মীর আব্দুল গণি, জার্মানি প্রবাসী
শিক্ষকতা পেশা গ্রহণকারীর বাস্তব অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে আলোচনা করলেই প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অনুধাবন করা সহজ হয়।
কারণ বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো ব্যক্তি যখন শিক্ষকতা পেশা গ্রহণ করেন তখন তিনি শিক্ষাদান প্রক্রিয়া (মানুষ গড়ার সকল জটিল কলা-কৌশল) যথাযথ জানেন এমন নিশ্চয়তা দান (করে কি?) করে না।
উক্ত রূপ বাস্তবতার কারণেই শিক্ষককে যথাযথ যোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনিবার্যরূপে দেখা দেয়। যার কোনোই বিকল্প নেই। বার্ট্রান্ড রাসেল তাঁর আধুনিক শিক্ষাতত্ত্বে শিক্ষক প্রশিক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য উল্লেখ করেছেন- “নতুন প্রণালি উদ্ভাবন করিতে প্রতিভার প্রয়োজন হইয়াছে কিন্তু সাধারণ শিক্ষকগণই ইহার প্রয়োগ করিতে পারেন। ইহার জন্য প্রয়োজন সহানুভূতি, ধৈর্য এবং শিক্ষাদানের জন্য যথোপযুক্ত ট্রেনিং।” (বার্ট্রান্ড রাসেল রচনা সমগ্র, পৃষ্ঠা ১১৭, অনুবাদ আতা-ই-রাব্বি)
জার্মানি ও সকল উন্নত দেশে শিক্ষককে নিয়মিত ও যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে মানুষ গড়ার দক্ষ কারিগরে পরিণত করে থাকে। উন্নত দেশে দেখা যায় যারা শিক্ষকতা পেশা গ্রহণে ইচ্ছুক অধ্যয়নের একটা পর্যায় হতে শিক্ষকতা বিষয়ের উপর তাদের অধ্যয়ন করতে হয় এবং কর্মরত অবস্থায় প্রক্রিয়াগত কোনো পরিবর্তন ঘটলে নতুন প্রক্রিয়ার উপরও তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
উপরিউক্ত আলোচনায় শিক্ষকের ব্যক্তি বৈশিষ্ট্য, তাঁর যোগ্যতা, প্রশিক্ষণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে। এ পর্যায়ে আমাদের আলোচনাসমূহের সার্বিক সিদ্ধান্তসমূহ উল্লেখ করা একান্ত প্রয়োজন।
কারণ- আলোচনার মূল লক্ষ্যই হলো আলোচ্য বিষয়ের সার্বিক দিক তুলে ধরে সমাধানের যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। এবং যার মূল অভিপ্রায়ই হলো- আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করে প্রচলিত শিক্ষাদানব্যবস্থা ঠিক কি না যাচাই করার লক্ষ্যে শিক্ষার উপাদানসমূহ এবং শিক্ষাদান ব্যবস্থার প্রক্রিয়াগত সার্বিক দিক আলোচনা করে যৌক্তিক ব্যাখ্যাসহ সিদ্ধান্তসমূহ যথাযথ উপস্থাপন করা। উদ্দেশ্য প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় কোনোরূপ অপূর্ণতা থাকলে তা চিহ্নিত করে সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সমাধাণ গ্রহণের উদ্দেশ্যে কয়েকটি সিদ্ধান্ত পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করব যাতে অপূর্ণতা বুঝতে ও সমাধানের প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে সহজ হয়।
সিদ্ধান্তসমূহ: যেমন- ১। বোধ-চেতনা হলো সত্তার সুপ্ত বা ঘুমন্ত আচরণ সক্ষমতা। সত্তায় বোধ-চেতনার উন্মেষ সাধন করতে হয় এবং উন্মেষ সাধনের উপায় হলো প্রক্রিয়াজাত শিক্ষাদান ব্যবস্থা।
২। ক্রিয়া বা কর্ম হলো সত্তার বোধ-চেতনা উৎসারিত আচরণ। ক্রিয়া বা কর্ম-মান হলো কর্মসম্পাদনের শর্তানুসরণ বা কর্মাচরণ নিয়ন্ত্রণ উপলব্ধি। ৩। ব্যক্তিকে কাঙ্খিত আচরণশীল করতে হলে- পরিবারে বোধ-চেতনা উন্মেষের সুযোগ না দিয়ে একটি বিশেষ বয়সে প্রক্রিয়াজাত শিক্ষার আওতাভুক্ত করতে হয়।
৪। বিচরণ ক্ষেত্রে সত্তার অস্তিত্বের নিশ্চয়তা বিধানের সকল বিষয়সমূহে এবং সমষ্টিতে মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন আচরণ গঠনের শিক্ষা বাধ্যতামূলক হতে হয়। ৫। শিক্ষাদানে যথাযথ প্রশিক্ষিত শিক্ষক প্রয়োজন এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণে অবশ্যই যথাযথ গুরুত্ব দিতে হয়।
উল্লিখিত সিদ্ধান্তসমূহ শিক্ষার কাঙ্খিত মান-অর্জনে আমাদের আলোচ্য প্রক্রিয়াগত -ভাবেই প্রাপ্ত। ফলে-আমাদের আলোচনায় প্রাপ্ত সিদ্ধান্তসমূহ দ্বারা কোন জাতীয় শিক্ষাদান ব্যবস্থা বা প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা আদর্শ বা যথাযত কিনা সহজেই যাচাই করে যথার্থতা বা অপূর্ণতা নির্ণয় করা সম্ভব। অতএব- বাংলাদেশের বর্তমান প্রচলিত বা গৃহীত শিক্ষাদান ব্যবস্থা উপরিউক্ত সিদ্ধান্তসমূহে উপনীত হতে প্রক্রিয়াগতভাবে সক্ষম বা যথাযথ কি না তা বিশ্লেষণ করে দেখলে সহজেই তার যথার্থতা বা অপূর্ণতা দৃষ্টিগোচর হবে। (চলবে) পূর্বলেখা-
উন্নত দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বিশেষ লক্ষণীয়; শিক্ষকের ব্যক্তি বৈশিষ্ট্য ও তার যোগ্যতার গুরুত্ব