নিজস্ব প্রতিবেদক
নড়াইল সদরের শুবুদ্ধিডাঙ্গায় হবখালী আদর্শ কলেজটি সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় ২৯জন শিক্ষক-কর্মচারী মানসিক দিক থেকে একেবারেই ভে’ঙ্গে পড়েছেন। পরিবাররের সদস্যদের নিয়ে তারা মানবেত’র জীবন-যাপন করছেন। সকল শর্তপূরণ হওয়া সত্ত্বেও দেড়যুগ অপেক্ষার পরও এমপিওভূক্তির তালিকা থেকে বাদ পড়ায় তারা আস্তে আস্তে পাঠদানের মনোবলও হারিয়ে ফেলছেন। স্থানীয়দের আশং’কা, শিক্ষকদের হ’তাশার কারণে কলেজটি ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে ২০টি গ্রামের এ কলেজ শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ধ্ব’স নামতে পারে!
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদরের কৃষিপ্রধান হবখালী এলাকার কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ২০০০ সালে নড়াইল-মাগুরা সড়কের শুবুদ্ধিডাঙ্গা গ্রামে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত হবখালী আদর্শ কলেজটি স্থাপন করেন। নড়াইল সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ওই কলেজ থেকে পার্শ্ববর্তী মাইজপাড়া কলেজের দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। ২০টি গ্রামের মধ্যে ৮টি মাধ্যমিকও ৭টি মাদ্রাসাসহ ১৫টি স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠান এটি। ২০০৫ সালে একাডেমিক স্বীকৃতি পাওয়া কলেজ থেকে ইতিমধ্যে বহু ছাত্র দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অথচ শিক্ষক-কর্মচারীরা দেড়যুগ পরে এসে তাঁদের মনোবল একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে। এ কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪’শ। প্রতিবছরেরই এইসএসসি পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক হলেও শিক্ষকদের বেঁচে থাকার জন্য কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
দ্বাদশ শ্রেণীর ইয়াসমিন খানম বলেন, ‘নিজেদের শিক্ষকদের দু’র্দশার বিষয়টি বুঝতে পারলেও কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের কিছুই করার নেই। আমাদের স্যাররা আমাদের অনেক যত্ন করে পড়ান। আদর ও শাসন করেন। কিন্তু তারা বেতন পান না এটা ভাবতে খুবই কষ্ট লাগে। তাঁদের পরিবারের দুঃখ-দু’র্দশার কথা কাউকে বলতে পারেন না।’
এ বিষয় যুক্তিবিদ্যার বিভাগের শিক্ষক শারমীন সুলতানা বলেন, ‘প্রতিদিনই যুক্তিবিদ্যার নানা জটিল বিষয়গুলো খুব সহজভাবে কলেজের শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে থাকি। কিন্তু নিজের জীবনের এমন পরিনতির কোন যুক্তিই খুজে পাচ্ছিনা। তারপরও দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে পড়িয়ে চলেছি। নিজের পেশায় স্বাবলম্বী হবো এমন স্বপ্ন নিয়ে ২০০১ সালে ১০ কিলোমিটার দূরের এ কলেজটিতে যোগদান করেছিম।’
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক পলাশ সোম জানান, ‘বেতন না পেলেও অ’সুস্থতার মধ্যেও ক্লাস নিতে হচ্ছে। কলেজ শেষ করে চিকিৎসার জন্য ছুটতে হয় হাসপাতালে। পকেটে অনেক সময় ওষুধ কেনার টাকাও থাকেনা। এইতো শিক্ষকদের জীবন।’
কলেজের অধ্যক্ষ বি এম বুলবুল ইসলাম বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলে বলেন, ‘জীবনের একটি বড় সময়ে শিক্ষা প্রসারে ব্যস্ত থেকে এখন অবসরের কাছাকাছি এসেছি। বহু ছাত্রের প্রিয় অধ্যক্ষ হলেও অর্থের অভাবে নিজ পরিবারের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি আমার। ৪ কন্যার পরে এক ছেলে হলেও সে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। এ কষ্টের কথা কাকে বলবো ?’
কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এ্যাডঃ সুবাস চন্দ্র বোস ক্ষোভের সংগে জানান, ‘কলেজের শিক্ষকদের দুরাবস্থা দেখলে আমারই কান্না আসে। এমপিওভুক্ত হবার সকল যোগ্যতা থাকার পরেও এমপিওভুক্ত হয়নি। এজন্য আমি হ’তাশ ও হ’তবাক হয়েছি।’
নড়াইল জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম ছায়েদুর রহমান জানান, ‘এমপিওভুক্তির ব্যাপারে আমাদের কিছুই করার নেই। সরকার যখন এমপিওভুক্ত চালু করেছে। সেহেতু প্রতিবছর এমপিওভুক্তির কাজ চলবে। সেক্ষেত্রে এ যোগ্যতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত এমপিওভুক্ত হবে বলে আমি আশা করছি।’