কোরাণের গল্প- “কোরবানি”

555
45

বন্দে আলী মিয়া

হযরত ইব্রাহিম (আঃ) বিবি হাজেরাকে নির্বাসন দিয়েছিলেন সত্য, কিন্তু তিনি সারা খাতুনের অনুমতি গ্রহণ করে মক্কা নগরীতে মাঝে মাঝে স্ত্রী ও পুত্র ইসমাইলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যেতেন।

একদিন ইব্রাহিম স্বপ্নে দেখতে পেলেন, খোদাতা’লা যেন তাকে কোরবানি করবার জন্যে হুকুম করছেন। পরদিন আল্লাহের নির্দেশ অনুযায়ী তিনি একশত উট ও দুম্বা কোরবানি করলেন। কিন্তু এ সত্ত্বেও সেদিন রাত্রে তিনি পুনরায় খোদাতা’লার আদেশ পেলেন যে, তাঁকে পুনরায় কোরবানি করতে হবে। তিসি সে হুকুমও পালন করলেন। কিন্তু অতিশয় তাজ্জবের কথা তাঁর সে কোরবানি গ্রহণ করলেন না। পরের রাত্রে তিনি পুনরায় খোয়াব দেখলেন, খোদা তাঁকে যেন হুকুম করেছেনঃ ইব্রাহিম, তোমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় বস্তু আমার উদ্দেশ্য কোরবানি করো।

ইব্রাহিম বিষম বিপদে পতিত হলেন। সর্বাপেক্ষা প্রিয় বস্তু কি? ধন-ঐশ্বর্য বিষয় সম্পত্তি –এ সকল তো প্রিয়। স্ত্রী এদের চেয়ে প্রিয়। স্ত্রী অপেক্ষা আপনার প্রাণ অধিক প্রিয়। জগতে সকলের চেয়ে প্রিয়তম তাঁর পুত্র। নানা চিন্তায় রাত্রি প্রভাত হলো। তিনি ভাবলেন, খোদাতা’লা সম্ভবত তাঁর পুত্রকেই কোরবানিরূপে চাইছেন। উত্তম, তাই হবে। ইহা অপেক্ষা সৌভাগ্যের বিষয় আর কি আছে। অনেক পূণ্যে ইব্রাহিমকে এই কঠোর পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। খোদার অনুগ্রহ থাকলে নিশ্চয়ই এই হৃদয়-দ্বন্দ্ব এবং ঈমান পরীক্ষায় তিনি জয়ী হতে পারবেন। সঙ্কল্প স্থির করে হযরত ইব্রাহিম পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে দূরবর্তী পাহাড়ের নিকটে গেলেন এবং ইসমাইলকে খোদার আদেশ জ্ঞাপন করলেন। ইসমাইল পিতার কথা শুনে আপনার জীবন বলি দিতে সানন্দে স্বীকৃত হলেন। বললেনঃ আব্বা, খোদা আমায় জীবন দিয়েছেন, তিনিই যখন গ্রহণ করতে চাচ্ছেন, এ আমার পরম সৌভাগ্য। আপনি যথা-সম্ভব শীঘ্র কোরবানি করুন।

ইব্রাহিম মনকে দৃঢ় করে বস্ত্রের মধ্য থেকে ছুরিকা বের করলেন। তীক্ষ্ণ ধার অস্ত্র প্রথম রৌদ্র ঝলসে উঠলো। একখানা রুমাল দিয়ে তিনি পুত্রের চোখ বেঁধে দিলেন এবং জবেহ করতে মনে মমতার সঞ্চার হতে পারে ভেবে অপর একখানি বস্ত্রখণ্ড দ্বারা আপনার চক্ষু আবৃত করলেন। দৃঢ়হস্তে ইসমাইলের গলায় ছুরিকা চালালেন।

কার্য সমাপ্ত করে চোখের বন্ধন তিনি মুক্ত করলেন। কী আশ্চর্য, খোদার এমনি মরতবা পুত্র ইসমাইল অক্ষত দেহে সম্মুখে দাঁড়িয়ে তার পরিবর্তে একটি দুম্বা জবেহ হয়ে ভূমিতলে পড়ে আছে।

এমন সময় গায়েবী আওয়াজ (দৈববাণী) শুনতে পাওয়া গেলোঃ ইব্রাহিম তোমার কোরবানি আল্লাহ কবুল করেছেন। পুত্রকে জবেহ করবার আর প্রয়োজন নাই। পিতা ও পুত্রের হৃদয় খোদার অসীম করুণার প্রতি কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ হয়ে গেল।