স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইল সদর উপজেলার মুলিয়া ইউনিয়নের কৃষক মিন্টু সরকার, সঞ্জিত মহলদার, অন্নদা বিশ্বাস, কামনাশীষ বিশ্বাস তারা সবাই ১৩ বছর থেকে ২৫ বছর ধরে ধানের আবাদ করছেন। কিন্তু এই প্রথম ধান দিতে সদর উপজেলা খাদ্য বিভাগে (এলএসডি) এসেছেন। নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার পক্ষ থেকে মোবাইলে ফোন করে বলা হয়েছে যে তারা লটারিতে ধান দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তারা যেন খাদ্য গুদামে গিয়ে ধান দেন। কেউ কোনো অর্থ দাবি করলে বা খারাপ ব্যবহার করলে নির্দিষ্ট দু’টি ফোন নম্বরে জানাতে বলা হয়েছে। তারা জানান,আগে কখনও এভাবে কেউ ফোন করেনি বা অনুপ্রাণিত করেনি। সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের কৃষক সুমন সরদার ও ইউনুস মোল্যা এসেছেন খাদ্য গুদামে ধান দিতে। তারাও জানান, এমপির পক্ষ থেকে ফোন করা হয়েছে এবং ধান দিতে উব্দুদ্ধ করা হয়েছে । লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের দীপংকর লস্কর, ডাকু মোল্যা, দীপংকর বিশ্বাস, নোয়াকগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক সোহাগ মিয়া জানান একই কথা। এভাবে নড়াইল ও লোহাগড়া উপজেলার ৩ হাজার ১৫০জন কৃষক সবাইকে এমপির পক্ষ থেকে ফোন করে ধান দিতে অনুরোধ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১হাজারের বেশী কৃষককে ফোন করে তাদের তালিকাভূক্তির কথা জানানো হয়েছে। বাকিদের এক সপ্তাহের মধ্যে জানানো সম্পন্ন হবে।
নড়াইলে এই প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে ধান সংগ্রহে উন্মুক্ত লটারির মাধ্যমে কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফীর পক্ষ থেকে তালিকাভূক্ত কৃষকদের ফোন করে খোঁজ-খবর এবং বিভিন্ন সৎ উপদেশ দেওয়া হচ্ছে। কৃষক যাতে দালালদের খপ্পরে না পড়ে সেজন্য সতর্ক ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এসব কারণে পাল্টে গেছে নড়াইল, নলদী ও লোহাগড়া খাদ্য গুদামের চিত্র। খাদ্য গুদামের কর্মকর্তাও কৃষকদের সাথে সহযোগিতামূলক আচরণ করছেন। তবে সব ইউনিয়নে ধানের আদ্রতা পরিমাপক যন্ত্র না থাকায় ধানের সঠিক আদ্রতা পরিমাপ নিয়ে কিছু সমস্যা তৈরি হচ্ছে। গ্রামের অধিকাংশ কৃষক সেই সনাতন নমুনা জরিপের মাধ্যমে ধান দাঁতে কামড়িয়ে আদ্রতা পরিমাপের চেষ্টা করছেন। ফলে সঠিক পরিমাপে সমস্যা হচ্ছে।
নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার কৃষি বিষয়ক প্রতিনিধি মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, অধিকাংশ কৃষক জানেনা তারা তালিকাভূক্ত হয়েছে। তাদেরকে বিষয়টি জানাতে এবং সচেতন করতে এছাড়া কোনো প্রভাবশালী এবং সিন্ডিকেট যাতে গুদামে ধান দিতে না পারে সেজন্য একটু কষ্ট হলেও কয়েকজনকে সাথে নিয়ে কৃষকদের কাছে ফোন করা হ”েছ। এমপির আশা প্রকৃত কৃষকরা যেন জানতে পারে এবং সরাসরি গুদামে এসে ধান দিতে পারে। আগামি বোরো মৌসুমেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানান।
নড়াইল সদর উপজেলা খাদ্য গুদামের (এলএসডি) খাদ্য পরিদর্শক তরুন বালা বলেন, খাদ্য গুদামের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ইউনিয়নের মাইকে প্রচার এবং লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে এবং খাদ্য গুদামের দেয়ালে কৃষকদের তালিকা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব এবারই প্রথম বলে জানান। এমপির প্রতিনিধি কৃষকদের ধান দিতে অনেক সহযোগিতা করছে। না হলে রাঘববোয়ালদের ঠেকানো সম্ভব হতো না। তিনি কৃষকদেও উদ্যেশ্যে বলেন, ধান গুদামে আনার পূর্বে ইউনিয়ন বা উপজেলা কৃষি অফিস বা খাদ্য গুদামে এসে কৃষকদেও ধানের আদ্রতা সঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা কওে নিতে বলা হয়েছে।
লোহাগড়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মান্নান আলী বলেন, আমার চাকরি জীবনে এ ধরনের নজির নেই যে কোনো এমপির প্রতিনিধি এভাবে কৃষকদের খোঁজ-খবর নিয়েছে। এমপির পক্ষ থেকে কৃষকদেও ফোন কওে খাদ্য গুদামে ধান দিতে উৎসাহিত করা খুবই ইতিবাচক পদক্ষেপ। এটা সারা দেশের একটি মডেল হতে পারে।
নড়াইল জেলা খাদ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শেখ মনিরুল হাসান বলেন, বলেন, এমপি মহোদয়ের এ ধরনের পদক্ষেপের ফলে প্রকৃত কৃষকরা ভীষনভাবে উপকৃত হবে এবং প্রভাবশালী এবং দালালদের দৌরাত্ম কমবে।
জানা গেছে, গত ২৬ নভেম্বর ও ১ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো লোহাগড়া ও সদর উপজেলায় ধান সংগ্রহে উন্মুক্ত লটারির মাধ্যমে কৃষকদের চুড়ান্ত তালিকা করা হয়। সদর উপজেলায় ৬ হাজার ৬শ ৮৪জন কৃষকের মধ্য থেকে ১৯শ৭৫ জন এবং লোহাগড়া উপজেলায় ৬ হাজার ৫শ জন কৃষকের মধ্য থেকে ১১শ ৭৫জন কৃষককে বাছাই করে চুড়ান্ত তালিকা করা হয়েছে। ২৬ টাকা কেজি দরে এ বছর সদর উপজেলায় ১৯৭৫ মেঃটন এবং লোহাগড়া উপজেলায় ১০৮৮ মেঃটন আমন ধান সংগ্রহ করা হবে। ২৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ধান সংগ্রহ অভিযান চলবে।