স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার গোপীনাথপুর এলাকার শিহাব মল্লিকের (২৮) অব্যাহত অ’পপ্রচার ও তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে হু’মকি-ধাম’কির প্রতিবা’দে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে নড়াইল প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গোপীনাথপুর এলাকার আবুল খায়ের মোল্যা। তিনি বলেন, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার গোপীনাথপুর এলাকার এনামুল মল্লিকের ছেলে শিহাব মল্লিকের কাছে পাওনা তিন লাখ আট হাজার টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে একই এলাকার মনিরুল মল্লিকদের অব্যাহত হুম’কি দিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১ নভেম্বর বিকেলে শিহাব মল্লিক ও তার মা বিউটি বেগম মনিরুলদের বাড়ির গেটে লা’ঠি দিয়ে প্র’হার করে অশ্লী’ল ভাষায় গা’লিগা’লাজ করে। এক পর্যায়ে মনিরুলের ভাই বদরুল মল্লিক ঘর থেকে বের হলে শিহাব মল্লিক তাকে (বদরুল) বেধড়ক মারধর করে। পরে বদরুলকে অচেতন অবস্থায় লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় শিহাবের বিরু’দ্ধে লোহাগড়া থানায় মামলা দায়ের করা হলে ৩ নভেম্বর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। পরবর্তীতে শিহাব ৭ নভেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরে আসে। শিহাব তার নিজের শরীর নিজেই বিভিন্ন প্রকার দাগের চি’হ্ন বানিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে পুলিশ এবং মামলার বাদী মনিরুলের বিরু*দ্ধে নির্যা’তনের মিথ্যা অভিযোগ আনে। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
আবুল খায়ের মোল্যা বলেন, শিহাবকে গ্রেফতারের পর ৩ নভেম্বর যদি পুলিশ এবং বাদী নি’র্যাতন করে তাকে; তাহলে নির্যা’তনের চারদিন পরে ৭ নভেম্বর অ’সুস্থ হওয়ার কথা নয়! কারাগারে থাকাকালীন অ’সুস্থ হওয়ার কথা। এছাড়া শিহাব মল্লিককে কারাগারে প্রেরণের আগে কোর্টহাজতে থাকা অবস্থায়ও আদালত সংশ্লিষ্ট কাউকে তার ওপর নি’র্যাতনের কোনো কথা বলেনি। বিষয়টি ডাহা মি’থ্যা বলেই কোর্টে বা কারাগারের কাউকে জানায়নি শিহাবসহ তার পরিবার। এদিকে শিহাব একেক সময় একেক রকম তথ্য দিচ্ছে সাংবাদিকদের। যা বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে।
এদিকে গত ৮ নভেম্বর শিহাব লোহাগড়া থানায় একটি মি’থ্যা মামলা দায়ের করেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে-শিহাব কারাগার থেকে বাড়িতে আসার সময় লোহাগড়ার নিরিবিলি পিকনিক স্পষ্টের সামনে তাকে বাদী মনিরুলসহ তার বড় ভাই বদরুল, ছোট ভাই খায়রুল ও মামলার স্বাক্ষী আবুল খায়ের মোল্যা তাকে (শিহাব) গাড়ি থেকে নামিয়ে বেধ’ড়ক মা’রধ’রে জ’খম করে। অথচ ঘটনাস্থলের কেউ বিষয়টি জানেন না।
অন্যদিকে, মনিরুল মল্লিক, বদরুল মল্লিক ও আবুল খায়ের মোল্যাসহ আমাদের পরিবারের সদস্যদের শিহাব ও তার পরিবার অব্যাহত হুম’কি দিয়ে যাচ্ছে। কখনো প্রকাশ্যে, কখনো তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার আমাদের হুম’কি দিচ্ছে। শিহাব মল্লিক নে’শাগ্রস্থ ব্যক্তি বলে অভিযোগ করে আবুল খায়ের মোল্যা বলেন, শিহাব যে কোন সময় আমাদের খুন জ’খম করতে পারে বলে আত’ঙ্কের মধ্যে আছি।
শিহাব আমাদের হুম’কি দিয়েছে- যেখানে যাকে পাবো, খু’ন করে টু’করো টুক’রো করে কে’টে বস্তা ভরে নবগঙ্গা নদীতে ভাসি’য়ে দিবো। আবার ফেসবুকে কখনো হুম’কি দিয়েছে- ‘আয় কা’পুরুষরা সামনে আয়। এতদিন আমার ভালো রূপ দেখেছিস। এবার দেখবি ভিন্ন রূপ। মর’ব না হয় মার’ব। এটাই আমি সিহাব মল্লিক।’ আবার লিখেছে- ‘মামলা আগে একবার খাইছি সেটা মিটেছে গত পাঁচদিন আগে। বড়টা মে’রেছিলাম, এবার ছোটটা আসছে দেশে; এ হচ্ছে আমার চিরো শ’ত্রু খাইরুল।’
এছাড়া শিহাব মল্লিক তথ্য প্রযুক্তির অ’পব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে ফেসবুক ও ইমোর মাধ্যমে আমাদের অশ্লী’ল গালিগালাজ ও হুম’কির পাশাপাশি বিভিন্ন আইডি হ্যা’কড করে থাকে। ইতোমধ্যে এমন কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। গত ১২ নভেম্বর তারিখে মনিরুলের নিজের মোবাইল ফোন নাম্বার ক্লোন করে তার (মনিরুল) নাম্বার থেকে শিহাবের মোবাইল নাম্বারে ভুয়া হু’মকি দিয়ে আমাদের ওপর দো’ষ চাপানোর অ’পচেষ্টা করছে।
আমাদের দাবি, শিহাব মল্লিকের মি’থ্যা বানো’য়াট মামলা এবং পত্রিকায় প্রকাশিত নির্যাতন ও মা’রধরের মি’থ্যা নিউজ তদন্ত সাপেক্ষে শিহাবকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপারের সুদৃষ্টি প্রত্যাশা করছি।
অন্যদিকে কোনো কোনো গণমাধ্যমে এসেছে, শিহাবের বিদেশ যাওয়া কেন্দ্র করে মনিরুল মল্লিকের সাথে তার ঝামে’লা হয়েছে এবং সেই সূত্র ধরে তাকে মা’রধ’র করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে শিহাব মল্লিক ২০১৭ সালে সৌদি যায়। বিদেশে ভালো থাকার বাস্থান না থাকায় মনিরুলের ছোট ভাই খায়রুল ইসলামের বাসায় মক্কাতে অবস্থা করে। একই সময়ে মনিরুলও বিদেশ যায়। শিহাবের বিদেশ যাওয়ার সাথে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। অন্যদিকে বিদেশে যাওয়ার কিছুদিন পরে শিহাব চাকুর পেয়ে যায়। কিন্তু মনিরুলের কাজ না থাকায় দেশে চলে আসে। শিহাবের চাকুরি হলে তিনি মক্কা থেকে জেদ্দায় চলে যান। চাকুরির কিছুদিন পর তার আকামার তারিখ শেষ হয়ে যায়। শিহাব নে’শাগ্রস্থ হওয়ায় বিদেশে চাকরি করলেও কোন টাকা জমা করতে পারেনি। নে’শার জগতে টাকা ব্যয় করেছে। আকামার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য শিহাবের বাবা এনামুল মল্লিক মনিরুলের ছোট ভাই খায়রুল ইসলামকে অনুরোধ করে। তার (এনামুল মল্লিক) অনুরোধে খায়রুল শিহাবের আকামা নবায়ন করার জন্য তিন লক্ষ আট হাজার টাকা ধার দেয়।
শিহাবের বাবা এনামুল মল্লিক কথা দেন, এই টাকা কিছুদিনের মধ্যে পরিশোধ করে দিবেন। এরপর আকামা নবায়ন হলে শিহাব ইয়ামবু চলে যায়। কিছুদিন পরে সেখানে চাকুরি ছেড়ে শিহাব রিয়াদ চলে আসে। রিয়াদে চাকুরিকালীন শিহাব তার বউয়ের সাথে বি’বাদে জড়িয়ে পড়ে। স্ত্রীর সাথে বি’বাদের কারণে শিহাব জরুরি ভিত্তিতে তিনমাসের ছুটিতে বাড়িতে চলে আসে। পারিবারিক কো’ন্দল মিমাংসা না হওয়ায় শিহাব আর বিদেশে ফেরেনি। শিহাব আমাদের পাওনা টাকাও পরিশোধ করেনি।
এ ঘটনায় গত ১২ মে লোহাগড়া থানায় মামলা দায়েরের পর নবগঙ্গা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন, লোহাগড়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গিয়াস ভূঁইয়া, শিহাব মল্লিকের চাচা আসাদ মল্লিক, মোনায়েম মল্লিক এবং গোপীনাথপুরের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম এবং জহিরুল ইসলামসহ অনেকে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে শালিস শেষে টাকার দায় ভার নেয় শিহাব মল্লিকের চাচা আসাদ মল্লিক ও মোনায়েম মল্লিক। ফলে মামলাটি সেপ্টেম্বরের ২৯ তারিখে প্রত্যা’হার করে নেয়া হয়। মামলা প্রত্যা’হারের পর শিহাবের আচরণ বদলে যায়। প্রায় প্রতিদিনই শিহাব মনিরুলদের বাড়ির গেটে লাঠি দিয়ে প্রহারসহ গা’লিগা’লাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া আমাদের হুম’কি দিচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভু’ক্তভো’গী লোহাগড়া উপজেলার গোপীনাথপুর এলাকার মনিরুল মল্লিক, নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামুল কবির টুকু, সাধারণ সম্পাদক শামীমূল ইসলাম টুলুসহ গণমাধ্যমকর্মীরা।