ডেস্ক রিপোর্ট
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ এই কন্যা শেখ রেহানার জন্মদিন আজ। ১৯৫৫ সালের এই দিনে তিনি জন্ম গ্রহন করেন। জন্মদিনে অনেকেই তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণও করছেন অনেকে।
আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত শেখ রেহানার একটি পুরনো সাক্ষাৎকার শেয়ার করা হয়েছে। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘১৫ আগস্ট আমি মরে গেলেই ভালো হত। বাবা নেই, মা নেই, ভাই নেই। আমার আর বাঁচতে ইচ্ছা করে না। আমি কী নিয়ে বাঁচব? কী আছে আমার? রাসেল কী অপরাধ করেছিল? ও তো রাজনীতি করত না। আমার মা তো রাজনীতি করত না। কেন ওরা তাদের হত্যা করল? … খোদা তায়ালার কাছে বলছি, আমার মতো যেন কাউকে তিনি শাস্তি না দেন। আমি এতিম বড় অসহায়। আমি মেয়ে হিসেবে বাঙালি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার চাই।’
তার সেদিনের এই হাহাকারে কেঁপে উঠেছিল অনেকের বুক। কিন্তু শোষকগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছায়নি এই হাহাকার। ১৫ আগস্টে ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাকান্ড নিয়ে কোন আলোচনাই করতে দেয়নি তারা।
বঙ্গবন্ধু হত্যায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাত থাকার কথা এ সময় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন তিনি। শেখ রেহানা বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাত তো অবশ্যই আছে, এদেশীয় এজেন্টরাও ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। কথায় আছে ঘরের শত্রু বিভীষণ, ঘটনাটা ঠিক সেরকম। বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার বিচারের দাবিতে এ দেশের নেতৃবৃন্দের যে উল্লেযোগ্য ভূমিকা থাকা দরকার ছিল, সে ব্যাপারে অনেকেই পিছিয়ে রয়েছেন। এমন অভিযোগ প্রচুর।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ওই হত্যাকান্ডের কিছুদিন আগে জার্মানিতে বেড়াতে যান দুই বোন। বড় বোন শেখ হাসিনার স্বামী ড. এম ওয়াজেদ মিয়ার কর্মস্থল ছিল জার্মানি। হত্যাকান্ডের রাতে দুই বোন ছিলেন বেলজিয়ামে। নৃশংস সেই হত্যাকান্ডের পর পরিস্থিতি বদলে যায় দ্রুত। সেখান থেকে জার্মানি হয়ে ভারতে আসেন তারা। পরে লন্ডনে গিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন শেখ রেহানা। সরাসরি রাজনীতিতে দেখা যায়নি শেখ রেহানাকে। তবে সর্বদা পরামর্শক হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে ছিলেন তিনি।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা প্রসঙ্গে হাসিনা এ ডটারস টেল চলচ্চিত্রে শেখ রেহানা বলেছিলেন, ‘আপার গাড়িটা (সুধা সদনে) এলো, এসে দাঁড়ালো। আমি সেখানে দাঁড়ানো। দেখলাম, আপার সমস্ত শরীরে, শাড়িতে, মুখেচোখে রক্ত ভরা। আমি আস্তে আমার আঁচলটা দিয়ে আপার এগুলো মুছে আপাকে ধরে ভেতরে আনলাম। … তখন জিজ্ঞাসাও করি নাই কী হচ্ছে বা কী হলো- আপাকে পেয়ে আমি ব্যাস, আর কিছু. .’
এরপর কেটে গেছে আরও ১৭ বছর। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের শাস্তি হয়েছে, শাস্তি পেয়েছে দেশের ও সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার চালানো যুদ্ধাপরাধীরা। কিন্তু এখনও ১৫ আগস্টে ক্ষত রয়ে গেছে হৃদয়ে। গোপালগঞ্জের এই মেয়েটি ১৯৮৩ সালে দেয়া সাক্ষাৎকারে করা আক্ষেপগুলো আজও রয়ে গেছে। ‘কী দোষ ছিল রাসেলের? কেন হত্যা করা হলো তাকে?’
শেখ রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক। বর্তমানে বিইউবিটি-তে অধ্যাপনা করছেন। বড় ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ট্রাস্টি। বড় মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের লেবার পার্টি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। আর ছোট মেয়ে আজমিরা সিদ্দিক রূপন্তী লন্ডনে গ্লোবাল রিস্ক অ্যানালাইজার হিসেবে কাজ করছেন। (সূত্রঃ বাসস)