কৃষিতে বিপ্লব

2689
35
ধান

মো. কামরুল ইসলাম ভূইয়া

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষিকে অগ্রাধিকারভুক্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন এবং বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদ কৌশল প্রবর্তনের মাধ্যমে টেকসই কৃষির যাত্রার সূচনা করেছিলেন। কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ পুনরুজ্জীবিত করার মধ্য দিয়ে কৃষি গবেষণার নবদিগন্ত উন্মোচিত হয়। সেই ধারাবাহিকতায়, বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ এ দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার শুরুত্বেই কৃষক ও কৃষি সমৃদ্ধির জন্য রূপকল্প-২০২১, পঞ্চবার্ষিক কর্মপরিকল্পনা ও নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ সকল উদ্যোগ ও গৃহীত কার্যক্রমের ফলে খাদ্য উৎপাদনে ধারবাহিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণতা বজায় রাখা, বিভিন্ন ফসলের উন্নত ও প্রতিকূলতা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন, নতুন শস্যবিন্যাস উদ্ভাবন, পানি সাশ্রয়ী সেচ পদ্ধতি, ভূপরিস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি, কৃষিপণ্যের বহুমুখী ব্যবহার ও ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিসহ নানাবিধ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।

কৃষকবান্ধব নীতির ফলে খাদ্যশস্যের উৎপাদন প্রতিবছরই ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে ইন্দোনেশিয়াকে টপকে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। এছাড়া, পাট রপ্তানিতে ১ম, পাট ও কাঁঠাল উৎপাদনে ২য়, সবজি উৎপাদনে ৩য়, আলু ও আম উৎপাদনে ৭ম ও পেয়ারা উৎপাদনে ৮ম স্থানে রয়েছে। ২০০৮-০৯ সালে যেখানে মোট খাদ্যশস্য (চাল,গম ও ভুট্টা) উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ২৮ লক্ষ ৯৬ হাজার মেট্রিকটন সেখানে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে তা বেড়ে ৪ কোটি ৫৩ লক্ষ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রে যেমন- আলু ৫২.৬৮ লক্ষ মেট্রিকটন থেকে ১০৯.১৮ লক্ষ মেট্রিকটন, ভুট্টা ৭.৩০ লক্ষ মেট্রিকটন থেকে ৫৪.০২ লক্ষ মেট্রিকটন, শাকসবজি ২৯.০৯ লক্ষ মেট্রিকটন হতে ১৮৪.৪৭ লক্ষ মেট্রিকটন এবং পিঁয়াজ ৭.৩৬ থেকে ২৫.৫৭ লক্ষ মেট্রিকটনে উন্নীত হয়েছে।

সরকার সারের দাম হ্রাস করে যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করে। সারের মূল্য ৪ দফায় কমিয়ে প্রতি কেজি টিএসপি ৮০ টাকা থেকে ২২ টাকা, এমওপি ৭০ টাকা থেকে ১৫ টাকা, ডিএপি ৯০ টাকা থেকে ১৬ টাকা করা হয়েছে। ফলে কৃষক স্বল্পমূল্যে সার ক্রয় করতে পারছে। ২০০৯-১০ থেকে ২০১৯-২০ পর্যন্ত সার, বিদ্যুৎ, ইক্ষু ও ডিজেল ইত্যাদি খাতে মোট ৭৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করেছে সরকার।

সরকারের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে কৃষিকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কৃষকদের কৃষি যন্ত্রেও ক্রয়মূল্যেও উপর ৫০%-৭০% উন্নয়ন সহায়তার মাধ্যমে হ্রাসকৃত মূল্যে কৃষিযন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত প্রায় ৬৯ হাজার ৮৬৮টি কম্বাইন হারভেস্টর, রিপার, সিডার, পাওয়ার টিলারসহ কৃষিযন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে।

বন্যা, খরা, শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি ঘুর্ণিঝড়, উজানের ঢল, পাহাড়ি ঢল ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং বিশেষ বিশেষ ফসল চাষাবাদে উদ্বুদ্ধকরণে ২০০৯-১০ অর্থবছর হতে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ১ হাজার ৩০ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা কৃষিপুনর্বাসন/প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য কৃষক পরিবারকে দুই কোটি পাঁচ লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার দুইশত আটটি কৃষি উপকরণ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া, কৃষি উপকরণ কার্ডের মাধ্যমে খোলা সচল ১০/- টাকার ব্যাংক একাউন্টের সংখ্যা: সাতানববই লক্ষ সাত্রিশ হাজার আটচল্লিশটি।

-২- গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন উচ্চফলনশীল ও প্রতিকূলতা সহিষ্ণু উন্নতমানের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যহত আছে। ২০০৯-১০ থেকে এ পর্যন্ত ৩৭১টি জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। তন্মধ্যে ধানের ৬৭টি, গমের ১০টি, ভুট্টার ৬টি, তুলার ১০টি, ইক্ষু ও সুগারবিটের ৫৫টি, পাটের ১০টি, আলুর ৪৯টি জাত অন্যতম। প্রতিকূলতা সহিষ্ণু ধানের জাতের মধ্যে রয়েছে লবণাক্ততা সহনশীল ১৩ টি জাত, জলমগ্নতা সহিষ্ণু ৬টি, খরা সহিষ্ণু ১০ টি।

কোভিড-১৯ এর প্রতিঘাত মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ফুল ও ফলচাষ, মৎস্যচাষ, ডেইরি ও পোল্ট্রিখাতে ৪ শতাংশ সুদে ৫,০০০ কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনার স্কিম গঠন করা হয়। এ ছাড়া ফসল খাতে ঋণ বিতরণের জন্য ৯ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৪ শতাংশ রেয়াতি সুদে প্রায় ১৪,৫০০ কোটি টাকা কৃষিঋণ প্রদানের তহবিল গঠন করা হয়। সেচ কাজে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিলে ২০% হারে রিবেট প্রদান করা হচ্ছে। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে বিএডিসির ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত সেচ যন্ত্রসমূহের সেচ চার্জ ৫০% হ্রাস করা হয়েছে।