শামীমূল ইসলাম
তীব্র শ্বা/সকষ্টের রো/গীদের অবস্থার অব/নতি হলে, নিজে শ্বাস নেওয়ার শক্তি না থাকলে, জ্ঞান হারালে-এমন মর/ণাপন্ন রোগীদের শ্বা/স-প্রশ্বা/স চালিয়ে নিতে প্রয়োজন হয় ভেন্টিলেটর যন্ত্র। জীবন বাঁচাতে অতি জরুরি সেই ভেন্টিলেটর যন্ত্র নড়াইল সদর হাসপাতালে কয়েক মাস ধরে বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে থাকলেও তা চালু হচ্ছে না। ভেন্টিলেটর সিস্টেম চালু না থাকায় তীব্র শ্বাসকষ্টের রোগীদের পাঠাতে হচ্ছে খুলনা বা ঢাকায়। অনেকের পথেই মৃত্যু হচ্ছে। এদিকে হাসপাতালে করোনা রোগির চাপ বেড়ে যাওয়ায় গতকাল রোববার (৪জুলাই) নড়াইল সদর হাসপাতালে করোনার ৬০ শয্যা থেকে বাড়িয়ে ১শ শয্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে আলাদাভাবে মহিলাদের ৪০ শয্যা এবং পুরুষদের জন্য ৬০ শয্যা করা হয়েছে। বর্তমানে সদর হাসপাতালে ৫৭জন রোগি করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্যদিকে নড়াইল সদর হাসপাতাল করোনা ইউনিটে প্রত্যেক রোগীর স্বজনদের ভীড় বাড়ছে। শয্যার পাশে কেউ বসা, কেউবা দাঁড়ানো। কেউ রোগী দেখতে এসেছেন, আবার কেউ রোগীর সঙ্গে থাকেন। ওয়ার্ডের বারান্দায়ও মানুষের ভিড়। ফলে হাসপাতাল থেকেই করোনা সংক্রমণ এবং পরে সামাজিক সংক্রমনের ঝুঁকি বাড়ছে।
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ১৩ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি) ২টি ভেন্টিলেটর যন্ত্র সদর হাসপাতালে স্থাপনের জন্য পাঠায় এবং গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে দেওয়া হয় আরও ২টি ভেন্টিলেটর। কিন্তু দুটি রাখা হয়েছে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় অফিস কক্ষের বারান্দায়, অন্য দুুটি একতলা ভবনের করোনা ওয়ার্ডের মধ্যে।
ভেন্টিলেটর চালু করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আব্দুস শাকুর এ প্রতিনিধিকে জানান, গত দু’মাস পূর্বে ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) দেওয়া ২টি ভেন্টিলেটর ইন্সটল করতে আসলেও ম্যাকানিক্যাল সমস্যার কারনে তারা সফলভাবে সেট করতে পারেননি। ভেন্টিলেটর দুটি সেট করার জন্য সিএমএসডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। তারা বলেছেন খুব শীঘ্রই আসবেন। বাকি ২টি ভেন্টিলেটর কোন সোর্স থেকে এসেছে, এটি কোন কোম্পানির তার কাগজপত্র সিভিল সার্জ/ন এখনও দিতে পারেননি। এছাড়া যারা ভেন্টিলেটর চালাবে তাদের ট্রেনিং দিতে হবে। গত ১১-১৩ জুন হাসপাতালের এক নার্সকে একটি ভার্চয়াল ট্রেনিং হলেও তা নার্স ভালো বুঝতে পারেননি। সরাসরি স্পটে এসে টেকনিশানদের বুঝিয়ে দিতে হবে।
এদিকে জেলা সিভিল সার্জ/ন ডা. নাছিমা আকতার এ প্রতিনিধিকে বলেন, গত ২ মাস পূর্বে আলিবাবা নামে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান অনুদান হিসেবে সিভিল সা/র্জন অফিসকে ২টি ভেন্টিলেটর দিয়েছেন। আমাদেও ব্যবহারের সুযোগ না থাকায় তা সদর হাসপাতালকে দিয়েছি। তবে এটি কোন কোম্পানির তা আমরা খুলে দেখিনি। এটি খললেইতো বোঝা যাবে কোন কোম্পানির। ভেন্টিলেটর গ্রহনের সময় রিসিপ্ট কপির কিছু কাগজ সদও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভেন্টিলেটর চালুর ব্যাপারে সবকিছুই করতে পারতেন বলে তিনি মনে করেন।
নড়াইলের উন্নয়ন কর্মী কাজী হাফিজুর রহমান বলেন, দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে ৪টি ভেন্টিলেটর চালু না হওয়ায় তিনি সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাবকে দায়ি করেন। এটি চালু হলে কমপক্ষে একজন রোগিকেও বাঁচানো যেত বলে তিনি মনে করেন।
সদর হাসপাতালের আরএমও এ.এফ.এম মশিউর রহমান করোনা ওয়ার্ডে স্বজনদের ভীড়ের ব্যাপারে বলেন, সমস্যা আছে, চেষ্টা করা হচ্ছে সর্বোচ্চ। দুজন আনসার সদস্য করোনা ওয়ার্ডে ডিউটি করছেন। কিছু কিছু রোগী আছেন একা চলতে পারেন না। তাঁদের সঙ্গে একজন থাকতে হয়। এছাড়া তাদেরতো বাইরে যাওয়ার কথা নয়।
নড়াইল জেলা করোনা সংক্রমণের হারে দেশের মধ্যে অন্যতম। গত জুন মাস থেকে নড়াইলে নমুনা সংগ্রহের বিচারে সংক্রমণের হার গড়ে প্রায় ৫০ শতাংশ। গত ১৫ দিনে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় মা/রা গিয়েছেন ৫০জন। এ ছাড়া উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন অনেক মানুষ।