কবিতা- অভিজিৎ কর্মকার
পুঁজিবাদী মানুষের দুনিয়ায়
নিজের গুরত্ব বোঝাতে মানুষকে গম্ভীর হতে হয়।
হাসি পেলেও চোয়াল শক্ত করে
দাঁত দিয়ে সজোরে কামড়ে ধরতে হয় জীভ
প্রেমিকার লিপস্টিকে মোড়ানো ঠোঁট,
কৃত্রিম চোখ দেখে বলতে হয়, তোমার চোখের মতো মায়াবী চোখ, তোমার ঠোঁটের মতো
অপূর্ব ঠোঁট পৃথিবীতে আমি কখনও দেখিনি আর
পুঁজিবাদী মানুষের দুনিয়ায়
শরীরে সুগন্ধী সাবান মেখে লুকোতে হয়
শরীরে লেগে থাকা মাটির ঘ্রাণ, প্রসাধনে ঢাকতে হয় চিবুকের কাটা দাগ, মুখের ওপরের তিল, পোশাকের আবরণে আড়াল করতে হয় জন্মসূত্রে পাওয়া পিতা প্রপিতামহের জন্ম দাগ।
পুঁজিবাদী মানুষের দুনিয়ায়
হাসি না পেলেও মাঝেমাঝে দাঁত মুখ
খিঁচিয়ে হাসতে শিখতে হয়। হাসতে হাসতে জানতে হয় নিঁখুতভাবে কান্নার নিপুন কৌশল আর মনের গোপন কথা বলবার আগে বারবার মহড়া দিয়ে নিজেকে ঝালিয়ে নিয়ে হতে হয় তুখোড় অভিনেতা
পুঁজিবাদী মানুষের দুনিয়ায়
ভালোবাসার আগে মেলাতে হয়
যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ জটিল সমীকরণ
প্রেমিকার চোখ ছুঁয়ে দেখার আগে
প্রেমিকার আঙুলের কাছে প্রেমিককে গচ্ছিত রাখতে হয় সর্বস্ব। মাঝেমাঝে পুরুষ পতিতার পায়ের নখের কাছে রাতের অন্ধকারে একান্ত প্রয়োজনে হাসিমুখে মাথা নত করতে হয়।
অনচ্ছিা সত্বেও কৃতজ্ঞতা আর বিনম্র শ্রদ্ধা
জানাতে হয় অজস্র বিশ্ব বেহায়াকে
যার চরিত্র, নীতি, আদর্শ বলে কিছু নেই
গভীর অন্ধকারে পতিত যে, লাম্পট্য, ভন্ডামি, অসততা আর মানুষ ঠকানোর বিদ্যায় সিদ্ধঃহস্ত উৎসর্গ পত্রে তার নামে লিখতে হয় বিশেষণের
পর বিশেষণ সাজিয়ে অমর পঙক্তিমালা।
পুঁজিবাদী দুনিয়ায় যদিও পয়সায় সব মেলে
তবু বিনা পরিশ্রমে বিনা পয়সায় প্রসিদ্ধ শিল্প বোদ্ধা, পরগাছা বুদ্ধিজীবী, কবি, সাহিত্যিক, অভিনেতা কিংবা অভিনেত্রী, রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার জন্য হতে হয় একান্ত অনুগত পা চাটা কুকুর।
ভন্ডদের বিশেষ আস্থাভাজন হওয়ার জন্য
হতে হয় মহা ভন্ড। কথায় কথায় ঝাকাতে হয় নোয়াতে নোয়াতে মাটির সাথে নুইয়ে যাওয়া মাথা।