জাতীয় ডেস্ক
করোনা ভাইরাস বিস্তার রো*ধ ও পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে আগামী ৩১ মে থেকে শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে অফিস খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আপাতত ১৫ জুন পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ মে) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সহকারি সচিব তৌহিদ ইলাহী স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসজনিত রো*গে কোভিড-১৯ এর বিস্তার রো*ধে এবং পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে আগামী ৩১ মে থেকে শর্তসাপেক্ষে দেশের সার্বিক কার্যাবলি এবং জনসাধারণের চলাচলে নি*ষেধাজ্ঞা আরোপ সীমিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনের ১৫ টি শর্তের উল্লেখ করা হয়েছে। শতসমূহে বলা বলা হয়েছে, ১. আগামী ৩১ মে ২০২০ থেকে ১৫ জুন ২০২০ পর্যন্ত এ নিষে*ধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। ৫, ৬, ১২ ও ১৩ জুন ২০২০ সাপ্তাহিক ছুটি এ নিষে*ধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
২. নিষে*ধাজ্ঞাকালে এক জেলা হতে অন্য জেলায় জনসাধারণের চলাচল ক*ঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। প্রতিটি জেলার প্রবেশ ও বহির্গমন পথে চেকপোস্টের ব্যবস্থা থাকবে। জেলা প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় এ নিয়ন্ত্রণ সতর্কভাবে বাস্তবায়ন করবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধকল্পে চলাচলে নিষে*ধাজ্ঞাকালে জনগণকে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে। রাত ৮ টা হতে সকাল ৬ টা পর্যন্ত খুব জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (প্রয়োজনীয় ক্রয়-বিক্রয়, কর্মস্থলে যাতায়াত, ঔ*ষধ ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃ*তদে*হ দা*ফন/সৎ*কার ইত্যাদি) কোনভাবেই বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। তবে সব সময়ই বাইরে চলাচলের সময় মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অন্যথায় নির্দেশ অমা*ন্যকারীর বিরু*দ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রহণ করা হবে।
৩. নিষে*ধাজ্ঞাকালীন জনসাধারণ ও সব কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশমালা কঠো*রভাবে মেনে চলতে হবে। ৪. হাটবাজার, দোকান-পাটে ক্রয় বিক্রয়কালে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য বিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে। শপিংমলের প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শপিংমলে আগত যানবাহনসমূহকে অবশ্যই জী*বাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। হাটবাজার, দোকানপাট এবং শপিংমলসমূহ আবশ্যিকভাবে বিকাল ৪ টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে।
৫. আইন-শৃঙ্খলা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কার্যে নিয়োজিত সংস্থা এবং জরুরি পরিসেবা, যেমন-ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফা*য়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (স্থল বন্দর, নদীবন্দর এবংসমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবারসঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নি*ষেধাজ্ঞার আওতা-বহির্ভূত থাকবে।
৬. সড়ক ও নৌপথে সকল প্রকার পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত যানবাহন (ট্রাক, লরি, কার্গো ভেসেল প্রভৃতি) চলাচল অব্যাহত থাকবে। ৭. কৃষি পণ্য, সার, বীজ, কী*টনা*শক, খাদ্য, শিল্প পণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল, কাঁচাবাজার, খাবার, ঔ*ষধের দোকান, হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এসবের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ক্ষেত্রে এ নিষে*ধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
৮. চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মী এবং ঔ*ষধসহ চিকিৎসা সর*ঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মী, গণমাধ্যম (ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া) এবং ক্যা*বল টিভি নেটওয়ার্কে নিয়োজিত কর্মীরা এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবেন।
৯. ঔ*ষধশিল্প, কৃষি এবং উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো, উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী শিল্পসহ সকল কলকারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করে চালু রাখতে পারবে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কর্তৃক প্রণীত বিভিন্ন শিল্প কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণে নির্দেশনা প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে।
১০. নিষে*ধাজ্ঞাকালীন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে না। তবে, অনলাইন কোর্স/ডিস্টেন্স লার্নিং অব্যাহত থাকবে। ১১. ব্যাংকিং ব্যবস্থা পূর্ণভাবে চালু করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
১২. সকল সরকারি/আধাসরকারি/স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিসসমূহ নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। ঝুঁ*কিপূর্ণ ব্যক্তি, অসু*স্থ কর্মচারী এবং সন্তান সম্ভবা নারীরা কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এক্ষেত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিতকরণের জন্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জারিকৃত ১৩ দফা নির্দেশনা কঠো*রভাবে অনুসরণ করতে হবে। জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় ক্ষেত্র ব্যতীত সকল সভা ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে আয়োজন করতে হবে।
১৩. উক্ত নিষে*ধাজ্ঞাকালে কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবে না। উক্ত সময়ে শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্য সম্মত বিধি নিশ্চিত করে গণপরিবহণ, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল করতে পারবে। তবে সর্বাবস্থায় মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনা কঠো*রভাবে মেনেচলা নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
১৪. বিমান কর্তৃপক্ষ নিজ ব্যবস্থাপনায় প্লেন চলাচলের বিষয় বিবেচনা করবে। ১৫.নিষে*ধাজ্ঞাকালে সকল প্রকার সভা-সমাবেশ, গণ জমায়েত ও অনুষ্ঠান আয়োজন বন্ধ থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক মসজিদসমূহে সর্বসাধারণের জামায়াতে নামায আদায় এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়সমূহে প্রার্থনা অনুষ্ঠান অব্যাহত থাকবে।
করোনা ভাইরাসের কারণে প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হয়েছিল। এরপর ছুটি বাড়িয়ে ১১ এপ্রিল করা হয়। ছুটি তৃতীয় দফা বাড়িয়ে করা হয় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। চতুর্থ দফায় ছুটি বাড়ানো হয় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। পঞ্চম ধাপে ২৬ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত ও ষষ্ঠ দফায় ৬ মে থেকে ১৬ মে পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়। আর সর্বশেষ ১৭ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়। (সূত্রঃ বাসস)