স্টাফ রিপোর্টার
কেন্দ্রীয় ও নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশনা উপেক্ষা করে হাইব্রিডদের প্রাধান্য দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এমন নেতাও আছেন যারা বিএনপির কমিটিতে থেকেও আওয়ামী লীগ তথা অঙ্গ ও সহযোগী সংঘঠনের কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছে। এ সমস্ত কারণে তৃণমুল আ’লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এছাড়া হাইব্রিড আ’লীগদের দখলে দলের বেশ কয়টি জেলা ও উপজেলার অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের কমিটির রয়েছে। যা নিয়ে প্রতিনিয়ত আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির বর্তমান সভাপতি সাবেক চাঁচুড়ী ইউপি সদস্য মো.কাতেবর রহমান দীর্ঘ সময় ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছেন। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবরে গঠিত চাঁচুড়ী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে সভাপতি মৃত্যুবরণ করায় ২০০৯সাল থেকে অধ্যাবধী ওই ওয়ার্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। অথচ এই নেতা সম্প্রতি উপজেলার চাঁচুড়ী ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ড আ’লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। শুধু এ ইউনিয়নেই নয়, জেলার অনেক ইউনিয়নে এবং জেলা শ্রমিক লীগের কমিটিতে বিতর্কিতদের নিয়ে কমিটি গঠনসহ নতুন কমিটিতে বিএনপি-জামায়াতের লোকদের প্রাধান্য দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
আরও জনা যায়, আব্দুল আলিম নামে জনৈক ব্যক্তি হঠাৎ নড়াইল জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কেন্দ্র থেকে একটি অনুমোদিত কমিটি ২০১৮সালে নিয়ে আসেন। এর আগে তাকে এ দলের কোন কর্মকান্ডে বা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকতে দেখা যায়নি। অথচ রাতারাতি আ’লীগ বনে গেলেন তিনি। তিনি উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়নের দেওয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত আব্দুর রজ্জাক শেখের ছেলে। তারা মুসলীম লীগ সমর্থিত পরিবার। পরবর্তীতে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রাজনীতি করে আসছেন তার পরিবার। তার আপন চাচাতো ভাই কামাল শেখ বর্তমান কালিয়া উপজেলা যুবদলের আহবায়ক হিসেবে দায়িত্বে আছেন। তার চাচা মরহুম আবুল কাশেম লেন্টু নড়াইল জেলা ও কালিয়া উপজেলা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। পাশাপাশি নড়াইল-১ আসনের আ’লীগের এমপি কবিরুল হক মুক্তির পিতা সাবেক এমপি এখলাছ উদ্দিন আহম্মেদকে ১৯৮৫সালের ১১জুন উপজেলার বারইপাড়া খেয়াঘাটে নৃ*শং*সভাবে হ*ত্যা ও ১৯৯৫ সালে যুবলীগ নেতা শাহীন ও লিচুকে গাজীর হাট বাজারে নির্ম*মভাবে হ*ত্যা করে । ওই দুই হ*ত্যা মা*মলায় জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীমের চাচা আবুল কাশেম লেন্টু অন্যতম আ*সামী ছিলেন। এছাড়া আলীমের বিরু*দ্ধে আ’লীগ তথা শ্রমিক লীগকে বিতর্কিত করার কর্মকান্ডে লি*প্ত থাকার অভিযোগসহ দলীয় পদ পদবী নিয়ে বাণিজ্য করার ব্যাপক অভিযোগও রয়েছে ।
এছাড়া কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সভাপতি আবুল বাশার মোল্যার আপন ভাই ও ওই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফুর মোল্যার আপন চাচাতো ভাই স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালী নেতা আশরাফুল ইসলাম ২০০৯ সালে রাতারাতি আ’লীগ নেতা বনে যান।
এভাবে দল ভারি করতে স্থানীয় আ’লীগ নেতারা বিভিন্ন দল থেকে নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে ভেড়াচ্ছেন। নব্য এই আওয়ামী লীগরাই আবার দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি পেয়ে যাচ্ছেন।। অনেকে দলীয় মনোনয়নে জনপ্রতিনিধিও নির্বাচিত হয়ে যাচ্ছেন। এই ধারায় ব’ঞ্চিত হতে হচ্ছে পুরনো, ত্যা’গী ও পো’ড় খাওয়া আওয়ামী লীগারদের। জেলার উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বেশ ঘটা করেই বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের কোনো এমপি কিংবা জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কোনো নেতার হাত ধরে ক্ষমতাসীন দলের ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। রাতারাতি হয়ে গেছেন আ’লীগের প্রভাবশালী নেতা।
দলীয় সূত্র জানায়, গত ৩ ডিসেম্বর’১৯ নড়াইল জেলা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে জেলার কালিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের কয়েকটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যার বেশিরভাগ কমিটিতে বিতর্কিতরা স্থান পাওয়ায় সমালোচনার ঝ’ড় ওঠে। এরপর জেলা কমিটি বাকি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের সব সম্মেলন স্থগিত রেখেছে। আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে কালিয়া উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর উপজেলার সব ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলনগুলো অনুষ্ঠিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে শীর্ষ নেতাদের ঘনিষ্ঠ বিএনপি নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে বিতর্কিতদের পদ দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে উপজেলার পাঁচগ্রাম, পেড়লী, পুরুলিয়া, কলাবাড়ীয়া, বাঐশোনা, পহরডাঙ্গা, মাউলি, বাবরা-হাচলা ও হামিদপুর ইউনিয়নসহ কালিয়া পৌরসভার তৃণমূলের ত্যা’গী নেতা-কর্মীরা হাইব্রিড আ’লীগের চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন বলে তারা ক্ষো*ভের সঙ্গে অভিযোগ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম বলেন, ‘২০১৯সালে জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। এর আগে ২০০৭সাল থেকে ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে রাজনীতিতে এসেছি। আমার পরিবার বা আত্মীয় স্বজন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কি-না তা আমি জানিনা। ’আপনার চাচাতো ভাই কামাল শেখ কালিয়া উপজেলা যুবদলের আহবায়ক কি-না ? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘আমার জানা নেই।’
এ ব্যাপারে চাঁচুড়ী ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির বর্তমান সভাপতির পাশাপাশি সদ্য আ’লীগ থেকে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মো.কাতেবর শেখ বলেন, ‘২০০৮সালে স্থানীয় ইউনিয়নের নেতাদের উপস্থিতিতে আমি আ’লীগের যোগদান করেছি। আগে বিএনপি করতাম।