আমাদের শিক্ষাদান ব্যবস্থার অপূর্ণতা

3
70
আমাদের শিক্ষাদান ব্যবস্থার অপূর্ণতা
আমাদের শিক্ষাদান ব্যবস্থার অপূর্ণতা

(‘’গঠনমূলক আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা’’ সংক্ষিপ্ত আলোচনা)

মীর আব্দুল গণি
জার্মানি প্রবাসী

জাতি গঠনে শিক্ষার যেমন বিকল্প নাই। তেমনি শিক্ষাদানেও রয়েছে বেশ কিছু প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ারও বিকল্প নাই। শিক্ষাদান পদ্ধতির গুরুত্ব বুঝতে হলে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে শিক্ষাদানের অর্থ কি?

শিক্ষাদানের অর্থ অতি সহজে ও সংক্ষেপে বলা যায়- ‘‘প্রক্রিয়াজাত কৌশলে সত্তার স্বকীয়বোধের স্থলে কাঙ্ক্ষিত বোধের উন্মেষ সাধনই হলো শিক্ষাদান। উপমা- যেমন (ক) ১+১=? ও ২-২=? ব্যক্তি স্বেচ্ছায় যা বলবে সেটা তার স্বকীয় বোধ উৎসারিত। ঠিক হবে এমন নয়, না হলেও দোষের নয়। শিক্ষাদান হলো- উক্ত ক্ষেত্রে- (খ) পদ্ধতিগত ভাবে ১+১=২, এবং ২-২=০ ব্যক্তির বোধকে জাগ্রত করে তোলা। অর্থাৎ শিক্ষাদানের অর্থ হলো সত্তার স্বকীয়বোধের স্থলে কাঙ্খিত বোধের জাগরণ ঘটানো্ বা উন্মেষ সাধন।

শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত বা প্রত্যাশিত প্রাপ্তি যদি না ঘটে তবে বুঝতে হবে অবশ্যই প্রক্রিয়ায় কোথাও কোন অপূর্ণতা বা ত্রুটি রয়েছে। প্রশ্ন হলো সেই অপূর্ণতা বা ত্রুটি জানা ও দূর করার উপায় কি?

উপায় হলো প্রচলিত শিক্ষাদানব্যবস্থাকে ধর্য্যসহ বিশ্লেষণমূলক আলোচনা করা। এবং বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান-বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিলে সহজেই অপূর্ণতা বা ত্রুটি জানা সম্ভব।

বাংলাদেশে প্রচলিত শিক্ষাদান বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় লিখতে, পড়তে বা পাঠদানমূলক শিক্ষাদানব্যবস্থা। পাঠদানমূলক শিক্ষাদানব্যবস্থায় শিক্ষার প্রত্যাশিত ফল আমরা কতটুকু পেতে পারি পর্যালোচনার ক্ষেত্রে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে
শিক্ষাদান মূলতঃ কী? এবং শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য কী?

শিক্ষাদান মূলতঃ কী?
শিক্ষাদান হলো ব্যক্তি সত্তায় মানসিক গঠণদানমূলক জটিল প্রক্রিয়া নির্ভর একটি কর্ম বা কাজ। প্রতিটি কাজেরই যেমন প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি, কিছু উপকরণ ও উপাদান থাকে তেমনি শিক্ষাদানকর্মেরও রয়েছে বিশেষ প্রক্রিয়া, বেশকিছু উপকরণ ও উপাদান।
যে উপাদান ও উপকরণসমূহের গুণগত ও পরিমাণগতমাণ শিক্ষাদান(কর্মসম্পাদন)-প্রক্রিয়ায় নিশ্চিত করতে হয়।

অবশ্য প্রশ্ন উত্থাপিত হয় শিক্ষাদানকর্মের উপকরণ ও উপাদানসমূহ কি কি? শিক্ষাদান কর্মের বৈশিষ্ট্যনুসারে আমরা নিম্নোল্লেখিত উপকরণ বা উপাদানসমূহ দেখতে পাই। যেমন- ক)শিক্ষার্থী, খ)শিক্ষক, গ) শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য, ঘ) শিক্ষাদান পদ্ধতি,…ইত্যাদি।

এখন আমরা জানার চেষ্টা করবো প্রচলিত শিক্ষাদানব্যস্থায় শিক্ষাদান-কর্মটির উপাদান ও উপকরণসমূহ শিক্ষাদান-কর্ম প্রক্রিয়ায় যথাযত নিশ্চিত করা হয়েছে কি না। উক্ত লক্ষ্যে চিহ্নিত উপকরণ বা উপাদানসমূহের বৈশিষ্ট্য নিয়ে অতি সংক্ষেপে আলোচনা করবো।

উপাদান ক) শিক্ষার্থীঃ প্রাচীন ও বর্তমান কালেও বহু মণিষী ও গবেষকগন শিশুর ৩/৪ বছর বয়স হতেই শিক্ষাদান শুরু করার গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। কারণ শিশু বয়সে ব্যক্তি বা প্রাণী-সত্তার আচরণের উৎস বোধ-চেতনা শূন্য পাত্র সমতুল্য। সেখানে যা রাখা হবে সেটাই সহজেই স্থায়িত্ব লাভ করে।

অর্থাৎ শিশু মানসিকতায় যে বোধ-চেতনার উন্মেষ ঘটান হয় সেটাই স্থায়িত্ব পায়। সে কারণে শিশু বয়স হতে প্রাণী বা ব্যক্তি সত্তায় পর্যায় ক্রমে কাঙ্খিত মানসিক গঠণদান বা বিকাশ সাধন সহজ। উন্নত দেশে তিনবছর বয়সেই শিশুদের কিন্ডারগার্ডেন বাধ্যতামূক করা হয়ে থাকে এবং ৬ বৎসর বয়স পর্যন্ত বিশেষ প্রশিক্ষিত যত্নকারির দ্বারা বিশেষ প্রক্রিয়ায় শিশুলভ মানসিকতায় কাঙ্খিত মানসিক গঠণদান করা হয়। (কিন্ডারগার্ডেনে কোনরূপ অক্ষরজ্ঞান দেয়া হয় না।)

শিশু বয়সে প্রানীসত্তার আচরণ গঠণের বৈশিষ্ট্য একটি উপমায় উল্লেখ করা যায়। যেমন- একটি হরিণ শাবক ও একটি ব্যঘ্র সাবককে যদি অতি শিশু বয়স হতেই একই সঙ্গে রেখে বড় করে তোলা হয় তবে দেখা যায় তাদের মধ্যে খাদ্য খাদক সম্পর্ক থাকে না।

উভয়ের শিশু বয়সের কারণে প্রাণী-সত্তার আচরণের উৎস বোধ-চেতনায় তাদের মধ্যে খাদ্য খাদক সম্পর্ক সৃষ্টি হয় না। প্রাণী বা ব্যক্তি সত্তার মানস গঠনের উক্তরূপ বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণেই শিক্ষার কিছু মৌলিক বিষয় রয়েছে যাহা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শিক্ষা দিতে হয়। যে কারণে শিক্ষার একটা পর্যায়কে আমরা বাধ্যতামূলক বলে থাকি। মনে করি সে পর্যায়টির শুরু ৩বছর বয়স হতে এবং শেষ ১০ম শ্রেণী বাধ্যতামূলক শিক্ষার-শ্রেণীপর্যায়।

উপাদান খ)শিক্ষকঃ শিক্ষাদানে শিক্ষকের ভূমিকাই প্রধাণ। কারণ আদর্শ ব্যক্তি মানুষের মূল্যবোধসম্পন্ন আচরণশীলতার যে নক্সাশৈলী, শিক্ষকই সত্তাকে সেই আচরণশীলতায় গড়ে তোলেন বলেই তাঁকে মানুষ গড়ার কারিগড় বলা হয়ে থাকে। শিক্ষককে অবশ্যই আধুনিক শিক্ষাবিজ্ঞানে যথাযত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হতে হয়। (বিশেষ করে কিন্ডারগার্টেন হতে বাধ্যতামূলক শ্রেণী পর্যায় পর্যন্ত যাঁরা শিক্ষাদানের দায়িত্বে থাকবেন।)

উপাদান গ) শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যঃ আলোচনার এ পর্যায়ে অতি সংক্ষেপে উল্লেখ করবো। শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য হলো কাঙ্খিতপর্যায়ে সত্তার মানসিক গঠনদান এবং প্রত্যাশিত বা বিভিন্ন বিষয় বা ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে সক্ষম বা যোগ্য করে তোলা। শিক্ষাদানে অবশ্য বেশ কিছু বিষয় বা ক্ষেত্র রয়েছে যাহাতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হয় এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঐ সকল বিষয় বা ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে যোগ্য বা সক্ষম করে তোলার প্রয়োজন রয়েছে। যে সকল ক্ষেত্র বা বিষয়কে আমরা ব্যক্তির শিক্ষার মৌলিক বিষয়রূপে উল্লেখ করতে পারি।

এখন মৌলক শিক্ষার বিষয় ও ক্ষেত্রসমূহের কয়েকটি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো। মৌলিকশিক্ষার বিষয় বা ক্ষেত্রসমূহ। যেমন- (i) অক্ষরজ্ঞানদান বা লিখতে ও পড়তে শিখা, (ii) ব্যক্তি-জীবন, (iii) সমাজ-রাষ্ট্রীয়জীবন, (iiii)ব্যক্তির জীবননির্বাহে পেশামূলক শিক্ষা ….ইত্যাদি।

মৌলিকশিক্ষার বিষয়ঃ (i) অক্ষরজ্ঞান, লিখতে ও পড়তে শিখা। অক্ষরজ্ঞান প্রতিটি মানুষের জন্যই কেন অপরিহার্য আমরা জানি। সে জন্য অক্ষরজ্ঞানের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা নিয়ে আলোচনার অবতারণা করবো না। তবে অক্ষরজ্ঞানদানেরও রয়েছে আধুনিক প্রক্রিয়া যেটা অনুসরণ করা অত্যান্ত জরুরী।

মৌলিকশিক্ষার বিষয় বা ক্ষেত্র (ii) ব্যক্তি-জীবন
সকল কিছুই মূলতঃ ব্যক্তির অস্তিত্বকে ঘিরেই গড়ে উঠে। ব্যক্তির অস্তিত্বহীনতা মূলতঃ সকলই শূন্য।

দৈনন্দিনজীবনে চলার পথে ব্যক্তিকে অনেক সময় অনেক প্রতিকূল অবস্থার সন্মুখীন হতে হয়। কিন্তু ব্যক্তি জানে না সে প্রতিকূল অবস্থায় নিজেকে কিভাবে রক্ষা করতে হয়। সম্ভাব্য ও অনুমেয় প্রতিকূলতায় ব্যক্তি-অস্তিত্বের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য প্রতিটি ব্যক্তিরই বেশ কিছু মৌলিক বিষয়ে শিক্ষাদানের একান্ত প্রয়োজন রয়েছে। উপমাঃ মৌলিকশিক্ষার বিষয় বা ক্ষেত্র যেমন ব্যক্তিজীবন (ii)ক, রাস্তাচলার নিয়মকানুন বা ট্রাফিক আইন জানা, সাঁতার জানা কোথাও কোনও সংকটে পড়লে করণীয় কি ইত্যাদি।

মৌলিকশিক্ষার বিষয় বা ক্ষেত্র (iii) সমাজ-রাষ্ট্রীয়জীবন সমাজের মূল উপাদান ব্যক্তিসমষ্টি হলেও একক ব্যক্তি স্বতন্ত্র। বৃহত সমাজ-রাষ্ট্রীয়ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ও টিকিয়ে রাখতে ব্যক্তির স্বতন্ত্র আচরণ পরিহার করে সমষ্টির যৌথ সমঝোতামূলক মূল্যবোধসম্পন্ন আচরণে আচরণশীল হতে হয়। কিন্তু সমাজ-রাষ্ট্রের সমঝোতামূলক আচরণের মূল্যবোধসমূহের পরিমিতিবোধ অধিকাংশ ব্যক্তিরই বোধগম্য নয়। সে কারণে শিক্ষাদিয়ে ব্যক্তিকে সমাজ-রাষ্ট্রের যোগ্য করে তুলতে হয়।

এখন প্রশ্ন জাগে সমাজ-রাষ্ট্র গড়ে তুলতে ও টিকিয়ে রাখতে সমষ্টির আচরণজাত মূল্যবোধসমূহ কী কী? সমাজ-রাষ্ট্র গড়ে তুলতে ও টিকিয়ে রাখতে সমষ্টির আচরণজাত যে মূল্যবোধসমূহ পরিলক্ষিত হয় তাহা নিম্নরূপ। মূল্যবোধসমূহ যেমন- (iii)খ ১ মানবিকতা, ২ নীতিনৈতিকতা, ৩ সততা, ৪ নিষ্ঠা, যৌক্তিক,…ইত্যাদি।

মৌলিকশিক্ষার বিষয় বা ক্ষেত্র (iiii) ব্যক্তির জীবননির্বাহে পেশামূলক শিক্ষা বাধ্যতামূলক শিক্ষা পর্যায়ে এসে যারা উচ্চতর শিক্ষা লাভের যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হতে সক্ষম হন না তাদেরকে আগ্রহী কোন কর্মে শিক্ষাদান করে জীবিকানির্বাহের যোগ্য বা সক্ষম করে তুলতে হয়।

আলোচনায় এ পর্যায়ে প্রতিয়মান হয়
গ) শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য যে হেতু ব্যক্তিকে যথাযত যোগ্য বা সক্ষম করে তুলা। সেহেতু আলোচ্য মৌলিকিক্ষার বিষয়সমূহ বা ক্ষেত্রসমূহ তথা
(i) অক্ষরজ্ঞান, লিখতে ও পড়তে শিখা (ii) ব্যক্তি-জীবন ও (ii)ক ব্যক্তিজীবনের নিশ্চয়তা (iii) সমাজ-রাষ্ট্রীয়জীবন ও (iii)খ সমাজ-রাষ্ট্রীয়জীবনের মূল্যবোধসমূহ (iiii)ব্যক্তির জীবননির্বাহে পেশামূলক শিক্ষা। অর্থাৎ উপরোক্ত উপাদানসমূকে অবশ্যই শিক্ষাদানপ্রক্রিয়ার অন্তুর্ভুক্ত করেই ব্যক্তিকে শিক্ষাদান করতে হয়।

পরবর্তিতে আলোচনায় প্রয়োজনে উপমাতে উপস্থাপনের জন্য উক্ত মৌলিকশিক্ষার বিষয় বা ক্ষেত্রসমূহের শুধু ক্রমিক সংখ্যা সংক্ষেপে উল্লেখ করবো। যেমন গ) শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য (i), (ii) ও (ii)ক, (iii) ও (iii)খ, (iiii)…ইত্যাদি উল্লেখ করবো।

উপাদানঃ ঘ) শিক্ষাদান পদ্ধতি
প্রতিটি কর্ম বা কাজ সম্পাদনের একটি সুপরিকল্পিত প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি থাকে। কর্ম সম্পাদনে সঠিক প্রক্রিয়া অবলম্বন না করলে প্রত্যাশিত ফল প্রাপ্তি মোটেই সম্ভব নয়। শিক্ষাদানেরও রয়েছে সুপরিকল্পিত প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি। এ পর্যায়ে আমরা শিক্ষাদান প্রক্রিয়ায় শিক্ষাদান কর্মের উপকরণ বা উপাদানসমূহ সমন্বয় করণের অতিসহজ একটি উপমা একটি সরল রেখা ভিত্তিক ছকে উপস্থাপন করবো।

উপমা মনে করি A হতে B পর্যন্ত বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানসময়। মনে করি বেবী শ্রেণী শুরু A হতে এবং শেষ ১০ম শ্রেণী B তে । বাধ্যতামূলক ঐ শিক্ষাদান-সময়কে মনে করি A_____B একটি সরল রেখা।

বাধ্যতামূলক হওয়াতে প্রতিটি শিক্ষার্থীকেই শিক্ষাদানসময় A B রেখা অতিক্রম করতেই হবে।
অথএব A B সরল রেখা শিক্ষাদানসময়েই গ) শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য তথা মৌলিকশিক্ষার বিষয় বা ক্ষেত্রসমূহের উপাদান উপকরণসমূহ যথা (i), (ii) ও (ii)ক, (iii) ও (iii)খ, (iiii)….ইত্যাদি শিক্ষাদান কর্মের প্রক্রিয়াভুক্ত করে যেমন- ছক ১ক’ A (i), (ii) ও (ii)ক, (iii) ও (iii)খ, (iiii)… B রেখা (কল্পিত রেখা A___B) শিক্ষাদানসময় অতিক্রমকালে পর্যায় ক্রমে শিক্ষাদান করলে শিক্ষার কাঙ্খিত ফল নিশ্চিত করে।

(উন্নত জাতির শিক্ষাদানব্যবস্থায় বিষয়সমূহ নির্দিষ্ট সময়ে পর্যায়ক্রমে শিক্ষাদান প্রক্রিয়াভুক্ত হওয়াতে তাদের প্রাতাষ্ঠানিক শিক্ষার পার্থক্য থাকলেও নাগরিক আচরণে সবাই সমপর্যায়ের মূল্যবোধসম্পন্ন হয়ে থাকেন।)

আমাদের আলোচ্য শিক্ষাদানপদ্ধতি ছক ‘‘১ক’‘
যেহেতু ব্যক্তিকে যোগ্য ও কাঙ্ক্ষিত গুণসম্পন্ন আচরণশীল করে তোলার শিক্ষাদান নিশ্চত করে সেই হেতু ছক ১ক A (i), (ii) ও (ii)ক, (iii) ও (iii)খ, (iiii)… B প্রক্রিয়াকে আদর্শ-শিক্ষাদানপদ্ধতি রূপে উল্লেখ করবো।

আমাদের আলোচনার উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের প্রচলিত শিক্ষাদান পদ্ধতির অপূর্ণতা বা ত্রুটি আছে কি না যাচাই করে দেখা। অতএব বিস্তারিত আলোচনার অবতারনা না করে আমাদের আলোচ্য আদর্শ শিক্ষাদানপদ্ধতি ছক ১ক’তে বাংলাদেশে প্রচলিত শিক্ষাদানব্যবস্থায় প্রাপ্ত শিক্ষার উপাদানসমূহ সন্নিবেশন করলে সহজেই পূর্ণতা বা অপূর্ণতা চিহ্নিত করা সম্ভব।

বাংলাদেশের প্রচলিত শিক্ষাদানব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য তথা গ) শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য পর্যালোচনা করলে শিক্ষার উপাদানরূপে (i) অক্ষরজ্ঞান, লিখতে ও পড়তে শিখা উপাদান পেয়ে থাকি।

আমাদের আলোচ্য শিক্ষাদান প্রক্রিয়া ছক ১ক’ A ঘ) (i)……. B প্রক্রিয়া রেখাতে সন্নিবেশন করলে উপাদানহিসাবে শুধুই (i) দেখতে পাই। আলোচ্য অন্যান্য উপাদানসমূহ যেমন (ii) ও (ii)ক, (iii) ও (iii)খ, (iiii),….ইত্যাদি শিক্ষাদান প্রক্রিয়া A____B রেখায় দেখতে পাই না। অর্থাৎ শিক্ষার অধিকাংশ মৌলিক বিষয়ই প্রচলিত শিক্ষাদান প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তির বাইরেই রয়ে গেছে। মূলতঃ যাহা আমাদের প্রচলিত শিক্ষাদানব্যবস্থার অপূর্ণতা বা ত্রুটি।

বাংলাদেশে শিক্ষা সম্পর্কে আমরা একটা ভ্রান্ত ধারণাও পোষণ করি। যেমন- আমরা প্রায়ই বলি বা বলতে শুনি মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধসমূহ পরিবার হতে ব্যক্তি অর্জণ করে থাকে বা পরিবার ব্যক্তিকে শিক্ষা দিবে। কিন্তু উক্ত মূল্যবোধসমূহ শিক্ষাদানে পরিবারের যোগ্যতা যাচাই করলে আমরা দেখতে পাই সমাজ-রাষ্ট্রে পরিবারসমূহের অবস্থানগত বিভিন্নস্তরকাঠামো রয়েছে এবং সেই অনুসারে তাদের জীবন যাত্রার মাণভেদও ভিন্ন ভিন্ন।

সে কারণে সকল পরিবার সমাজ-রাষ্ট্রের কাঙ্খিত মূল্যবোধ-এর পরিমিতিবোধ বুঝতে সক্ষম হবে এমন নিশ্চয়তা পাওয়া মোটেই সম্ভব নয়। (আলোচনা সংক্ষিপ্ত রাখার জন্য আমরা উপমা উপস্থাপন করছি না।) ফলে ব্যক্তিকে সমাজ-রাষ্ট্রের কাঙ্খিত মূল্যবোধসম্পন্ন আচরণশীল করে গড়ে তোলার দায়িত্ব শিক্ষাদান-ব্যবস্থাকেই নিতে হয়।

সকল উন্নত দেশই বাধ্যতামূলক শিক্ষাদান সময়ে বিশেষ প্রশিক্ষিত শিক্ষক ও বিশেষ শিক্ষাদান-প্রক্রিয়া গ্রহণ করে ব্যক্তির মৌলিক শিক্ষা ও মূল্যবোধসম্পন্ন আচরণে আচরণশীল করে তোলে। কারণ ঐ পরিমিত মূল্যবোধসমূহই বৃহত সমাজ-রাষ্টীয়ব্যবস্থার মূল ভিত্তি বা মেরুদন্ড। (উক্তরূপ গুরুত্বের কারণেই শিক্ষাকে জাতির মেরুদন্ড বলা হয়।)

শিক্ষার মৌলিকবিষয়সমূহের বৈশিষ্ট্যগত দিক বিবেচনায় নিলেই শিক্ষাদানের দায়ীত্ব কার সহজেই বুঝা যায়। উপমা যেমন- ট্রাফিক আইন ও সাঁতার শিখা বিষয় দুটির বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করলে দেখা যায়- ট্রাফিক আইন হলো বিশেষ সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত ও পরিচালিত নীতিগত ব্যবস্থা। ফলে শিক্ষাদানের দায়িত্ব ট্রাফিক আইন কর্তৃপক্ষকেই নিতে হয়। অপরদিকে- জীবন রক্ষার জন্য সাঁতার জানা বিশেষসংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত কোন নিয়মনীতি দ্বারা পরিচালিত হয় না।

ফলে সাঁতার শিখানর দায়িত্ব অভিভাবককে দেয়া যায়। তবে প্রতিটি অভিভাবকই যে সাঁতারের গুরুত্ব অনুধাবণে সক্ষম নিশ্চিত হওয়া যায় না, সে জন্য শিক্ষাদান কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অভিভাবকে তাগিদ দেয়া এবং শিখায়েছেন অবশ্যই জেনে নিশ্চিত হওয়া। উন্নত দেশে উক্তরূপই করে থাকে।

শিক্ষাদান প্রক্রিয়া বা কৌশলসমূহই হলো আধুনিক শিক্ষাবিজ্ঞান (padagogig)বা সাইন্স অফ টিচিং।
শিক্ষাবিজ্ঞান মূলতঃ মনজতাত্বিক, দার্শনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক বেশ জটিল প্রক্রিয়া। উন্নত দেশে দেখা যায় যাঁরা শিক্ষকতা পেশা গ্রহণে ইচ্ছুক অধ্যায়ণের একটা পর্যায়ে শিক্ষাবিজ্ঞান নিয়ে অবশ্যই তাঁদের পড়ালেখা করতে হয়। এবং তাঁদেরকে আধুনিক শিক্ষাবিজ্ঞানে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বিশেষ করে যাঁরা কিন্ডার্গার্ডেন হতে বাধ্যতামূলক শিক্ষাদান সময়ে শিক্ষকতা করবেন।

শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যার্জণ করতে হলে লিখতে ও পড়তে শিখা পরিপূর্ণশিক্ষা এরূপ ভ্রান্ত ধারণা নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা পরিহার করে অবশ্যই আধুনিক শিক্ষাদানপদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। আধুনিক শিক্ষাবিজ্ঞানে যাঁদের স্পষ্ট ধারণা আছে তাঁদের সহযোগীতা নিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা যুগোপযোগী করে তুলতে হবে। যার কোনই বিকল্প নাই।

উপসংহারে উল্লেখ করবো, আমাদের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীগন উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য ইউরোপ আমেরিকা ও অন্যান্য অনেক উন্নত দেশে যান কিন্তু শিক্ষার ঐ পর্যায়ের বহু পূর্বেই তাদের দেশে শিক্ষার মৌলিকবিষয়সমূহের শিক্ষা শেষ হয়ে থাকে। ফলে মৌলিকশিক্ষাদানে তাদের প্রক্রিয়া আমাদের মেধাবীগণ কখনই অবগত হতে সক্ষম হন না।

(আমরা প্রায়ই বলে থাকি শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড।
শিক্ষাকে কেন জাতির মেরুদন্ড বলা হয়? জাতির মেরুদন্ডের বৈশিষ্ট্য কী? ব্যক্তির শিক্ষার মৌলিক বিষয় কি? শ্রদ্ধেয় কয়েকজন শিক্ষকের কাছে বিনয়ের সঙ্গে জানতে চেয়েছিলাম। কেউ সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেন নাই। এ অপারগতা জাতির জন্য বড়ই দুর্ভাগ্যের।)