“কনসার্ট ফর বাংলাদেশ” এর ৪৮ বছর পূর্তি

143
16

ডেস্ক/এমএস

১ আগস্ট ১৯৭১, ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিলো সঙ্গীতের পৃথিবীতে। পৃথিবীর প্রথম চ্যারিটি কনসার্ট (কনসার্ট ফর বাংলাদেশ) অনুষ্ঠিত হয়েছিল এ দিনে। আজ ৪৮ বছর পূর্তি হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা’র পক্ষে, গণহত্যার প্রতিবাদ ও শরণার্থী’দের সহায়তার জন্য এই অবিস্মরণীয় আয়োজনের।

“A sunrise doesn’t last all morning…a cloud burst doesn’t last all day…Seems my love is up and has left you with no warning…, but it’s not always been that grey…and All things must pass. All things must pass away” —- By George Harrison

একাত্তরে যুদ্ধবিধ্বস্ত জনপদ, সহায়-সম্বলহীন ঘরছাড়া বাংলাদেশি শরণার্থীদের কথা বিবিসিসহ অন্য গণমাধ্যমে বিশ্ববাসী জানতে পারে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ভারতীয় বাঙালি সেতারবাদক রবিশঙ্কর হৃদয় দিয়ে অনুভব করেন ছিন্নমূল সেই সব শরণার্থীর বিপন্নতা। এ রকম অমানবিক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতিতে বাঙালি হয়ে বাঙালির পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা থেকেই রবিশঙ্করের মাথায় আসে কনসার্টের কথা। রবিশংকর এ কনসার্ট সম্পর্কে বলেন, ‘এক দিনেই সকলে বাংলাদেশের নাম জেনে যায়। এটা ছিল অলৌকিক।’

বিটল্‌স ভেঙে যাওয়ার পর এই অনুষ্ঠানই ছিলো হ্যারিসনের সরাসরি অংশগ্রহণ করা প্রথম অনুষ্ঠান। এরিক ক্ল্যাপটনও এই অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে প্রায় পাঁচ মাস পর কোনো সরাসরি অনুষ্ঠানে গান গাইলেন এবং বব ডিলানও ১৯৬৯ সালের পর প্রথমবারের মতো শ্রোতা দর্শকদের সামনে এলেন।

১ আগস্ট ১৯৭১ নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে বসল পৃথিবীর ইতিহাসে স্মরণীয় এক ঐতিহাসিক কনসার্ট। সেখানেই বাংলাদেশের জন্য বাজালেন সেতারসম্রাট রবিশঙ্কর, সরোদসম্রাট ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ, তবলার কিংবদন্তি শিল্পী আল্লারাখা খাঁ। তারপর একে একে গান গাইলেন বিটলসের জর্জ হ্যারিসন, রিঙ্গো স্টার। এবং একে একে আরও গাইলেন, লিওন রাসেল, বিলি প্রিস্টন আর কিংবদন্তি গায়ক বব ডিলান। কিংবদন্তি গিটারিস্ট এরিক ক্ল্যাপটনও গিটার বাজিয়েছিলেন কনসার্টটিতে। সবশেষে জর্জ হ্যারিসন গাইলেন তার সেই বিখ্যাত গান ‘বাংলাদেশ’। জর্জ হ্যারিসন তার বিবেকী শিল্পী সত্তাকে মানবতার কল্যাণে, মুক্তিসংগ্রামের স্বপক্ষে নিবেদিত করেছিলেন সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে।

স্বয়ং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন সেদিন বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিপক্ষে ছিল, সেখানে বিশ্ববরেণ্য সঙ্গীতজ্ঞ পন্ডিত রবি শংকরের পৃষ্ঠপোষকতায় জর্জ হ্যারিসন এগিয়ে এসেছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের সাহায্যার্থে। যৌথভাবে আয়োজন করেন বিশ্ব ইতিহাসের প্রথম চ্যারিটি কনসার্ট। ১লা আগস্ট, নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে সেদিন এই কনসার্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছিল পাকি বর্বর অমানুষ’দের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের কথা।

একটি দেশকে না দেখেই সে দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসার হাত প্রশস্ত করেছিলেন জর্জ হ্যারিসন। বাংলাদেশের এই স্বার্থহীন বন্ধু ২৯ নভেম্বর ২০০১ চলে যান পরপারে। তিনি মিশে গেছেন পরম সত্ত্বার সঙ্গে। মর্মান্তিক কথা হচ্ছে, যে জর্জ হ্যারিসন একটি দেশ, একটি জাতির অভ্যুদ্বয়ের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে ছিলেন, সেই জর্জ হ্যারিসনের বাংলাদেশ সফরের সৌভাগ্যটুকু হয়নি।

আজ শ্রদ্ধেয় রবি শঙ্কর এবং শ্রদ্ধেয় জর্জ হ্যারিসন নেই। কিন্তু তাঁরা আছেন আমাদের হৃদয়ে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির অস্তিত্ব যতদিন থাকবে, তাঁদের অবদান এবং ভালবাসা আমরা পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করবো। কৃতজ্ঞতাঃ গেরিলা ১৯৭১