শামীমূল ইসলাম
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট। ১৯৭৩ সালের কোনো এক সময় তিনি খুলনার সার্কিট হাউজ মাঠে এক জনসভায় আসেন। সভায় উপস্থিত তৎকালীন নড়াইল-২ আসনের প্রয়াত এমপি খন্দকার আব্দুল হাফিজ, নড়াইল-১ আসনের এমপি এখলাস বিশ্বাস, নড়াইলের আওয়ামী লীগ নেতা, আবুল কালাম আজাদ, গাজী আলী করিম, সরদার আব্দুস সাত্তারসহ অনেকে। সভা শুরুর আগে মঞ্চ থেকে বঙ্গবন্ধু বলে ওঠেন “নড়াইলের সাত্তার আসেনি, সাত্তার কই”। এ সময় সরদার আব্দুস সাত্তার বঙ্গবন্ধুর সামনে এগিয়ে এসে বলেন, এইযে আমি। তখন বঙ্গবন্ধু বলেন,“ আরে এ সাত্তার নয়, আমার বেদুইন সাত্তার”। এরপর সাত্তার মোল্যা দ্রুত দৌড়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে চলে আসেন। বঙ্গবন্ধু বলেন “তুই তো সব জনসভায় থাকিস,সবখানেই তোকে পাওয়া যায়, তুই তো বেদুঈন; আজ থেকে তোর নাম বেদুঈন সাত্তার”। সেই থেকে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের সাত্তার মোল্যা হয়ে যান“বেদুঈন সাত্তার”। বেদুঈন সাত্তার বললে নড়াইলে এক নামে সবাই চেনেন। তিনি এই ৯৫ বছর বয়সেও বঙ্গবন্ধুর দেয়া “বেদুঈন” উপাধি নিয়ে বঙ্গবন্ধুকেই খুঁজে ফেরেন।
গত রোববার (৭ মার্চ) বিকেলে প্রবীন এই নেতার বাড়িতে তার সাক্ষাতকার নিতে গেলে তিনি এ প্রতিনিধিকে দেখে বলেন, কি আমার জীবনের শেষ সাক্ষাতকার নিতে এসেছ! আমি বললাম না, আপনি আরও অনেক দিন বাঁচবেন। তারপর তার বাড়ির আঙ্গিনায় অনেক কথা হলো, অনেক কিছু স্মৃতি চারণ করলেন। বয়সের ভারে এখন ঠিকমতো চলতে ফিরতে পারলেও স্মৃতির মনিকোঠায় বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সাথে বিভিন্ন স্মৃতির পাতা একেবারে মুছে যায়নি। গল্পের মাধ্যমে তিনি বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবার সম্পর্কে অনেক স্মৃতিচারণ করেন। তবে এর অধিকাংশ সময় জুড়ে ছিল নিজের খাওয়ার গল্প। তিনি জানান, দেশ বিভাগের পর ১৯৪৯ সাল থেকেই আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত। ১৯৬০ সালে বঙ্গবন্ধু তাকে নড়াইল সদর থানা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব দেন। এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে কালিয়া থানা আওয়ামী লীগের কয়েকটি মেয়াদে গুরুতপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্সের ভাষণ, নড়াইল, যশোর, খুলনা, ফরিদপুরসহ দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে বঙ্গবন্ধুর প্রায় ১৫টি জনসভায় ছুটে গিয়েছি। নড়াইলের কামালপ্রতাপ গ্রামে বঙ্গবন্ধুর ফুফুর বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর সাথে গিয়েছি। সময় পেলেই কালিয়া হয়ে ভ্যানযোগে এবং হেটে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার বাড়িতে গিয়েছি প্রায় ১০ বার। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তাঁর কবর জিয়ারত করতে গিয়েছি কমপক্ষে ১০-১২বার।
প্রবীণ এই নেতা সবসময়ই ছন্দ মিলিয়ে কথা বলতে পছন্দ করেন। একটা শ্লোক দিয়ে বলেন, “পোশাক-পরিচ্ছদ যাই বলো সবই হলো ভূয়া-আসল কাম হলো খাওয়া আর খাওয়া”। খাবার সময় হলে বঙ্গবন্ধু রেনু ভাবীকে ডেকে বলতেন “রেনু, সাত্তারকে গামলায় (ডিস) ভাত দাও, প্লেটে খেলে ওর পেট ভরবে না”। ভাবী আমাকে খেতে দিতেন আর আমার খাওয়া দেখে বাড়ির সবাই হাসাহাসি করতেন। বঙ্গবন্ধু আমাকে খুব ভালবাসতেন”। “আমি ঐ বাড়ি গিয়ে নিজে গাছের আম, ছোলম লেবু পাইড়ে খাইছি”। আমি ভালো খাতাম বলে বঙ্গবন্ধু আমাকে খেতে বসেই ডাক দিতেন, আর আমাকে পাশে বসিয়ে খাওয়াতেন। ভাবীর হাতে বড়ো বড়ো কই, সরপুটি ,পাবদা, গরু, খাসিসহ কত কিছু খাইছি। একবার বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে পুকুর পাড়ে আমি আর উনি বসে আছি। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা তখন ছোট, ও পুকুরে গোসল করছিলো। আমি বঙ্গবন্ধুকে বললাম “তেলো টাকির পোনা না, ভাইতো টাকির পোনা না, এ হলো রেনুর পোনা” ভাবীর নাম ছিলো রেনু তাই আমি হাস্যরস করে হাসিনাকে ডাকতাম রেনুর পোনা বলে, এসব কথা শুনে সবাই খুব হাসাহাসি করতো।” বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ আবু নাসেরের এক পা খোড়া ছিল, আমি তাকে ডাকতাম “তৈমুর লং” বলে। টুঙ্গিপাড়ার বাড়িতে গেলে বলতাম তৈমুর লং কেমন আছো, সে আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরতো, আর বলতো ভাই কেমন আছেন। তারপর আমাকে নিয়ে খাওয়াতো।
একবার নড়াইলের ডাকবাংলায় বঙ্গবন্ধুর মিটিং শেষে অন্যরা চলে গেলেও আমি খাওয়ার জন্য বসে ছিলাম, বঙ্গবন্ধু এসে বললেন, “সাত্তারকে ডিসে ভাত দেও” তখন ওনার পাশে বসে খেয়েছি। ১৯৭৩ সালে খুলনায় সার্কিট হাউজ মাঠে জনসভা শেষে নড়াইলের অন্য নেতারা চলে এসেছে। আমি আর কালিয়ার কালাম উকিল বসে আছি, আমাদের খেতে ডাকলেন বঙ্গবন্ধু। সেদিন খেয়ে আমি ফাস্ট হয়েছিলাম। মনে আছে, সেই সময় আমার খাওয়া ভিডিও করা হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর সাথে কিভাবে পরিচয় ঘটে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন জনসভায় আমি যেতাম এবং সবার আগে গিয়ে সামনে বসতাম। কিন্তু আমার এতো বড়ো দেহের কারনে পিছনের অনেকেরই সমস্যা হতো, তারা চেঁচামেচিও করতো। একদিন বঙ্গবন্ধু দেখলেন যেখানেই যাই সেখানেই এই লোকটি সামনের সারিতে বসে। তখন এক মিটিং-এ (কোন জনসভা তা বলতে পারেননি) তিনি আমাকে কাছে নিয়ে আমার খোঁজ-খবর নেন, এভাবেই তাঁর সাথে পরিচয় ঘটে।
১৯৫৬ সালের দিকে নড়াইলে জনসভা করতে পারেননি বঙ্গবন্ধু। পরে তৎকালীন কমিউনিষ্ট পার্টির নেতা নড়াইল সদরের মোদাচ্ছের মুন্সি, নূরজালালদের সহায়তায় শহরের অদুরে নয়নপুর প্রাইমারী স্কুল মাঠে সভা করেছিলেন। এ সভাতে আমি ছিলাম। ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুসহ অনেকের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হলে তিনি স্থানীয় নেতাদের কাছে খবর পাঠালেন মামলা পরিচালনার জন্য অর্থের প্রয়োজন, সেজন্য চাঁদা তুলে পাঠাতে। বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশ পেয়ে আমি ৩ মাসে এক টাকা, দুই টাকা করে ১হাজার ৩শত ৭০ টাকা তুলে তা গোপনে বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দিয়ে আসি। বঙ্গবন্ধু তখন আমার পিঠ চাপড়ে দিয়ে প্রশংসা করে বলেছিলেন,“নড়াইলের সব নেতাদের চেয়ে আমার সাত্তার অনেক কষ্ট করে বেশী টাকা তুলেছে” আমি এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশী টাকা চাঁদা তুলেছিলাম।
৭৫-এর ১৫ আগস্ট এর স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু পাগল এই নেতা কয়েকবার কেঁদে ফেলেন। এ সময় বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট সকালে বাঁশগ্রাম বাজারে এসে জানতে পারি বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। খবর শুনেই তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। এরপর থেকে দীর্ঘ ৩৪ বছর পর্যন্ত স্যান্ডেল, গেঞ্জি এবং ছাতা মাথায় দেইনি। পায়ের তালু ফেটে গিয়েছে, প্রচন্ড শীতে কাথা গায়ে বের হয়েছি, তবু চাদর পরি নি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার এই শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা দেখে অনেকে বাহবা দিয়েছে আবার টিটকারিও মেরেছে। ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধুর ৫ খুনীর ফাসি কার্যকরের খবর শুনে ওই দিন থেকে আবার স্যান্ডেল, চাদর এবং ছাতা ব্যবহার শুরু করি।
৬৯ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু নড়াইলে এসেছিলেন। আমি ২ বছরের ছেলেকে নিয়ে আসলে বঙ্গবন্ধু বললেন, “সাত্তার তোমার কোলে ও কে? তখন উত্তরে বললাম আমার ছেলে। বঙ্গবন্ধু তাকে কোলে নিয়ে আদর করলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন ওর নাম কি? জান্নাতুল নাম শুনে বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞেস করলেন “তোমার স্ত্রীর নাম কি? স্ত্রীর নাম মমতাজ শুনে বঙ্গবন্ধু বললেন, সম্রাট শাজাহানের স্ত্রী মমতাজের ছেলের নাম সুজা, তাই ওর নাম রাখলাম সুজা। একথা বলে ছেলের হাতে একশ টাকা উপহার দিয়েছিলেন। এরপর তার প্রথম সন্তানের নাম রাখা হলো সুজা।
১৯২৬ সালে তৎকালীন নড়াইল সদর থানার রামসিদ্ধি গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। বাবা নোয়াই মোল্যা ছিলেন স্থানীয় ভূ-স্বামী প্রভাবশালী মাতব্বর এবং ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনের নেতা। ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি লম্বা সাত্তার মোল্যা বাড়ির পার্শ্বে বাশগ্রাম-বিষ্ণুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় বিভাগে প্রবেশিকা পাশ করেন। প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান হলেও তিনি ছোটবেলা থেকেই সহজ-সরল এবং সততা নিয়ে চলেছেন। নীতির প্রশ্নে ছিলেন অটল এবং প্রতিবাদি। এসএসসি পাশ করে খুলনা বিএল কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হলেও এক রাজনৈতিক কারণে বিএল কলেজে মারামারির কারণে তিনি কলেজ ছেড়ে দেন। পরে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আইএসসি পরীক্ষা দেন। কালিয়ায় খাসিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের চাকরি করাকালীন সময়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তিকে মারধরের কারনে সেখান থেকে চাকরি ছেড়ে দেন। একবার নড়াইল-১ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি প্রয়াত ধীরেন্দ্রনাথ সাহার সাথে রাজনৈতিক বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। বিভিন্ন সময় নেতাদের মুখের ওপর উচিত কথা বলতে পিছপা হননি। তার এই প্রতিবাদী চরিত্রের কারণে বিভিন্ন সময় নেতাদের বিরাগভাজন হয়েছেন। তিনি কখনও পদ, পদবি এবং জনপ্রতিনিধি হবার ইচ্ছা পোষণ করেননি।
রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ শোনার পর ঢাকা থেকে ফিরে এসে নড়াইলে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার কাজে ঝাপিয়ে পড়েন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে পাকিস্থানী বাহিনী ও স্থানীয় রাজাকাররা তার বাঁশগ্রাম-বিষ্ণুপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে প্রথম আক্রমন করে তার বাড়িতে। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাড়িতে প্রবেশ করে মুহুর্মুহু গুলি ছোড়ে তারা। এ সময় সাত্তারের খাটে ঘুমিয়ে থাকা ছোটভাই গোলাম সরোয়ার গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এবং বড়ভাই জাফর আহম্মেদ বেয়োনোটের আঘাতে গুরুতর আহত হন। পরে তারা বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। তিনি যুদ্ধকালীন সময়ে বাশগ্রাম হাইস্কুল,পিরোলী আবার টাবরা ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন। এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ মানুষের ভরসার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন সাত্তার মোল্যা ও তার পরিবার। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে একবার পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। তাকে হাত পা বেঁধে ঝোলানো হয় বাশগ্রামের বাজারের কাছে একটি গাছে। স্থানীয় সাধারন মানুষ তাকে না মেরে ফেলার জন্য পাক বাহিনীর কমান্ডারের কাছে অনুরোধ করেন, কিন্তু পাক সেনা কমান্ডার তাকে বলে, পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলতে হবে এবং ওকে আমাদের হয়ে কাজ করতে হবে, তাহলে ছাড়া পাবে। বন্দী অবস্থায়ও সাত্তার মোল্যা বলেছিলেন “আমার নেতা শেখ মুজিবকে তোমরা বন্দী করেছো, তিনি কেমন আছেন জানিনা, আর তোমাদের হয়ে কাজ করতে বলছো,এর চেয়ে আমাকে মেরে ফেল” পরে স্থানীয়দের অনুরোধে তাকে ছেড়ে পাক বাহিনী। যুদ্ধ শেষের আগ মুহুর্তে ভাইয়ের খুনী রাজাকার সদরের মীরাপাড়া গ্রামের আজিজ ওরফে আদাড়েকে হত্যা করে ভাইয়ের কবরের পাশে রেখে আসেন।
প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলু বলেন, বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ বলতে বেদুইন সাত্তার পাগল। তার মতো এরকম নিবেদিত প্রাণ মানুষ আমি দেখিনি। আমি দেখেছি তিনি পায়ে হেটে হোক বা অন্য কোনো বাহনে হোক নড়াইলে আওয়ামী লীগের যেকোনো অনুষ্ঠানে তিনি আসতেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তিনি দীর্ঘ বছর পায়ে স্যান্ডেল পরেননি। তার মতো ত্যাগি নেতার যেটুকু মূল্যায়ন হবার কথা ছিল তা হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিষ্ণুপুর গ্রামের ৮৫ বছরের মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক মোল্যা বলেন,সাত্তার ভাই-এর হাত ধরেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসা। বুঝতে শিখে উনার কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু এবং টুঙ্গিপাড়ার অনেক গল্প শুনেছি। শুনেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাকে বেদুঈন চাচা বলে ডাকতেন।
অত্যন্ত সহজ-সরল, নির্লোভ এবং সৎ ব্যক্তিত্বের অধিকারী বঙ্গবন্ধুর এই ঘনিষ্ঠজনের খোঁজ তেমন কেউ রাখেননা। এখন তার দিন কাটে বাড়িতেই। বর্ষিয়ান এই রাজনীতিকের সাথে কথা বলার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কয়েকবার কেঁদে ফেলেন। তিনি এক প্রতিক্রয়ায় বলেন,দেশ স্বাধীনের পর ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার হিসেবে বঙ্গবন্ধু আমাকে ৫হাজার টাকার একটি চেক প্রদান করেন। যুদ্ধ করেছি দেশের জন্য, আমার আপন ও মামাতো ভাই প্রাণ দিয়েছে। এক ভাই আহত হয়। দেশ স্বাধীন হয়েছে, এর চেয়ে আর বড়ো পাওয়া কি হতে পারে।
তার সেজো ছেলে সিরাজুল ইসলাম হীরক বর্তমানে কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও চাঁচুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, তার বাবা বঙ্গবন্ধু এবং তার আদর্শকে ভালোবেসে রাজনীতি করেছেন। তিনি পদ, পদবির জন্য রাজনীতি করেননি, তিনি মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটও নেননি। তবে জীবনের শেষ সময়ে আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ভাতার জন্য আবেদন করেছেন, সেটা যেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবেচনা করেন।
নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, নড়াইলে যোগদানের পর প্রবীন এই নেতার কথা শুনেছি। আমাদের জন্য সৌভাগ্য যে এ ধরনের শ্রদ্ধাভাজন একজন মানুষ বেঁচে রয়েছেন। ইচ্ছা রয়েছে খুব শীঘ্রই বঙ্গবন্ধুর এই ঘনিষ্টজনের বাড়িতে তার সাথে দেখা করতে যাব।