কোনভাবে চলছে ৭০ বছরের পুরোনো নড়াইলের মন্ডলভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

0
24

স্টাফ রিপোর্টার

বিভিন্ন সমস্যাকে সাথে করে কোন ভাবে চলছে ৭০ বছরের পুরানো নড়াইলের মন্ডলভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৫০ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও গত ১৬ বছরে দুইবার মধুমতী নদী গ্রাস করেছে বিদ্যালয়টি । যার ফলে শিক্ষার্থী কমেছে। বর্তমানে টিনের ঘর থাকলেও প্রয়োজনীয় কক্ষের অভাব। এদিকে প্রাক-প্রাথমিক (শিশু) শ্রেণীর শিক্ষক নেই। প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক কম থাকায় ব্যাহত হচ্ছে পড়াশোনা।

শিক্ষক, অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির দাবী বিদ্যালয়ে শিক্ষক বাড়াতে হবে এবং ভবন তৈরি করতে হবে, তাহলে প্রাণ ফিরে পাবে পুরানো এ বিদ্যালয়ের। শিক্ষক ও স্থানীয়রা জানান, ১৯৭৩ সালে সরকারি হওয়া ওই বিদ্যালয়ে ২০০২ সালে অন্তত সাড়ে তিন শত শিক্ষার্থী ছিল। বর্তমানে শিক্ষার্থী ৬৩ জন। ২০০৩ সালে বিদ্যালয় ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়। এরপর একটি টিনের ঘরে চলছিল বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। সেটিও ২০০৭ সালে নদীতে গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

এরপর কখনো গাছতলায়, কখনো মসজিদের মক্তবে পড়াশোনার কার্যক্রম চালানো হয়। ২০১০ সালে চার কক্ষের একটি টিনের ঘর তৈরি করা হয়। সেখানেই চলছে বর্তমান শিক্ষা কার্যক্রম। তিনটি গ্রাম নিয়ে বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এলাকা । এগুলো হলো চরখড়গদিয়া, চরগোপালপুর ও মন্ডলভাগ গ্রাম। চরখড়গদিয়া ও চরগোপালপুর গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায়, চরাঞ্চলের এই বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকায় এবং ভবনের অভাবে শিক্ষার্থী দিন দিন কমেছে।

বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে ১৭ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৮ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৬ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১৩ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ১০ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৯ জন শিক্ষার্থীসহ মোট শিক্ষার্থী ৬৩ জন। গত মঙ্গলবার বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, উপস্থিত মোট শিক্ষার্থী ৪৬ জন। গত বছর পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয় মাত্র ৩ জন, ২০১৭ সালে ৩ জন, ২০১৬ সালে ৭ জন ও ২০১৫ সালে ৯ জন।

শিক্ষকেরা জানান, গত পাঁচ বছর আগে থেকে শিশু শ্রেণীর জন্য আলাদা শিক্ষক নিয়োগ হলেও উপজেলার একমাত্র এই বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণীর জন্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। শিশু শ্রেণীর জন্য শিশু বান্ধব পরিবেশে একটি কক্ষ সুজ্জিত করা নির্দেশনা থাকলেও কক্ষের অভাবে অন্য শ্রেণীর ক্লাস নেওয়ায় আলাদা করে শিশু শ্রেণীর জন্য কক্ষ সাজানো হয়নি। বিদ্যালয়ের একমাত্র টিনের ঘরটিতে আছে চারটি কক্ষ। একটিতে কার্যালয়, অন্য তিনটি শ্রেণীকক্ষ। বিদ্যালয়ের প্রথম শিফটে, শিশু, প্রথম, দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণীসহ একসঙ্গে চারটি শ্রেণীর ক্লাস নিতে হয়। দ্বিতীয় শিফটে শিশু শ্রেণীর ক্লাসে চতুর্থ শ্রেণীর ক্লাস হয়।

বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষক আছেন তিন জন। প্রধান শিক্ষক শ্রীপতি কুমার বিশ্বাস এবং সহকারী শিক্ষক আবু ওসমান গনি ও কুলছুম বেগম। তাঁরা বলেন, বিদ্যালয়ে একসঙ্গে চারটি শ্রেণীর ক্লাস নিতে হয়। প্রতি শিক্ষককে অন্তত আটটি করে ক্লাস নিতে হয়।

অপরদিকে শিক্ষকদের আছে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, অফিসিয়াল কার্যক্রম এবং নিতে হয় আপদে বিপদে ছুটি। শিশু শ্রেণীর জন্য শিক্ষক দেওয়া হলে এবং ভবন তৈরী হলে আবার প্রাণ ফিরে আসবে এ পুরানো বিদ্যালয়ের। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার বর্মন বলেন, ‘ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং সামনের নিয়োগ থেকে শিশু শ্রেণীর জন্য শিক্ষক দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।’