মীর আব্দুল গণি, জার্মানি প্রবাসী
সত্তার শিক্ষার্জিত সক্ষমতা প্রকাশের বৈশিষ্ট্য হলোঃ (১) বিষয়গত সম্পাদন সক্ষ’মতা ও (২) নীতিগত আচ’রণ সক্ষ’মতা আলোচনার এ পর্যায় হতে উপরিউক্ত উভয়বিধ সক্ষ’মতাকেই সত্তার আচরণ সক্ষ’মতা বলে উল্লেখ করব।
আমরা বলি শিক্ষা জাতির মেরুদ’ণ্ড- ফলে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়- ক) শিক্ষা জাতির মেরুদ’ণ্ড হলে জাতির ব্যক্তি সমষ্টিকে (১) বিষয়গত সম্পাদন সক্ষ’ম ও (২) নীতিগত আচ’রণ সক্ষ’ম করে তো’লার জন্য শিক্ষাদানের প্রয়োজন আছে কি?
প্রয়োজন থাকলে- খ) রাষ্ট্রের বৃহৎ আঙ্গিকে ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের কাঙ্খিত পর্যায়ে বিষয়গত সম্পাদন সক্ষম ও নীতিগত আচরণ সক্ষ’ম করে তোলার শিক্ষাদান করবে কে? উত্থাপিত প্রশ্ন : যেমন- ক) শিক্ষা জাতির মেরুদ’ণ্ড হলে জাতির ব্যক্তি সমষ্টিকে বিষয়গত সম্পাদন সক্ষম ও নীতিগত আচরণ সক্ষ’ম করে তোলার শিক্ষাদানের প্রয়োজন আছে কি?
প্রশ্নে উল্লেখিত উক্ত উভয় বিষয়ে ব্যক্তি সমষ্টিকে আচ’রণ সক্ষ’ম করে তোলার শিক্ষাদানের প্রয়োজন আছে কি না জানতে হলে- রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ’ড়ে তোলার উদ্দেশ্য ও ব্যবস্থাটি বজায় রাখার ক্ষেত্রে জাতি তথা জনসমষ্টির উক্ত উভয়বিধ আচরণ সক্ষ’মতার ভূমিকা ও গুরুত্ব নিয়ে অবশ্যই আলোচনা করতে হবে। (এ পর্যায়ে রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে ওঠার সকল উদ্দেশ্য আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়।)
আমরা যদি লক্ষ করি তবে দেখা যায় রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্য হলো- অতি সংক্ষেপে- জাতির জনসমষ্টির অস্তি’ত্বের নিশ্চয়তা বিধান, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, ব্যক্তির জীবন সম্পৃক্ত চাহিদার বিষয়সমূহের মান নির্ধারণ ও নিশ্চিত করণ, লেনদেন ও বিনিময়ে জাতিতে ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে সে সম্পর্ক বজায় রাখার নীতিগত রূপদান, প্রয়োগ ও সংরক্ষণ ইত্যাদি নিশ্চিত করাই হলো রাষ্ট্রব্যবস্থা গ’ড়ে তোলার উদ্দেশ্য।
রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার উল্লিখিত উদ্দেশ্যসমূহের বৈশিষ্ট্য লক্ষ করলে স্পষ্টই বুঝা যায়, জনমসষ্টির উক্ত উভয়বিধ আচরণ সক্ষ’মতার কোনো বিকল্প নেই। ফলে উক্ত ক্ষেত্রসমূহে বা বিষয়সমূহেও শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
উপরিউক্ত আলোচনায় প্রতীয়মান হয় জনসমষ্টিকে- (১) বিষয়গত সম্পাদন সক্ষ’ম করে তোলা এবং (২) নীতিগত আচরণ সক্ষ’ম করে তোলার জন্য শিক্ষাদান একান্ত প্রয়োজন। প্রয়োজন থাকার কারণেই খ) প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়- অর্থাৎ খ) রাষ্ট্রের সুবৃহৎ আঙ্গিকে ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের কাক্সিক্ষত পর্যায়ে বিষয়গত সম্পাদন সক্ষম ও নীতিগত আ’চরণ সক্ষ’ম করে তোলার শিক্ষাদান করবে কে?
উত্থাপিত প্রশ্নদুটির বৈশিষ্ট্য লক্ষ করলে দেখা যায়- এক দিকে উক্ত উভয়বিধ বিষয়ে ব্যক্তির আচরণ সক্ষমতার মাণ রাষ্ট্র যেমন তার কাঙ্খিত পর্যায়ে হতে হবে ব্যক্ত করে তেমনি ব্যক্তিকে উক্ত উভয়বিধ বিষয়ে শিক্ষা দিবে কে জানতে চায়।
শিক্ষাদান কে করবে রাষ্ট্র কেন জানতে চায় তার কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যায়- রাষ্ট্রের মূল উপাদান ব্যক্তি একই সঙ্গে সে দুটি পরিমণ্ডলের অধিকারী। যেমন- (i) ব্যক্তির উৎস- পরিবার। (ii) ব্যক্তির বিচরণ ক্ষেত্র রাষ্ট্র। ব্যক্তির উক্ত রূ’প দুটি পরিমণ্ডলে বিরাজ করার কারণে কে (কোন পরিমণ্ডলটি) শিক্ষাদান করবে এ ব্যাপারে প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছে।
কারণ উক্ত পরিমণ্ডল দুটির বৈশিষ্ট্যগত দিক লক্ষ করলে দেখা যায় যে- উভয় পরিমণ্ডলেরই নিজস্ব বা স্বকীয় কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন- (i) পরিবারের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় হলো- পরিবার ব্যক্তিসত্তার উৎস হলেও প্রতিটি পরিবার এক একটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরি-মণ্ডলে নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য বা স্বকীয়তা বহন বা ধারণ করে।
অর্থাৎ সকল পরিবার যেমন একই মানের পারিবারিক স্বকীয়তা ধারণ বা বহন করে না তেমনি রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যও কোনো পরিবার সম্পূর্ণরূপে ধারণ বা বহন করে না। (ii) ব্যক্তির বিচরণ ক্ষেত্র রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় হলো- পরিবারের সমষ্টিতে রাষ্ট্র গড়ে উঠলেও পরিবারসমূহের বৈশিষ্ট্য পরিপূর্ণ-রূ’পে রাষ্ট্রও ধারণ বা বহন করে না।
অর্থাৎ বহু সংখ্যক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিবারের সমষ্টি দ্বারা রাষ্ট্রের সুবৃহৎ পরিমণ্ডল গড়ে উঠলেও রাষ্ট্রেরও রয়েছে নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য বা স্বকীয়তা। অর্থাৎ ব্যক্তিসত্তা একই সঙ্গে পরিবার ও রাষ্ট্রের ন্যায় ভিন্নতর দুটি বৈশিষ্ট্য- পরিমণ্ডলে বিরাজ করার কারণেই প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছে যে-ব্যক্তিকে শিক্ষাদান করবে কে? (i) পরিবার, না (ii) রাষ্ট্র ?
উপরিউক্ত আলোচনায় আমরা জানতে পারলাম উক্ত প্রশ্নটি (শিক্ষাদান করবে কে) কেন উত্থাপিত হয়েছে। উক্ত প্রশ্নটির উত্তর অর্থাৎ, কোন পরিমণ্ডলটি ব্যক্তিকে শিক্ষাদানে সক্ষম এ বিষয়টি নির্ণয় করতে হলে পরিমণ্ডল দুটিকে অবশ্যই যাচাই করতে হবে।
যাচাইয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে- ৪। শিক্ষা মূলত কি? ৫। শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য কি?
কারণ প্রশ্নের বিষয়টি হলো শিক্ষাদান। আমরা উপরিউক্ত প্রশ্ন দুইটির সিদ্ধান্তসমূহ পূর্বেই জেনেছি
যেমন- শিক্ষা হলো- কাঙ্খিত বো’ধের উন্মেষ সাধন যা সত্তাকে কাঙ্খিত আ’চরণে সক্ষম করে তোলে। শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য হলো- সত্তার স্বকীয় বোধ-চেতনার স্থলে কাঙ্খিত বোধ- চেতনার উন্মেষ সাধন করে কাঙ্খিত পর্যায়ে আচরণ সক্ষম করে তোলার যথাযথ প্রচেষ্টা।
কিন্তু এ পর্যায়ে (কাঙ্খিত) আচরণ সক্ষ’মতার মান যাচাইয়ের জন্য বিবেচনায় নিতে হবে রাষ্ট্রের কাঙ্খিত পর্যায়ের আচরণ সক্ষ’মতার মানকে। কারণ রাষ্ট্র কাঙ্খিত উল্লেখ করে তার আকাঙ্খা ব্যক্ত করে। আকাঙ্খা ব্যক্ত হওয়ার কারণে রাষ্ট্রের সুবৃহৎ আঙ্গিকে ব্যক্তিকে শিক্ষাদানের অর্থ হলো- রাষ্ট্রের কাঙ্খিত পর্যায়ে ব্যক্তিকে বিষয়গত সম্পাদন সক্ষম ও নীতিগত আচরণ সক্ষম করে তোলা।
রাষ্ট্রের উক্ত আকাঙ্খা পূরণে যদি মনে করা হয়-
ব্যক্তিকে শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব পরিবার পরিমণ্ডলের, তবে জানতে হবে রাষ্ট্রের প্রত্যাশিত বা কাঙ্খিত মানসম্পন্ন বিষয়গত সম্পাদন সক্ষমতা ও নীতিগত আচরণ সক্ষমতা ব্যক্তির বোধ-চেতনায় উন্মেষ সাধনের শিক্ষাদানে পরিবার পরিমন্ডল সক্ষম কি না? (চলবে) পূর্ব লেখাঃ