরের কাঠালবাড়ী ১নং ফেরী ঘাটে পৌঁছায় অ্যাম্বুলেন্সটি। রাত ৯টার দিক কুমিল্লা নামের ফেরিটি শিমুলীয়া থেকে কাাঁঠালবাড়ি ঘাটে ভিড়ে গাড়ি আনলোড করছিল। মৃত তিতাসের পরিবার অভিযোগ করে, এ সময় ওই রোগীর লোকজন ঘাটে কর্মরতদের তাদের রোগীর অবস্থা বললেও গাড়ি আনলোড শেষে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মন্ডল ওই কর্মকর্তার গাড়ি না আসা পর্যন্ত ফেরি ছাড়তে রাজি হননি ঘাট কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় মুমূর্ষু তিতাসকে বাঁচাতে স্বজনরা ফোন করেন জরুরি নম্বর ট্রিপল নাইনে সাহায্যেও জন্য।
পরিবারের অভিযোগে উঠে আসে, পুলিশ সদস্যদেরও অনুরোধও রাখেননি ঘাট কর্তৃপক্ষ। রাত পৌনে এগারোটার দিক নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের স্টিকার লাগানো সাদা রংয়ের নোহা মাইক্রোবাসটি আসার পর ফেরি ছাড়ে। ফেরিটি মাঝ নদীতে পৌঁছালে মস্তিস্কে প্রচুর রক্তক্ষরণে আম্বুলেন্সেই তিতাসের মৃত্যু হয়। পরে শিমুলিয়া ঘাট থেকে আবারও ফেরিতে কাঁঠালবাড়ি ঘাট পৌঁছে ওই পরিবারটি তিতাসের লাশ নিয়ে নড়াইল ফিরে যায়।
অপরদিকে পুলিশ ও ঘাটে কর্তব্যরত বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তাদের দাবি তাদের কাছে ওই পরিবারের পক্ষ থেকে যখন রোগীর কথা জানানো হয় তখনি তাদের অ্যাম্বুলেন্স ফেরিতে লোড করে ১০ মিনিটের মধ্যেই ঘাট থেকে কুমিল্লা ফেরিটি শিমুলীয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। আর ফেরিটি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ওই সচিবের জন্য খুব বেশি দেরি করেনি বলে তারা জানায়।
নিহত তিতাসের মামা বিজয় ঘোষ বলেন, ‘আমার ভাগনে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ায় পর তার চিকিৎসার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু ঘাটে এসেই সব যে এভাবে শেষ হয়ে যাবে, তা ভাবলেই বুকটা ছিঁড়ে যায়। আমার বোনে ফেরির লোকদের পায়ে ধরে মাটিতে পড়ে কেঁদেছে। তবুও ওরা ফেরি ছাড়েনি। উল্টো বলেছে ফেরি ছাড়লে নাকি তাঁদের চাকরি থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘ফেরির লোকদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে মন্ত্রী আসবে, ভিআইপি আসবে।
পদাধীন কোনো কর্মকর্তার জন্য ফেরি কর্তৃপক্ষ এভাবে কি ফেরি থামাতে পারে? হয়তো ৩ ঘন্টা আগে শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসা দেয়া গেলে তার পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারতো। এখন এর দায় কে নেবে? ফেরি কর্তৃপক্ষ নাকি সেই কর্মকর্তা?