ডেস্ক/এসএস
গত ৫ ই আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বদলের পর থেকে সেখানে জারি ছিল ১৪৪ ধারা৷ জানা গিয়েছে যে সোমবার থেকে আংশিকভাবে কারফিউ তোলা হয়েছে ৷ সরকারি দপ্তরগুলো ধীরে ধীরে চালু করা হয়েছে। এপর্যন্ত শ্রীনগরের ৯০০টি স্কুলের মধ্যে মাত্র ১৯৬টি স্কুল খোলা হয়েছে বলে জানান শ্রীনগরের ডেপুটি কমিশনার শাহিদ ইকবাল৷ যদিও অন্যান্যদের দাবি বাস্তবে মাত্র ৯০টি স্কুল খোলা হয়েছে৷ পাশাপাশি আংশিকভাবে চালু করা হয়েছে কাশ্মীরে ল্যান্ডলাইন ও টুজি ইন্টারনেট পরিষেবা৷
অত্র এলাকার ডেপুটি কমিশনার ইকবাল একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সোমবার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের তাদের স্কুলে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন৷ এবিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘কিছু এলাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা কয়েকটি স্কুল খোলার পরামর্শ দিয়েছি৷ বাবা-মায়েদের প্রতি অনুরোধ, যেখানেই স্কুল খুলছে, সেখানে তাদের পাঠান৷ নিরাপত্তার দায় আমাদের৷” যদিও এতো নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর ও স্কুলগুলোতে তেমন শিক্ষার্থীদের উপস্থিত দেখা যায়নি।
এর মধ্যেই অর্থনীতিবিদ জাঁ দ্রাজসহ মোট চারজনের একটি তথ্য অনুসন্ধানকারী দল কাশ্মীর থেকে ঘুরে এসে জানিয়েছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য। তাদের মতে, আপাতদৃষ্টিতে ‘কাশ্মীর স্বাভাবিক’ থাকার যে প্রচারণা সরকারের পক্ষে চালানো হচ্ছে, সেখানে তার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দেখা গিয়েছে ৷
বিভিন্ন স্থানে স্কুল খোলার খবর পাওয়া গেলেও কাশ্মীরের স্থানীয় নেতৃত্বের গৃহবন্দি অবস্থায় কোনো পরিবর্তন ঘটেনি বলে অভিযোগ করেন অনেকেই। সেখানে গত ১৪ দিন ধরে গৃহবন্দি রয়েছেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ, তাঁর পিতা ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের বলিষ্ঠ নেতা ফারুক আবদুল্লাহ, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি, জম্মু কাশ্মীর পলিটিকাল মুভমেন্ট দলের প্রধান শাহ ফয়সালের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব৷ বন্দি অবস্থায় তারা কেমন আছেন সেবিষয়ে কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
মূলত কাশ্মীর সমস্যা গুরুতর হয় যখন আগস্টের ৫ তারিখে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ৩৭০ ধারা এবং ৩৫ (ক) ধারা কে বাতিল করে অকার্যকর করেন। ফলে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা শেষ হয়ে যায়। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করার মধ্য দিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের আগের মর্যাদা ও বাতিল করা হয়। এমনকি তাদের মর্যাদা অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেক নিচে নামিয়ে আনা হয়। প্রথমে এটিকে ইউনিয়ন টেরিটরিতে পরিণত করে এবং এরপর ভেঙে দুই টুকরা করা হয়। একটি জম্মু ও কাশ্মীর এবং অন্যটি লাদাখ।
কিন্তু কাশ্মীরের বেশিরভাগ মানুষ এটা মানতে নারাজ। ৩৭০ ধারা ও ৩৫ (ক) বাতিল করার বিষয়টি কাশ্মীরবাসি সঠিক পদক্ষেপ হয়েছে বলে মনে করছে না। অনেকেই ধারনা করছেন যে এই ঘটনার পর কাশ্মীরীরা ভারতকে আর বিশ্বাস করবে না। কারন এই ধারা তাদের জন্য একটা আস্থা ও বিশ্বাসের যায়গা ছিল। কারণ কাশ্মীর ভারতের সাথে যুক্ত হওয়ার সময় বিশেষ কিছু শর্ত ছিল যার ভিত্তি ছিল এই ৩৭০ ধারাটি। এখন বিশেষ মর্যাদা বাতিল হয়ে গেলে, ভারতের সঙ্গে থাকাটা ও তাদের জন্য যথেষ্ট কঠিন হয়ে পড়বে।
কারণ ১৯৪৯ সালে কার্যকর হওয়া ৩৭০ মোতাবেক, জম্মু ও কাশ্মীর ভারতীয় সংবিধানের আওতার বাইরে ছিল। অর্থ, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও যোগাযোগ ব্যতীত অন্য সকল বিষয়ে জম্মু ও কাশ্মীর আইনসভা এই রাজ্যের জন্য আইন প্রণয়ন করতে পারেনি। এই ধারাবলে এই অঞ্চলের জন্য পৃথক একটি সংবিধান, পৃথক পতাকা প্রতিষ্ঠিত হয়। এমনকি এখানকার জমি-জমা ক্রয়ের অধিকার ছিলো না অন্য অঞ্চলের ভারতীয়দের। এখন সে স্বতন্ত্রতা আর থাকলো না।
১৯৫৪ সালে ৩৫ক ধারা যুক্ত হয়। তবে ৩৭০ ধারা অব্যাহত থাকে। এই ধারা অনুযায়ী, কাশ্মীরের স্থানীয় আইনসভা এই অঞ্চলের স্থায়ী অধিবাসী কারা হবেন, তার সংজ্ঞা প্রদানের অধিকার লাভ করেছিল। এতে উল্লেখ ছিল, বহিরাগতরা এই অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাস, জমি ক্রয়, স্থানীয় সরকারের চাকরি বা শিক্ষাবৃত্তি পেতে পারবেন না। এমনকি এই অঞ্চলের কোনো নারী বাসিন্দা রাজ্যের বাইরের কাউকে বিয়ে করলে তিনিও সম্পত্তি ক্রয়ের অধিকার হারাবেন। পরবর্তীতে ওই নারীর সন্তানরাও সেই অধিকার বঞ্চিত ছিলেন।
৩৭০ বাতিল করার সাথে সাথে বাতিল হয়ে গিয়েছে কাশ্মীরের সকল অধিকার, এমনকি নিজস্ব পতাকা আজ নিঃশ্চিহ্ন। কিন্তু ১৯৫২ সালে কাশ্মীর সংযুক্ত করনের সময় যে সংবিধান প্রণয়ন করা ছিল সেখানে উল্লেখ ছিল ভারতের পতাকা ছাড়াও রাজ্যের একটি নিজস্ব পতাকা থাকবে যা জাতীয় পতাকার প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, যে পতাকা জম্মু কাশ্মীর সহ দেশের সর্বত্র ভারতের জাতীয় পতাকার সমান মর্যাদা পাবে। সে কথা আর রইলো না। কাশ্মীরবাসি কোনভাবেই তাদের রাজ্যের মর্যাদা ও নিজস্ব পতাকা হারানোর বিষয়টি মানতে পারছেনা। বার বার তারা রাস্তায় নেমে এসেছে তাদের মর্যাদা ফিরে পেতে। অবলীলায় প্রাণ দিচ্ছে তাদের নিজস্ব পতাকা উত্তোলন করতে গিয়ে।