নিজস্ব প্রতিবেদক
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত চলমান সাধারণ ছুটিতে রয়েছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো বন্ধ রয়েছে দেশের সকল কিন্ডারগার্টেন স্কুল। সরকারি স্কুল ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ভেতরও বেতন পাচ্ছে সরকারিভাবে। কিন্তু এই করোনার দুর্দিনে চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে দিন কাটাচ্ছে কিন্ডারগার্ডেন স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ।
দেশে ব্যক্তি মালিকানাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কিন্ডারগার্টেন, স্কুল-কলেজের সংখ্যা ৬০ হাজারের অধিক। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি এই ব্যক্তি মালিকানাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সারা দেশে এক কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণ করছে। সেই সঙ্গে এর মাধ্যমে সারা দেশজুড়ে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার বা কোনো সংস্থার সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়াই পরিচালিত হয়ে থাকে।
অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল, কলেজ ও সংস্কৃতি একাডেমি গুলো ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত। তাদের মাসিক সম্পূর্ণ আয়ের ৪০ শতাংশ ঘর ভাড়া, কর্মরত শিক্ষক শিক্ষিকাদের ৪০ শতাংশ বেতন-ভাতায় ব্যয় হয়। বাকি ২০ শতাংশ গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় হয়। বর্তমানে এসব অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই ভর্তুকি দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।
ঠিক তেমনি নড়াইল জেলা শহর সহ লোহাগড়া ও কালিয়াতেও রয়েছে প্রায় শতাধিক এ জাতীয় ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। তবে, প্রকৃতপক্ষে এর সংখ্যা আরো বেশি হবে।
নড়াইল জেলার কয়েকটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক সাংস্কৃতিক একাডেমির পরিচালকেরা হতাশার স্বরে জানান, “শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমরা সকলেই দিশেহারা। সবাই বর্তমানে একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনযাপন করছি। একদিকে করোনা মহামারী আতঙ্ক; অন্যদিকে জীবিকা নির্বাহ।
প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতায় গৃহহীন-ভূমিহীনদের ৬ মাসের খাদ্য ও নগদ অর্থ দেওয়া হচ্ছে। গার্মেন্টস মালিক শিল্পপতিদের শ্রমিকদের বেতন দেয়ার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিচ্ছেন। কিন্তু আমরা ব্যক্তি মালিকানাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালক ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা এই বিশাল ব্যয়ভার কীভাবে বহন করবো? যেখানে কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক পর্যন্ত আমাদের লোন দিতেও চাই না।”
নড়াইল মনিকালতা একাডেমির পরিচালক মোঃ সবুজ সুলতান ও লোহাগড়া কামনা শিশু সেন্টারের পরিচালক ও প্রধান শিক্ষক সহ কয়েকজন প্রতিষ্ঠান প্রধান শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে ঈদুল ফিতরের পরে যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার নির্দেশ আসে আমাদের কী অবস্থা হবে?
যদি এরকম অবস্থা হয় তাহলে এপ্রিল মাসের ঘর ভাড়া, সাথে শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দের ৩ মাসের বেতন-ভাতা, বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য ব্যয়ভার আমাদের ওপর পড়বে। যা আমাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব না।
তারা আরো বলেন, “প্রধানমন্ত্রী দেশের এই সংকট মুহুর্তে বিভিন্ন বিভাগের অসহায় মানুষের জন্য আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
এ জন্য আমরাও সরকার প্রধানকে ধন্যবাদ জানাই। স্থানীয় সরকার, জেলা প্রশাসক ও সংসদ সদস্য মহাদয়ের প্রতি বিনীত আবেদন, এই দুর্দিনে আপনারা আমাদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। নতুবা আমাদের জীবনযাপন দূর্বিসহ হয়ে উঠবে। সহযোগিতা পেলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো আরও উৎসাহিত হবে এবং শিক্ষা প্রসারে সহায়ক হবে।”