খুলনা বিভাগে প্রথম ‘স্বাধীনতা পদক’ পাচ্ছেন কথা সাহিত্যিক নড়াইলের রইজ উদ্দিন

1154
515
খুলনা বিভাগে প্রথম ‘স্বাধীনতা পদক’ পাচ্ছেন কথা সাহিত্যিক নড়াইলের রইজ উদ্দিন
খুলনা বিভাগে প্রথম ‘স্বাধীনতা পদক’ পাচ্ছেন কথা সাহিত্যিক নড়াইলের রইজ উদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনা বিভাগের মধ্যে প্রথম ‘স্বাধীনতা পদক’ (সাহিত্য ক্ষেত্রে) এর জন্য মনোনীত হলেন কথা সাহিত্যিক রইজ উদ্দিন। তার পুরো নাম এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদ। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কুমড়ি গ্রামের কৃতি সন্তান তিনি। ‘সাহিত্য’ ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য স্বাধীনতা পদকে মনোনীত হয়েছেন এই কথা সাহিত্যিক। এজন্য বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানানো হয়েছে। আগামি ২৫ মার্চ সকাল ১০টার দিকে ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২০’ প্রদান করবেন।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মুক্তিযোদ্ধা এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদ ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২০’ (সাহিত্য ক্ষেত্রে) এর জন্য মনোনীত হয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য আরো আট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে এ পদক প্রদান করা হবে। এদিকে, নড়াইলসহ খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় কোনো ব্যক্তি (রইজ উদ্দিন) এই প্রথম সাহিত্য ক্ষেত্রে স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন।

তার এ কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য নড়াইল প্রেসক্লাব, কালিয়া প্রেসক্লাব, লোহাগড়া রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকাস্থ নড়াইল সাংবাদিক ফোরাম, দৈনিক ওশান, মনিকা লতা একাডেমি, আঞ্চলিক শিল্প-সাহিত্য পরিষদ, সবুজকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা, দিবা ইয়ূথ সোসাইটি, উৎসর্গ ফাউন্ডেশন, কামনা শিশু সেন্টার, কথামালা সাহিত্য পরিষদ, নড়াইল চাইল্ড ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়েছে।

আরো অভিনন্দন জানিয়েছেন-নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামুল কবির টুকু, দৈনিক ওশান সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর সিদ্দিকী, নড়াইল প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি সুলতান মাহমুদ, সহকারী অধ্যাপক বেলাল সানী, উৎসর্গ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস, জেলা শাখার যুগ্মআহবায়ক মনিরুজ্জামান চৌধুরী, সদস্য সচিব মাহফুজুল ইসলাম মুন্নু, কালিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মশিউল হক মিটু, সাধারণ সম্পাদক শাহীদুল ইসলাম শাহী, লোহাগড়া রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির লিটন, মুক্তিযোদ্ধা কুমড়ি গ্রামের শেখ নওশের আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্মসম্পাদক শরীফ মনিরুজ্জামান, দিঘলিয়া ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি অহিদুর রহমান, মনিকা লতা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এম সবুজ সুলতান, দিবা ইয়ূথ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মোছাব্বির হোসেন মোরাদ প্রমুখ।

অহিদুর রহমান বলেন, রইজ উদ্দিন ১৯৭১ সালের রণাঙ্গনের একজন সাহসী যোদ্ধা। তিনি স্বাধীনতা পদকে মনোনীত হওয়ায় দিঘলিয়া ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানাই। সাহিত্য ক্ষেত্রে রইজ উদ্দিনের অবদান যথাযথ ভাবে মূল্যায়ন করায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ।

মুক্তিযোদ্ধা কুমড়ি গ্রামের শেখ নওশের আলী বলেন, এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদ আমার সঙ্গে লোহাগড়া ও নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করেছেন। তিনি সবসময় মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। রইজ উদ্দিন এ বছর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হওয়ায় আমরা আনন্দিত।

আ’লীগ নেতা শরীফ মনিরুজ্জামান বলেন, সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের জন্য নড়াইলের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সন্তান রইজ উদ্দিনকে স্বাধীনতা পদকে মনোনীত করায় আমরা গর্বিত। এ আনন্দ শুধু কুমড়ি গ্রামবাসীর নয়, পুরো নড়াইলবাসীর। তবে গ্রামের সামাজিক দ্বন্দ্ব ও হিংসার কারণে এলাকার কিছু লোক রইজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা ও অপপ্রচার করছে। এর তীব্র নিন্দা জানাই।

নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামুল কবির টুকু বলেন, রইজ উদ্দিন অনেক সংগ্রাম করে বেড়ে উঠেছেন। তার দীর্ঘদিনের সাহিত্য সাধনার ফল হিসেবে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করায় আমাদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। তার আরো সাফল্য কামনা করি।

দৈনিক ওশান সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর সিদ্দিকী বলেন, নড়াইলের মাটি ও মানুষের সন্তান রইজ উদ্দিন একজন সুসাহিত্যিক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত। স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হওয়ায় আমরা আনন্দিত। নড়াইলসহ খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় রইজ উদ্দিন প্রথম সাহিত্য ক্ষেত্রে স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন। এর আগে ১৯৯৩ সালে বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান তার শিল্পকর্মের জন্য ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ লাভ করেন।

মুক্তিযোদ্ধা ও সাহিত্যিক এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদ বলেন, এ আনন্দ ও অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হওয়ায় আমার লেখালেখির দায়িত্ববোধ আরো বেড়ে গেছে বলে আমি মনে করি।

তিনি জানান, তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৩০টি। এছাড়া সম্পাদিত বইয়ের সংখ্যা একশ’ বেশি। তিনি গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছড়া, আঞ্চলিক ইতিহাস, ভ্রমণ কাহিনী, কাহিনী কাব্য, ইতিহাস-ঐহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান, রম্য রচনা, গবেষণা গ্রন্থ, বয়স্ক শিক্ষার বই, সম্পাদনা বই, প্রশিক্ষণ গাইডসহ বিভিন্ন ধরণের বই লিখেছেন।

সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ ১৩টি পুরস্কার লাভ করেছেন। এবার স্বাধীনতা পুরস্কারে মনোনীত হয়েছেন। আগামি ২৫ মার্চ আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২০’ দেয়ার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ পদক প্রদান করবেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদের বাবার নাম তাহাজ্জুদ্দিন আহম্মদ ও মায়ের নাম মনু বিবি। পৈতৃক নিবাস নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কুমড়ি গ্রামে হলেও চাকুরি সূত্রে দীর্ঘদিন ধরে খুলনা শহরের বসুপাড়া বাঁশতলা এলাকায় বসবাস করছেন। বাংলা সাহিত্যে এম এ পাসসহ এলএলবি ও হোমিওপ্যাথিতে ডিএইচএমএস করেছেন। খুলনা বিভাগীয় উপভূমি সংস্কার কমিশনার (যুগ্মসচিব) থেকে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি অবসরে গেছেন রইজ উদ্দিন। এদিকে ১৪টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত আছেন তিনি। স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়ে ও পুত্রবধূদের নিয়ে সুখের সংসার তার।