মীর আব্দুল গণি, জার্মানি প্রবাসী
ব্যক্তি আচরণের মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধসমূহ জানার উপায় হলো রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে ব্যক্তির আচরণ প্রকাশের ক্ষেত্রসমূহকে নিয়ে পর্যালোচনা করা। কারণ আমাদের আলোচ্য বিষয় হলো রাষ্ট্রীয় পরিমন্ডলে জাতির মেরুদন্ড।
আমরা লক্ষ করলে দেখতে পাব যে, রাষ্ট্রীয় পরিমন্ডলে যে ব্যক্তি সমষ্টিকে নিয়ে জাতি গড়ে উঠে সেই ব্যক্তি সমষ্টির ’’আচরণ প্রকাশের মূল্যবোধ’’-এর উপর ভিত্তি করেই তাদের ’’আচরণ প্রকাশের ক্ষেত্রসমূহ’’ রচিত হয়ে থাকে। এবং রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে ব্যক্তির আচরণ প্রকাশের ক্ষেত্রসমূহ লক্ষ্য করলে দেখা যায়- ব্যক্তি দুটি ক্ষেত্রে তার আচরণ প্রকাশ করে থাকে। যেমন- (i) ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির আচরণ প্রকাশ ও (ii) রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যক্তির আচরণ প্রকাশ।
(i) ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির আচরণ প্রকাশ :
ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির আচরণ প্রকাশের বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির আচরণ প্রকাশ মূলত লেনদেন বা বিনিময় নির্ভর।
লেনদেন বা বিনিময় হয়ে থাকে মূলত ’’বিষয়গত ও সেবাজাত।’’ উপমা-মনে করি ক ও খ দুজন ব্যক্তি। ক উৎপাদক এবং খ ভোক্তা বা ক সেবক বা সেবাদানকারী খ সেবা গ্রহণকারী।
উক্ত ক্ষেত্রে ক-এর উৎপাদন বা সেবার মান যেমন খ-এর গ্রহণযোগ্য হতে হয় তেমনি খ প্রদত্ত বিনিময় মূল্য মানও ক-এর কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হয়। বিনিময়ে উভয়ের উক্তরূপ মান প্রত্যাশা বাঞ্ছিত। বিনিময় ক্ষেত্রে উভয়ের মাঝে যাতে কোনোরূপ দ্বন্দ্ব সৃষ্টি না হয় এবং সমষ্টির (রাষ্ট্রে) সম্পর্ক অটুট রাখার নিমিত্তে রাষ্ট্র উক্ত ক্ষেত্রে ব্যক্তি আচরণের মানবিক মূল্যবোধ ও নীতিগত বাধ্যবাধকতা আরোপ করে থাকে।
ফলে প্রতিটি ব্যক্তিকেই তার স্বতন্ত্র আচরণ পরিহার করে রাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত মূল্যবোধ ও নীতিনৈতিকতা সম্পন্ন আচরণজাত ঐক্যে উপনীত হতে হয়। উক্ত ক্ষেত্রে ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির আচরণ প্রকাশের বৈশিষ্ট্যগত দিক লক্ষ করলে দেখা যায় রাষ্ট্রের আরোপিত আচরণের মূল্যবোধসমূহ হলো- মানবিকতা, নীতি-নৈতিকতা, যুক্তিবাদিতা, সততা, নিষ্ঠা, সহমর্মিতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ এবং সার্বিক কল্যাণকর আচরণশীলতা ইত্যাদি। (অতি সংক্ষেপে) উপরিউক্ত আলোচনায় ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির আচরণ প্রকাশের মূল্যবোধসমূহ ও তার বৈশিষ্ট্য জানা যায়।
(ii) রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যক্তির আচরণ প্রকাশ : ব্যক্তির রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডল পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ব্যবস্থাটি গড়ে তোলার উদ্দেশ্য হলো- জনগণের প্রত্যেকের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নত জীবনযাপনের নিশ্চয়তা বিধান করা। যেহেতু রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য তার ব্যবস্থাধীন সকল জনগণের কল্যাণ সাধন সেই হেতু রাষ্ট্র কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য তার জনগণের উপর অর্পণ করে থাকে, যাকে আমরা নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে থাকি।
দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের ’ক্ষেত্রে’ রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যক্তির আচরণ প্রকাশের বৈশিষ্ট্য লক্ষ করলে দেখা যায়- ’’নীতিগত আনুগত্য, সততা, নিষ্ঠা, কর্তব্যপরায়ণতা ইত্যাদি মূল্যবোধসমূহ রাষ্ট্র ব্যক্তি আচরণে আরোপ করে থাকে (অতি সংক্ষেপে)।’’
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আলোচ্য ’ক্ষেত্রসমূহে’ যেসকল মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধসমূহ প্রকাশ পায় বা রাষ্ট্র ব্যক্তি আচরণে আরোপ করে থাকে সেই সকল মূল্যবোধসমূহ সংক্ষেপে আমরা নিম্নরূপে উল্লেখ করতে পারি। যেমন- মানবিকতা, নীতি-নৈতিকতা, যুক্তিবাদিতা, সততা, নিষ্ঠা, সহমর্মিতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সার্বিক কল্যাণমুখী আচরণশীলতা ইত্যাদিকে। (অতি সংক্ষেপে)
বাস্তব জীবনে উক্ত মূল্যবোধসম্পন্ন আচরণ ব্যতিরেখে ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির আচরণ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রত্যাশা করতে পারি কি? পারি না। উপরিউক্ত আলোচনায় অতি সংক্ষেপে উক্ত ক্ষেত্রসমূহে ব্যক্তি আচরণের মূল্যবোধ -সমূহ তুলে ধরা হয়েছে।
উল্লিখিত ক্ষেত্রসমূহে ব্যক্তির আচরণ প্রকাশের গুরুত্ব পর্যালোচনা করলে প্রতিয়-মান হয় উক্ত মূল্যবোধসমূহই ব্যক্তিকে ব্যক্তি সমষ্টিতে ও জাতিতে পরিণত করে।
রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে উল্লিখিত ক্ষেত্রসমূহে ব্যক্তি আচরণের মূল্যবোধসমূহের উক্ত রূপ গুরুত্ব অনুধাবন করেই ’’উক্ত মূল্যবোধসমূহকেই প্রতীকী রূপে জাতির মেরুদণ্ড বলা হয়ে থাকে।’’ অবশ্য প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে উক্ত মূল্যবোধসমূহ জাতির মেরুদণ্ড হলে- শিক্ষাকে কেন জাতির মেরুদণ্ড বলা হয় ? এ পর্যায়ে আমাদের জানা প্রয়োজন শিক্ষাকে কেন জাতির মেরুদণ্ড বলা হয় ? (চলবে)