স্টাফ রিপোর্টার
পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-যশোর রেললাইনের নড়াইল অংশের কাজ শুরু হয়েছে। দেশের বৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল, বাণিজ্যিক শহর নওয়াপাড়া ও শিল্পাঞ্চল খুলনাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগে, এমনকি ভারতের পশ্চিবাংলায় যাতায়াতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই রেললাইন।
রেললাইনটি ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের একটি উপ-রুট। তবে গত এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে নড়াইল অংশের কাজ শুরু হলেও অধিগ্রহণ হওয়া জমির মালিকেরা এখানো টাকা পাননি। আদৌ টাকা পাবেন কি না এ নিয়ে রয়েছে তাঁদের মধ্যে শঙ্কা।
ওই প্রকল্প সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে যশোর এই ১৭২ কিলোমিটার জুড়ে চলছে রেললাইন নির্মাণ। চিনের ‘চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লি.’ এর ঠিকাদার। কাজ শেষের মেয়াদ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এতে মোট রেলস্টেশন থাকবে ২০টি। এর ১৪টি নতুন নির্মাণ করতে হবে। ব্রডগেজ এ রেললাইনে ৬৬টি বড় সেতু ও ২৪৪টি ছোট সেতু নির্মাণ করতে হবে। লেভেলক্রসিং গেট থাকবে ৩০টি। নয়টি জেলার ওপর দিয়ে এটি যাবে। ঢাকা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে ভাঙ্গা, নগরকান্দা, মুকসুদপুর, মহেশপুর, কাশিয়ানী, লোহাগড়া, নড়াইল ও জামদিয়া হয়ে যশোরের রুপদিয়ায় রেললাইনে মিশবে। এর মধ্যে ভাঙ্গা, কাশিয়ানী ও যশোরের পদ্মবিলায় রেলওয়ে জংশন হবে। নড়াইল জেলার লোহাগড়া পৌর এলাকার নারানদিয়ায় ও নড়াইল পৌর এলাকার দুর্গাপুরে রেলস্টেশন হবে। ঢাকা থেকে লোহাগড়ার রেলস্টেশনের দূরত্ব ১২৩ ও নড়াইল রেলস্টেশনের দূরত্ব ১৩৮ কিলোমিটার।
নড়াইল জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, নড়াইল জেলায় রেললাইনের মধ্যে পড়েছে ২৮টি মৌজা। এতে ৪০৬ দশমিক ৭১ একর জমি জমি অধিগ্রহণ হবে। সরেজমিনে দেখা গেছে, লোহাগড়া উপজেলা সদরের নারানদিয়া ও মোচড়া এলাকায় চার কিলোমিটার জুড়ে রেললাইন নির্মাণের বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। সেখানে ফসলি জমিতে বালু ভরাট করে রোলার দিয়ে সমান করা হচ্ছে। ভাটিয়াপাড়ায় মধুমতীতে এবং লোহাগড়ার নবগঙ্গায় রেলসেতুর প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে।
এখানে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের পদচারণায় অন্যরকম আমুদে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। আশপাশের গ্রামের মানুষ এ কর্মযজ্ঞ দেখতে ভিড় করছেন। এছাড়া নড়াইল সদর উপজেলায় যৎসামান্য কাজ শুরু হয়েছে। পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের উপপরিচালক (রিসেটেলমেন্ট) মহাব্বতজান চৌধুরী জানান, ‘পদ্মসেতু যেদিন থেকে চালু হবে, সেদিন থেকেই যেন ঢাকা-যশোর ট্রেন চালানো যায় সেভাবে কাজ চলছে।’
এদিকে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় ফসলি জমিতে রেলস্টেশন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে গত এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে। কিন্তু অধিগ্রহণ হওয়া জমির মালিকেরা এখনো টাকা পাননি। টাকা পাবেন কি না এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তাঁরা। স্থানীয়ভাবে রটেছে জমির মালিকেরা টাকা পাবেন না। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন তাঁরা। অধিগ্রহণ ও টাকা বিতরণের দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের।
এ বিষয়ে নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজী মাহাবুবুর রশিদ বলেন, টাকা বরাদ্দ হয়ে আছে, দুশ্চিন্তার কোনো বিষয় নেই। প্রকৃত ভূমি মালিকেরা যাতে সঠিকভাবে টাকা পান, সে জন্য এতে অনেক প্রক্রিয়া আছে। বর্তমানে জমির মালিকদের ৭ ধারার শুনানি চলছে। এসব কাজ শেষে টাকা দেওয়া শুরু হবে। চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্রুত জমি বুঝিয়ে দিতে বলে। তাই জমির মালিকদের নিয়ে সভা করে তাঁদের বুঝিয়ে টাকা দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে দেশের স্বার্থে শুধু ফসলি জমি ছেড়ে দিতে বলা হয়। এতে তাঁরা রাজি হলে কাজ শুরু করা হয়।